প্রাচীন রীতি মেনেই পুজো হয় পাষাণকালীর
লাকার বাগডোলা কালীবাড়ির নাম প্রায় সকলেই জানেন। শুধু এলাকার বাসিন্দারা নন জেলা এবং জেলার বাইরের বহু মানুষ তাঁদের ইচ্ছা পুরণের জন্য সাঁইথিয়া বাগডোলা কালীবাড়িতে এসে মানত করেন, পুজো দেন। এখানে দেবীর কোনও রূদ্রমূর্তি নেই বা চরণতলে শিব নেই। মূর্তি বলতে গলা থেকে উপরের অংশ। এবং তা কাঠের। দেবী এখানে পাষাণকালী হিসেবে পূজিত হন।
ছবি: অনির্বাণ সেন।
প্রচলিত আছে, বাগডোলা গ্রাম ঘেঁষা মনিকর্নিকা নামে যে কাঁদর আছে সেই কাঁদরে জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন স্থানীয় বাগদি পরিবারের এক সদস্য। ওই জালেই ওঠে বাগডোলা কালীবাড়ির পাষাণকালীর শিলামূর্ত। মূর্তি পাওয়া ওই সদস্যকে ওই রাতেই দেবী স্বপ্নে দেখা দেন। স্বপ্নে তাঁকে বলেন, গ্রামের তন্ত্রসাধক কালু দেবাংশীর হাতে দেবী মূর্তিটি দিয়ে দেওয়ার জন্য। সে প্রায় ৪০০ বছর আগের কথা। তার পর থেকেই বাগডোলার দেবাংশী পরিবার প্রাচীন নিয়ম রীতি মেনে আজও পাষাণকালীর পুজো করে আসছেন। বর্তমানে ১০-১২টি দেবাংশী পরিবার এই পুজোর অংশীদার ও সেবাইত। এই পরিবার পালা করে পুজোর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ বার দায়িত্ব পড়েছে রক্ষাকর দেবাংশী, তপন দেবাংশী, রতন দেবাংশী ও অসীম দেবাংশীদের উপরে।
রক্ষাকরবাবু বলেন, “বাপ-ঠাকুরদা, জ্যাঠামশাই প্রয়াত ভক্তিভূষণ দেবাংশীর কাছ থেকে শুনেছি, পূর্বপুরুষ কালু দেবাংশী বাড়ি ও কাঁদরের কাছাকাছি গাছ-গাছালিতে ঘেরা একটি নির্জন স্থানে তন্ত্রসাধনা করতেন। এক দিন রাতে দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, ‘আমি তোদের গ্রামে বাগদিদের ঘরে এসেছি। ওদেরকে বলেছি আমার পাষাণ মূর্তিটি তোর কাছে দেওয়ার জন্য। তুই আমাকে প্রতিষ্ঠা করবি।”
তিনি জানান পরের দিন সকালে যাঁর জালে ওই পাষাণকালীর মূর্তি উঠেছিল তিনি নিজেই ওই মূর্তি নিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষের কাছে আসেন। তাঁর হাত থেকে মূর্তি নিয়ে তন্ত্রসাধক দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, “শুনেছি প্রায় ৩০০ বছর আগে ওই শিলামূর্তির বদলে নিম কাঠের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়।” কিন্তু কেন কাঠের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হল বা শিলা মূর্তিটি কোথায় গেল সে বিষয়ে কারও জানা নেই।
তবে এই পাষাণকালীর নাম ছড়িয়ে পড়ারও কারণ রয়েছে। এক বার এক বধূ সন্তান লাভের জন্য দেবীর কাছে মানত করেছিলেন। পরে ওই বধূ সন্তান লাভও করেন। মানত করার সময়ে তাঁকে সাধক গাছগাছালির ওষুধ খেতে দিয়েছিলেন। তন্ত্রসাধক না থাকলেও এখনও বহু নারী সন্তান লাভের জন্য এখানে মানত করেন। ওই ওষুধ বছরে এক দিনই তোলা যায়। তা হল বিজয়া দশমীর দিন ঘট বিসর্জনের পরে। তপনবাবু ও রতনবাবুরা বলেন, “সারা বছর ধরে মায়ের পুজো হয়। যাঁদের সন্তান নেই ওই নারীদের ওষুধ দেওয়া হয়। আমরা বংশানুক্রিক ভাবে গাছগাছালির ওষুধ দিয়ে আসছি।” তবে মঙ্গল ও শনিবার বিশেষ পুজো হওয়ায় ভক্তদের ভিড় হয় অন্য দিনের চেয়ে বেশি। বারোমাস পুজো করেন অব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ওই দেবাংশী পরিবারের সেবাইতরা। তাঁরা আরও বলেন, “বছরে দু’দিন বিজয়া দশমী ও কার্তিক মাসের অমাবস্যায় কালীপুজোর দিন পুরোহিতদের দ্বারা দেবী পূজিত হন। সেবাইতদের তরফ থেকে ছাগ বলিও হয়। এ ছাড়া ভক্তদের মানত করা ছাগ বলিও হয়।”
দেবাংশীদের অন্য শরিক হারু দেবাংশী, সুদাম দেবাংশীরা জানান, কাছাকাছি মুনাই গ্রামের চক্রবর্তী পরিবার বংশানুক্রমে বছরে দু’দিন পুজো করে আসছেন। গ্রামের বধূ নীলিমা মুখোপাধ্যায়, সরসী দাসীরা বলেন, “দেবী ভীষণ জাগ্রত। এই পুজোর সময়ে সকলেই চেষ্টা করেন গ্রামে আসার বা থাকার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.