বড়বাজারের বিকল্প হোক গঙ্গারামপুর, চান জরিশিল্পীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • উলুবেড়িয়া |
বছর ছয়েক আগে মাত্র একটি দোকানের মাধ্যমে পত্তন হয়েছিল হাওড়ার উলুবেড়িয়ার গঙ্গারামপুর বাজারের। এখন সেখানে দোকানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০। সবই জরি বসানো শাড়ি, সালোয়ার-কামিজের। এই সব দোকানে প্রতিদিনই বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়।
অনেক জরির কারিগর নিজেই দোকান করে ফেলেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই, বাংলাদেশেও পণ্য রফতানি হচ্ছে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে, যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও পণ্য কিনতে সরাসরি চলে আসছেন গঙ্গারামপুরে। হাসি ফুটেছে জরির কারিগরদের মুখে। তাঁরা শুধু চান, সরকারি উদ্যোগে এই বাজারে একটি বাণিজ্যিক চত্বর গড়ে তোলা হোক। তাঁরা নিশ্চিত, তা হলে গঙ্গারামপুর বাজার বড়বাজারের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে।
হাওড়ার পাঁচলা, সাঁকরাইল, উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া, বাগনান, চেঙ্গাইলের ঘরে ঘরে জরির কাজ হয়। কারিগরেরা তাঁদের তৈরি পণ্য ‘ওস্তাগর’কে বিক্রি করেন। ওস্তাগরেরা আসলে মধ্যস্বত্বভোগী। তাঁরা কলকাতার বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বরাত আনেন। |
সেই বরাত মাফিক কারিগরদের শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের উপরে জরির নকশা বানাতে দেন। কিন্তু কাজটি হয়ে যাওয়ার পরে কারিগরেরা ওস্তাগরের কাছে তা দিতে কখনও দেরি হওয়ার কারণ দেখিয়ে, কখনও বা কোনও ছোটখাটো খুঁত বের করে তাঁদের নানা ভাবে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। ‘বাতিল’ হয়ে যাওয়া পণ্য নিয়ে সমস্যায় পড়েন কারিগররা। ওই সব ‘বাতিল’ শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ অবশ্য কম দাম দিয়ে কিনে বড়বাজারে বেশি দামে ওস্তাগরেরা বিক্রি করেন বলে অভিযোগ। কারিগরদের বক্তব্য, বড়বাজারে সরাসরি তাঁরা যেতে না পারার জন্য তাঁদের ওস্তাগরদের খপ্পরে পড়তে হয়। আর্থিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হতে হয়।
এই পরিস্থিতি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু গঙ্গারামপুর বাজার বেড়ে ওঠায় এখন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন জরির কারিগররা। তাঁরা সরাসরি এইসব দোকানে আসছেন। রীতিমতো দরদাম করে নিজেদের বানানো পণ্য বিক্রি করছেন।
ওই বাজারে দোকান করেছেন আলাউদ্দিন খান। সেখানে জরির নকশা করা শাড়ি বিক্রি করতে আসেন চেঙ্গাইলের কারিগর জাকির গোড়ে। তিনি বলেন, “ওস্তাগরের কাছ থেকে তিনটি শাড়ির বরাত নিয়েছিলাম। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজটি করতে পারিনি। ফলে এগুলি বাতিল হয়ে যায়। এখানে সরাসরি বিক্রি করার জন্য এসেছি।” ওই দোকানে অবশ্য শাড়িগুলি বিক্রি করতে পারেননি জাকির। তবু তিনি আত্মবিশ্বাসী অন্য কোনও দোকানে তা বিক্রি হয়ে যাবে। বীরশিবপুরের কারিগর জানে আলম বললেন, “এখন আর বাতিল করে দেওয়া শাড়ি, সালোয়ার নিয়ে কোনও ভয় নেই। ওই বাজারে তা বিক্রি করে দিচ্ছি।”
গঙ্গারামপুরের ব্যবসায়ীরা জানান, যে জমিতে দোকান গড়ে উঠেছে তা সরকারি। দোকানঘরের জন্য ভাড়া দিতে হয় অনেক টাকা। ব্যবসায়ীদের মধ্যে শেখ মুস্তাকিন, জালালুদ্দিন খানেরা বলেন, “সরকার যদি উদ্যোগী হয়ে এখানে একটা বাণিজ্যিক চত্বর করে দেন তা-হলে আমরা লিজে দোকানঘর নিয়ে ব্যবসা করতে পারি। এটা হবে বড়বাজারের বিকল্প। কারিগররা উপকৃত হবেন।” ‘সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ সমিতি’র সম্পাদক মুজিবর রহমান বলেন, “কারিগরেরা সরাসরি আসতে পারবেন এমন বাজার যত গড়ে উঠবে ততই তাঁদের মঙ্গল। গঙ্গারামপুরে একটি বাজার তৈরি করে দেওয়ার জন্য আমরা পুরসভাকে অনুরোধ করেছি।” উলুবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবদাস ঘোষ বলেন, “এখন পুরসভার আর্থিক সঙ্কট চলছে। তবে জরি শিল্পভিত্তিক একটি বাণিজ্যিক চত্বর গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।” |