ঘরের পিছনে সাপ পুষলে তা কেবল প্রতিবেশীকেই কামড়াবে না। কামড়াতে পারে বাড়ির মালিককেও। হক্কানি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়ে আজ এই মন্তব্যই করলেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। সেই সঙ্গে হক্কানি গোষ্ঠী-সহ পাকিস্তানের মাটিতে আশ্রিত সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও চাপ বাড়ালেন তিনি। কিন্তু হক্কানিদের বিরুদ্ধে এখনই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়েই গেলেন পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার।
আফগানিস্তান সফর শেষ করে কালই পাকিস্তানে আসেন হিলারি। তাঁর সঙ্গেই এসেছেন সিআইএ ডিরেক্টর ডেভিড পেট্রেউস ও মার্কিন জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্টিন ডেম্পসে। আজ পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন হিলারি। সেখানে তিনি কড়া ভাষায় আরও এক বার বলেন, হক্কানি গোষ্ঠীকে নিকেশ করতে সদর্থক ভূমিকা নিক ইসলামাবাদ।
তাঁর কথায়, “সীমান্তের এক দিক থেকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও অপর প্রান্তে তারা ঠিকই নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে যায়।” আফগানিস্তানের সঙ্কট না মেটার জন্য তিনি কাল ইসলামাবাদকে দুষেছিলেন। বলেছিলেন, দেশের মাটিতে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়লেও ইসলামাবাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। যাতে আফগানিস্তানের জঙ্গিরা মূল স্রোতে ফিরতে পারে, তার জন্যও পড়শি রাষ্ট্রকে চেষ্টা করতে হবে। |
পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানির সঙ্গে হিলারি ক্লিন্টন। ছবি: এএফপি |
বস্তুত, আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বুরহানুদ্দিন রব্বানির হত্যার পর থেকেই পাক-মার্কিন সম্পর্কের চাপান-উতোর ক্রমশই প্রকাশ্যে আসে। আফগানিস্তান লাগোয়া পাক ভূখণ্ডে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের নামে আমেরিকা আঘাত হানতে পারে বলে সম্প্রতি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন পাকিস্তানের সেনাধ্যক্ষ জেনারেল আশফাক পারভেজ কিয়ানি। একই সঙ্গে জানিয়ে ছিলেন, এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমেরিকাকে ভাবতে হবে। কারণ, পাকিস্তান ইরাক বা আফগানিস্তান নয়। দেশের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর বক্তব্য ছিল, পাকিস্তানের মাটিতে এই ধরনের কোনও আক্রমণ আমেরিকার পক্ষে মোটেই ভাল হবে না।
সাংবাদিক সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হিলারি বলেন, পাক সেনাধ্যক্ষের সঙ্গে তিনি একমত। তিনি জানেন পাকিস্তান ইরাক বা আফগানিস্তান নয়। একই সঙ্গে এ-ও জানান, ঘরে-বাইরে একাধিক বিষয়ে পদক্ষেপ করতে হবে পাকিস্তানকে। সে ক্ষেত্রে মার্কিন সাহায্যও মিলবে। অর্থাৎ, আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়া তরান্বিত করা, সে দেশের তালিবান জঙ্গিদের আলোচনার মাধ্যমে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা ও হক্কানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসলামাবাদের সঙ্গে যৌথ ভাবে ওয়াশিংটন কাজ করবে বলে তিনি জানান।
পাক বিদেশমন্ত্রী অবশ্য বলেন, “পাক-মার্কিন সম্পর্ক কখনওই শর্ত সাপেক্ষ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করতে পারে না।” তবে এ বিষয়ে তাঁরা এক মত যে, আফগানিস্তানে শান্তি স্থাপনে পাকিস্তান-আমেরিকা দুই দেশের যৌথ ভাবে পরিকল্পনার প্রয়োজন। কিন্তু আমেরিকা যতই চাপ বাড়াক উপজাতি-অধ্যুষিত উত্তর ওয়াজিরিস্তানে এখনই অভিযানে যেতে নারাজ পাকিস্তান। পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অভিযান নয়, আলোচনার মাধ্যমেই ওই অঞ্চলের সমস্যা সমাধান করতে চান পাক নেতৃত্ব। |