সহমর্মিতায় আলোকিত উৎসব
ধুনিকতা এবং থিমের মিশেলে সেজে উঠছে বারাসত-মধ্যমগ্রামের পুজোমণ্ডপগুলি। ক’দিন পরেই আলোর উৎসবে মেতে উঠবে সবাই। জোরকদমে চলছে তারই প্রস্তুতি।
ত্রিকূট পাহাড়ের উপর কলিঙ্গ মন্দিরের দেখা মিলবে শতদল সঙ্ঘের মাঠে। কৃত্রিম ওই পাহাড়ের উপর থাকবে ৯টি ছোট ও একটি বড় মন্দির। থাকছে দু’টি ঝরনা। বিশাল দু’টি গেট পেরিয়ে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু ওই পাহাড়ের উপর উঠে প্রতিমাদর্শন করতে হবে। পুজো কমিটির তরফে এক হাজার অনাথ শিশুকে বস্ত্রদান ও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বারাসত স্টেশন সংলগ্ন পাইওনিয়ার অ্যাথলেটিক ক্লাবের কালীপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজোর আগেই। পাইওনিয়ার জলাশয়ের উপর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে পঞ্জাবের স্বর্ণমন্দিরের আদলে। ৫৪ ফুট দীর্ঘ সেতু পেরিয়ে ওই মণ্ডপে ঢুকতে হবে।
প্লাই-প্যারিস-ফাইবার দিয়ে গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে বারাসতের কেএনসি রেজিমেন্টের পুজো। ৭০ ফুট উঁচু ওই মন্দিরে থাকছে ৪০টি চূড়া, যার প্রতিটির মাথায় থাকবে সিংহ। থাকছে একশোটিরও বেশি স্তম্ভ। মণ্ডপের গায়ে থাকবে শিবের বিভিন্ন রূপের চিত্র। থাকছে চন্দননগরের আলো। পুজোয় এক হাজার বস্ত্র বিতরণ ও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে।
মুম্বইয়ের সিদ্ধিনাথ মন্দিরের আদলে বাঁশ-প্লাই-প্যারিস দিয়ে ৭০ ফুট উঁচু ও ৫৬ ফুট চওড়া মণ্ডপ তৈরি করছে রেজিমেন্ট। প্রতিমা এখানে সাবেক। থাকছে চন্দননগরের আলোর কারুকার্য। বস্ত্রদান, কম্বলদান ও খিচুড়ি ভোজনের ব্যবস্থাও থাকছে।
বারাসতের সন্ধানী-র থিম মায়ের অস্ত্রভাণ্ডার। প্লাই-রং-প্যারিস-ফয়েল পেপারে তৈরি মণ্ডপের সামনে থাকছে ১৬ ফুট উঁচু শিবলিঙ্গ। এখানে কালীর উগ্রমূর্তি। দু’টি বড় গেট পেরিয়ে অস্ত্রভাণ্ডারে ঢুকলে চোখে পড়বে ত্রিশূল, খাঁড়া, রাম দা, কুঠার, তির-ধনুকের মতো নানা অস্ত্র। আলোকসজ্জা চন্দননগরের।
প্যারিস ও ধানের তুস দিয়ে নেপালের গণেশ মন্দিরের আদলে ৮৫ ফুট উঁচু ও ৬০ ফুট চওড়া মণ্ডপ গড়ছে নবপল্লি সর্বজনীন। প্রতিমা সাবেক। রাস্তার দু’ধারে থাকছে নানারকম আলোকসজ্জা। থাকছে বস্ত্রদানের বাবস্থাও।
নবপল্লি ব্যায়াম সমিতিতে দেখা মিলবে দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে তৈরি ছোট-বড় মোট ১৬টি মন্দিরের। মূল মণ্ডপটি ৭০ ফুট উঁচু ও ৯০ ফুট চওড়া। মন্দিরগুলি তৈরি হয়েছে প্লাই ও আইসক্রিমের কাঠি দিয়ে। মণ্ডপের সামনের পুকুরপাড়টি তৈরি হয়েছে হরিদ্বারের গঙ্গার পাড়ের আদলে। জলের উপর জ্বলবে একটি বড় প্রদীপ। এখানে প্রতিমা ১২ হাত উঁচু। পুজোয় বস্ত্র বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ব্যায়াম প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও থাকবে।
সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে কৈলাসনগর মৈত্রী সঙ্ঘের থিম আর্ট গ্যালারি। দেবীর ৫১ পীঠের রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। মণ্ডপ জুড়ে থাকবে লাল আলোর কারুকার্য।
রাক্ষসবধের পর দেবী শান্তিস্থাপন করছেন, এই ছবিই ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে তরুছায়া পুজো কমিটিতে। থাকছে নানা ধরনের আলোকসজ্জা। কমিটির তরফে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
জাপানের বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে বেত-বাঁশ দিয়ে মণ্ডপ গড়ছে বারাসতের বিদ্রোহী পুজো কমিটি। প্রতিমা সাবেক। এ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য হরিহরপুর ইউনাইটেড ক্লাব, শক্তিমন্দির, বামনমুড় ইয়ংস্টার অ্যাসোসিয়েশন, সাম্যসঙ্ঘ, সাউথ ভাঁটরা, স্টুডেন্টস গ্রুপ, ছাত্রদল, ইউনাইটেড ক্লাবের মতো কিছু পুজো।
মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে চণ্ডীগড় অ্যাথলেটিক ক্লাবের মণ্ডপ। ডাকের সাজের প্রতিমার সঙ্গে থাকছে শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদাদেবীর মূর্তি। থাকছে এলইডি আলো।
রবীন্দ্রপল্লি অ্যাথলেটিক ক্লাবে ঢুকলে মনে হবে যেন দাঁড়িয়ে আছেন তারাপীঠে। ছোট ছোট মন্দিরের পাশাপাশি একটি নাটমন্দির-সহ থাকছে মূল মন্দিরটি। থাকবে তারাপীঠের মূল মন্দিরের পাশে থাকা শ্মশানটিও। মূল আকর্ষণ ১২ মিনিটের একটি লাইভ শো, যাতে মডেল-আলো-শব্দের মাধ্যমে ফুটে উঠবে বামাখ্যাপার তারা মা দর্শনের মুহূর্তটি।
কাগজের ব্যাগ, ঠোঙা, মাদুর, ঝুড়ি দিয়ে ৪০ ফুট উঁচু মন্দিরের আদলে হচ্ছে ইয়ং সেন্টার পুজো কমিটির মণ্ডপ। থিম: পরিবেশ রক্ষার্থে প্লাস্টিক বর্জন। মণ্ডপের ভিতরে কাগজের ব্যাগ, ঠোঙা, ঝুড়ির মধ্যে থাকবে আলো।
বাদু রোডের ধারে শ্রীনগরের আমরা ক’জন ক্লাবের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে পাহাড়ের আদলে। ২৮ ফুট উঁচু পাহাড়ের ঢালে রাস্তা দিয়ে উঠে ঢুকতে হবে বাঁশ-চট-প্যারিস-কাপড়-শোলায় তৈরি মন্দিরে। থাকছে এলইডি আলোর ব্যবস্থা। শ্রীনগর ২ নম্বর অধিবাসীবৃন্দের পুজোর থিম হারিয়ে যাওয়া শৈশব। মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত এই পুজোয় মণ্ডপ ঘুড়ি, লাটাই, দাবা, লুডো, লাট্টু, কাচের গুলি দিয়ে তৈরি।
৫১তম বর্ষে রবীন্দ্রপল্লি নেতাজি সঙ্ঘের থিম টাইটানিক। পুকুরের কিছু অংশে থাকছে ফাইবার-লোহা-টিনের তৈরি জাহাজ। মাথার উপরে কৃত্রিম হেলিকপ্টার। মডেলের মাধ্যমে দেখানো হবে টাইটানিক সিনেমার বিভিন্ন দৃশ্য। মণ্ডপে থাকবে প্রতিমার পাঁচটি রূপ।
বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে মন্দিরের আদলে তৈরি ইয়ং অ্যাসোসিয়েশনের মণ্ডপে থাকছে বেতের কারুকার্য। প্রতিমা সাবেক। থাকছে বস্ত্র বিতরণের ব্যবস্থাও। সুভাষপল্লি অধিবাসীবৃন্দের থিম দার্জিলিং। মণ্ডপে থাকবে কৃত্রিম টয়ট্রেন, চা বাগান, রোপওয়ে, পাহাড়। দার্জিলিং থেকে আনা হচ্ছে চা গাছ। প্রতিমা সাবেক।
এ ছাড়া, সুভাষপল্লির ইয়ংমেন অ্যাসোসিয়েশন, ইয়ংস্টার, কিশোর স্পোর্টিং ক্লাব, অগ্রগামী সঙ্ঘ, দেবীগর সাংস্কৃতিক সঙ্ঘ, সাহারা অধিবাসীবৃন্দ, তরুণ সঙ্ঘ, মেঘদূত শক্তি সঙ্ঘ, আপনজন, মাইকেলনগর নেতাজি সঙ্ঘ, গঙ্গানগর একত্র সঙ্ঘ, অগ্রদূতের মতো পুজোও এ বার বিষয় ও বৈচিত্রে নজর কাড়বে বলে আশা উদ্যোক্তাদের।

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.