ডানলপের সাহাগঞ্জ কারখানার দরজা খোলার কথা ঘোষণা করলেন পবন রুইয়া। কিন্তু বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সরকারি অনুমোদন না-পাওয়া পর্যন্ত কারখানা পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তিনি। একই সঙ্গে রুইয়ার ঘোষণা, নতুন করে সাহাগঞ্জ কারখানা চালু করার ক্ষেত্রে এটিই হবে তাঁদের শেষ চেষ্টা। কারখানা পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্মী বিক্ষোভ বা অন্য কোনও কারণে তা রূপায়িত না-হলে, কারখানার চাকা ঘোরাতে আর সচেষ্ট হবে না রুইয়া গোষ্ঠী।
তবে কি সাহাগঞ্জ থেকে পুরোপুরি হাত গুটিয়ে নেওয়ার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দিলেন রুইয়া গোষ্ঠীর কর্তা?
স্বাভাবিক ভাবেই এর স্পষ্ট উত্তর দেননি রুইয়া। তবে ধারণা করা হচ্ছে, কারখানাটির নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা অনুমোদন জোগাড়ের লক্ষ্যে তুরুপের তাস হিসেবেই এই কথা বলেছেন তিনি। সংস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অন্য কয়েক জনের বক্তব্য, ২০০৬ সালে ছাবরিয়াদের কাছ থেকে পবন রুইয়া ডানলপ হাতে নেওয়ার পর প্রায় সব সময়ই সাহাগঞ্জ কারখানাকে তাড়া করেছে কর্মী সমস্যা কিংবা লাল ফিতের ফাঁস। ফলে কোনও দিনই কারখানাটি সে ভাবে চালাতে পারেনি রুইয়া গোষ্ঠী।
সাহাগঞ্জ কারখানার সমস্যা মেটানোর পথ খুঁজতে শুক্রবার আলোচনায় বসে সংস্থার পরিচালন পর্ষদ। বৈঠক শেষে রুইয়া বলেন, “কারখানা চাঙা করতে একটি পরিকল্পনা করেছি। আমার বিশ্বাস, সেটি ভাল ফল দেবে। তবে এটিই আমাদের শেষ পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে কারখানা শেষ।”
তিনটি পর্যায়ে কারখানা খোলার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে শিল্পে ব্যবহৃত রবারের যন্ত্রাংশ তৈরির বিভাগে উৎপাদন শুরু করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে খোলা হবে ‘অফ দ্য রোড টায়ার’ ডিভিশন। যেখানে তৈরি হয় ট্রাক্টর জাতীয় গাড়ির চাকা। আর সব শেষে চালু করা হবে ট্রাক, বাসের টায়ার তৈরির বিভাগটি। এই তৃতীয় বিভাগটি খোলার জন্যই ‘ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট’ (নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্র) গড়তে অনুমোদন পাওয়ার শর্ত আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি,
বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু না-হলে, এই ডিভিশনটি (কারখানার সিংহ ভাগ পণ্য তৈরি হয় যেখানে)
লাভজনক ভাবে চালানো অসম্ভব।
শর্ত চাপিয়ে প্রথমে আংশিক ভাবে কারখানা চালুর এই ঘোষণায় শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর প্রতিক্রিয়া, “সরকার বলেছিল কারখানা চালু করুন। কিন্তু এ দিন ডানলপ কর্তৃপক্ষ আমাদের যে কাগজ পাঠিয়েছে, তাতে ‘পার্শিয়াল লিফটিং অফ সাসপেনশন অফ অপারেশন’ কথাটি লেখা রয়েছে। এর অর্থ বুঝতে পারছি না। তাদের দাবি, কারখানায় ফের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দিক রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। বিরাট অঙ্কের টাকা বকেয়া থাকার জন্য ওই বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। তা পুনরায় বহাল করলে তবেই কারখানা চালু হবে, এমন কোনও শর্ত কি তা হলে চাপিয়ে দিতে চাইছেন ডানলপ কর্তৃপক্ষ?” শ্রমমন্ত্রী জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী কলকাতায় ফিরলে তার পর ডানলপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার।
বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তেরও অভিযোগ, “দু’বছর আগেই ডানলপকে কিস্তিতে বকেয়া মেটানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিল বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ওরা বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। টাকাও মেটায়নি।” অবশ্য ডানলপ কর্তৃপক্ষের দাবি, “কারখানা বন্ধ থাকাকালীন আমরা বিদ্যুতের বিল মেটাইনি। এখন তা মিটিয়ে পুনরায় সংযোগের জন্য আবেদন জানাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত, বাম জমানার শেষের দিকেই সাহাগঞ্জে নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল রুইয়া গোষ্ঠী। নিয়ম অনুযায়ী ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলে, তার ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের গ্রিডে দিতে পারবে ডানলপ। ওই কেন্দ্রে ইউনিট-পিছু বিদ্যুৎ তৈরির খরচ কত, তা নির্ধারণ করবে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। ওই খরচের সঙ্গে আরও ১৭ শতাংশ বাড়তি দাম ধরে
তা গ্রিডে দিতে পারবে সংস্থা। মনে করা হচ্ছে এই প্রকল্প গড়তে পারলে প্রায় শূন্যে এসে
দাঁড়াবে কারখানায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের খরচ। একই সঙ্গে, আয়ের পাকা রাস্তাও তৈরি করে
ফেলতে পারবে সংস্থা।
এ দিন রুইয়া জানান, কারখানা চাঙা করার জন্য সবিস্তার সমীক্ষা করছেন তাঁরা। সেখানে খতিয়ে দেখা হবে প্রয়োজনীয় কর্মী সংখ্যা-সহ বিভিন্ন তথ্য। যা নিয়ে শীঘ্রই কর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান তিনি। |