বাজি শিল্প
প্রযুক্তিতে রাজ্যকে হারাচ্ছে শিবকাশী
শিবকাশীর বাজির রমরমা বাড়ছে কলকাতার বাজারে। ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, এ রাজ্যের মহেশতলা, নুঙ্গি বা চম্পাহাটিতে তৈরি বাজি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। অথচ, এক সময়ে বাজির বাজারে দাপিয়ে বেড়িয়েছে এ রাজ্যের বাজি।
তা হলে কেন গত কয়েক বছরে মহেশতলা, নলপুর বা নুঙ্গির বাজি ক্রমশ পিছিয়ে পড়ল?
বাজি প্রস্তুতকারকদের একাংশ জানিয়েছেন, বাজি শিল্পে এ রাজ্যের পিছিয়ে পড়ার বহু কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম দুই রাজ্যের আবহাওয়ার তফাত। বাজির কারিগরেরা জানান, এ রাজ্যে অধিকাংশ সময়েই বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে, আতসবাজির মশলা শুকোনোর ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে হয়। কারণ, বাজির মশলা রোদ ছাড়া অন্য কোনও ভাবে শুকোনোর উপায় নেই। এ রাজ্যে যেখানে সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বাজি তৈরি হয়, সেখানে শিবকাশীতে সেই কাজ চলে বছরভর। ফলে উৎপাদনের দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে এ রাজ্য। রাজ্যের এক বিখ্যাত বাজি সংস্থার অন্যতম কর্ণধার সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বছর কয়েক আগে আমাদের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন শিবকাশী থেকেই বাজি এনে ব্যবসা চালাতে হয়।”
পাশাপাশি, বড়বাজারের এক বাজি ব্যবসায়ীর যুক্তি শব্দবাজি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আতসবাজির চাহিদা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এ রাজ্যের উৎপাদন সেই চাহিদা মেটাতে পারছে না। ব্যবসায়ীদের একাংশ এ-ও কবুল করেন যে, আতসবাজির গুণমানেও এ রাজ্যকে দশ গোল দিচ্ছে শিবকাশী। তা ছাড়া, যে ধরনের প্রযুক্তি শিবকাশীতে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা এখানে অমিল।
শিবকাশীর বাজির চটকদারিও তাকে এগিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন বড়বাজারের বাজি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সঞ্জয়কুমার দত্ত। তিনি বলেন, “শিবকাশীর বাজি গুণমানে ভাল। পাশাপাশি ঝাঁ-চকচকে মোড়ক থাকে। ক্রেতা টানতে সেটাও জরুরি।” একই বক্তব্য অন্য বাজি ব্যবসায়ীদের। তাঁরা জানান, মাটির খোলের সাবেক তুবড়ির জায়গায় মোটা কাগজের খোলের তুবড়ি আধুনিক ক্রেতাদের বেশি পছন্দ। সে ভাবে হাউইয়ের বাজারেও নানা রকমের চটকদারি এনে বাজার মাত করছেন শিবকাশীর বাজি নির্মাতারা।
পরিকাঠামোগত সমস্যাকেও দুষছেন রাজ্যের বাজি ব্যবসায়ীরা। এক বাজি সংস্থার মালিক হেমন্ত পাল জানান, শিবকাশীতে যে পরিকাঠামো রয়েছে, তা এ রাজ্যে অমিল। ফলে, শিবকাশীর বাজিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও চটকদারির ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধা আছে। রাজ্যের বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, শিবকাশীতে সারা বছর বাজি তৈরি করে সংরক্ষণের বন্দোবস্ত আছে। কিন্তু এ রাজ্যে তেমন ব্যবস্থা না থাকায় বছরভর উৎপাদন করলেও তা সংরক্ষণের উপায় নেই।
হেমন্তবাবুর দাবি, বজবজ ও চম্পাহাটির কয়েক হাজার মানুষ এই শিল্পে যুক্ত। কিন্তু পরিকাঠামোগত সমস্যায় পিছিয়ে পড়ছে তাঁদের কাজ। কারিগরেরা জানান, ঠিক মতো মজুরি না পাওয়ায় দক্ষ শ্রমিক মিলছে না। তার উপরে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ হওয়ায় সারা বছরের জীবিকাও নিশ্চিত হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলেন, এ রাজ্যে বাজি শিল্পের সম্ভাবনা ও বাজার, দুই-ই আছে। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে তা প্রশ্নের মুখে।
উন্নত পরিকাঠামো না পাওয়ায় এ রাজ্য থেকে বিদায় নিয়েছে গেঞ্জি-সহ বিভিন্ন ঘরোয়া শিল্প। এখন প্রশ্ন, বাজি শিল্পও কি সেই পথ ধরবে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.