গোটা এলাকা ভরে গিয়েছে বেআইনি দোকানে। ট্রেন ধরতে গেলে শিয়ালদহ স্টেশনে নিত্যযাত্রীদের রীতিমতো ঠোক্কর খেতে খেতে এগোতে হয়। কিন্তু স্টেশনের সাবওয়ের ভিতরে ছোট ব্যবসায়ী ও হকারদের জন্য তৈরি ৪৮টি দোকানঘর গত দশ বছর ধরে ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেগুলি নিয়ে কী করা হবে, তা জানতে পূর্ব-রেলের কর্তারা শেষ পর্যন্ত রেলবোর্ডের দ্বারস্থ হয়েছেন।
হকারদের সুবিধার জন্য এনডিএ জমানায় তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই তৈরি হয়েছিল ওই দোকানঘরগুলি। শিয়ালদহ আদালতের উল্টো দিক থেকে শুরু হয়ে ওই সাবওয়ে সোজা গিয়ে উঠেছে শিয়ালদহ প্লাটফর্মের ভিতরে। রেল-কর্তৃপক্ষের আশা ছিল, সাবওয়ের ভিতরে দোকান পেলে বেআইনি ছোট ব্যবসায়ী ও হকারদের একটি বড় অংশ সেখানে সরে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকতে থাকতে ওই দোকানগুলির লোহার শাটারে মরচে পড়েছে। অনেক জায়গায় ভেঙে গিয়েছে ঘরগুলির সামনে তৈরি লোহার রেলিং। ফাঁকা দোকানঘরগুলিতে আস্তানা গেঁড়েছে নেশাখোর ও ভরঘুরেরা। নাকে রুমাল চেপে অপরিচ্ছন্ন ওই দোকানঘরগুলির সামনে দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। |
রেল সূত্রের খবর, তৈরির পরে দু’দফায় কয়েকটি করে দোকানঘর ভাড়া দেওয়াও হয়েছিল। কিন্তু যে ক’জন ভাড়া নিয়েছিলেন, তাঁরা কয়েক মাস পরেই ঘরগুলি ছেড়ে দেন। হকারদের বক্তব্য, সাবওয়ের মধ্যে কেনাবেচা কম। বাইরে খদ্দেরের সংখ্যা অনেক বেশি। এই কারণেই দশ বছর ধরে কোনও ছোট ব্যবসায়ীই আর আগ্রহী হননি দোকানঘরগুলি ভাড়া নিতে। শিয়ালদহ স্টেশনের সামনে উড়ালপুলের পাশে বেআইনি ভাবে জামাকাপড় বিক্রি করেন এমন এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, “পুলিশ ও এলাকার দাদাদের কিছু টাকা দিলেই দিব্যি বাইরে বসে ব্যবসা করা যায়। এখানে খদ্দেরের সংখ্যাও অনেক বেশি। তাই দিয়েথুয়েও লাভ থাকে তুলনায় বেশি। কেন খামোখা বেশি টাকা খরচ করে সাবওয়ের ফাঁকা জায়গায় দোকান ভাড়া করতে যাব?” রেলকর্তাদের একাংশও বলেন, বেআইনি ভাবে ব্যবসা চালানোর এমন ব্যবস্থা থাকলে, কেনই বা গাঁটের কড়ি খরচ করে কেউ দোকান ভাড়া নিতে আসবেন? এই কারণেই দোকানগুলি পড়ে রয়েছে।” কেন ওই দোকানঘরগুলি ফাঁকা পড়ে রয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য রেল-কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পূর্ব-রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “দোকানগুলি চালু থাকলে সাবওয়েতে ভিড় বাড়ত। তাতে নিত্যযাত্রীদের চলাফেরার অসুবিধা হত। এই বিষয়টি নিয়ে যাত্রীরা শিয়ালদহে রেল-কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। তাই ওই দোকানঘরগুলি ভাড়া দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। হাওড়ার সাবওয়েতেও একই কারনে দোকানঘর ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, দিনে দিনে যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই রেল কর্তাদের বক্তব্য।
এত খরচ করে তৈরি করার পরে দোকানঘরগুলি নিয়ে তা হলে কী করবেন রেল-কর্তৃপক্ষ? সমীরবাবুর উত্তর, “বিষয়টি বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।” |