নীতীশ কুমার হওয়ার চেষ্টাও করলেন না শিবু বা হেমন্ত সোরেনরা।
আজ রাঁচিতে ‘জনচেতনা যাত্রা’ উপলক্ষে লালকৃষ্ণ আডবাণীর সংক্ষিপ্ততম সফরেও এ রাজ্যের দুই প্রধান জোটশরিক বিজেপি ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার পারস্পরিক বিরোধের চোরাস্রোত কিছুটা ছাপ রেখে গেল। বিহারে আডবাণীর রথ-যাত্রার সময়ে তাঁর পাশে থেকে নিজেকে এনডিএ নেতা হিসেবে তুলে ধরার কাজে মনোযোগী হয়েছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। আজ এনডিএ শাসিত ঝাড়খণ্ডের রাজধানীতে আডবাণীর মঞ্চের ত্রিসীমানায় কিন্তু জোটসঙ্গীদের কাউকেই দেখা গেল না। জেএমএম-এর প্রধান নেতা ‘গুরুজী’ শিবু সোরেন, ঝাড়খণ্ডে এনডিএ ‘সমন্বয় কমিটি’-রও সভাপতি। শিবুপুত্র হেমন্ত উপ-মুখ্যমন্ত্রী। নয়া মন্ত্রিসভা গঠনের পরে হেমন্ত মুখ্যমন্ত্রী মুন্ডার সঙ্গে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে দেখাও করে এসেছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দু’দলের সম্পর্কের যে খানিকটা অবনতি ঘটেছে, এ দিন তার প্রমাণ মিলল। আডবাণীর রাঁচি-সফরের সময়ে হেমন্তকে ধারে-কাছে কোথাও দেখা গেল না। উল্টে সংবাদমাধ্যমকে হেমন্ত আজ বলেছেন, “আডবাণীর রথ-যাত্রা বিজেপি-র নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচি। আমাদের দলের এর সঙ্গে সম্পর্কই নেই।” আডবাণী রাঁচিতে ছিলেন মেরে-কেটে দু’ঘণ্টা। বিকেল তিনটের পরে পোর্টব্লেয়ারে বিমান নামতে দেওয়া হয় না বলে সাত-তাড়াতাড়ি তিনি মোরাবাদি ময়দান থেকে বিমানবন্দরের পথ ধরেন। পুলিশের হিসেবে, সারা রাজ্য থেকে আসা বিজেপি-সমর্থকদের ধরলে মাঠে ৩০ হাজার লোক হয়েছিল। মোরাবাদি ময়দানের ধারণ ক্ষমতা এর দ্বিগুণের বেশি। আডবাণীর মঞ্চে আসা, বক্তৃতা দেওয়া ও নিষ্ক্রমণসব মিলিয়ে বড়জোর মিনিট কুড়ি বিজেপি-র এই বর্ষীয়ান নেতাকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন আম-জনতা। |
তবে জোট-সঙ্গীদের সঙ্গে দূরত্বের এই ‘চাপ’ উড়িয়ে দিতে আডবাণীর বক্তৃতা কিছুটা হলেও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে সাহায্য করেছে। উপলক্ষটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘যাত্রা’ হলেও তাঁর সাড়ে ১১ মিনিটের বক্তৃতায় আডবাণী অন্য জায়গার মতো এখানে সে-ভাবে কংগ্রেস বা প্রধানমন্ত্রীকে কার্যত আক্রমণ করেননি। বরং ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে বিজেপি তথা এনডিএ-এর ‘বিশেষ সম্পর্ক’ বোঝানোর বিষয়টিতেই বেশি জোর দিয়েছেন। আডবাণী বলেন, “ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ় ও উত্তরাখণ্ড —এই তিনটি রাজ্যে এলেই আমি বিশেষ আত্মীয়তা অনুভব করি। কারণ এই তিনটি রাজ্যই এনডিএ সরকারের সিদ্ধান্তে গঠিত হয়।”
আজ ছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা দিবস। এই দিনটায় রাঁচিতে থাকতে পারায় আনন্দ প্রকাশ করেন আডবাণী। তবে রাজ্য-রাজনীতির কুশীলবদের মতে, দলের জাতীয় নেতার ক্ষণিকের উপস্থিতিটুকুই যত দূর সম্ভব কাজে লাগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মুন্ডা। বিমানবন্দর থেকে সভাস্থলের পথে গাড়িতে মুন্ডার সঙ্গে আলাপচারিতার কথা উঠে এসেছে আডবাণীর বক্তৃতাতেও। মুন্ডা নিজেও মিনিট পাঁচেকের জন্য বলতে উঠে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাড়খণ্ড সরকারের ‘সদিচ্ছা’-র দিকটা তুলে ধরেছেন। মুন্ডা মনে করিয়ে দেন, ১৫ নভেম্বর ঝাড়খণ্ডের আসন্ন প্রতিষ্ঠা দিবস থেকেই রাজ্যে পরিষেবা অধিকার আইন চালু হবে। কোনও আমলা সময় মতো কাজ সারতে না-পারলে এই আইনের বলে তাঁর সাজা হতে পারে। আডবাণী এই ভাবনার প্রশংসা করে বলেন, “বিজেপি ক্ষমতায় এলে গোটা দেশে এমন প্রয়াস কার্যকর করা হবে।” |