তিনি শুধু দেবী নন! তিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জ্বলন্ত প্রতিবাদ।
এটাই বিশ্বাস বর্ধমান শহরের বাসিন্দাদের। তাই আজও ফৌজদারি কালীর বিসর্জনের মিছিলে হাঁটাকে পুণ্য বলে মনে করেন তাঁরা। এখনও বিশাল মিছিল করে ভক্তদের কাঁধে চড়ে দেবী যান বিসর্জনের পথে।
এই বিশ্বাসের পিছনে থাকা গল্প শোনালেন পুজো কমিটির সম্পাদক শম্ভুনাথ মিশ্র।
|
নিজস্ব চিত্র |
১৯২৫ সালের ঘটনা। তৎকালীন লিগ সরকার রাজ্যে কালী প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল স্বদেশী বাংলা, বিশেষত বর্ধমান। শ্রীকুমার মিত্র, টোগো ওরফে অজিত সরকার-সহ পাঁচ সমাজসেবী প্রতিবাদের এক অভিনব উপায় বের করেন। তাঁরা কালীপুজোর সময় শহরের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতে থাকেন, কেউ যদি তাঁদের একটি প্রতিমা দেন তো এই ‘কালা কানুন’-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল বের করবেন সেই প্রতিমা নিয়ে। ব্রিটিশ পুলিশের ভয়ে বর্ধমানের বর্ধিষ্ণু পরিবারের সদস্যেরা বাড়িতে কালীপুজো করলেও, প্রতিমা তাঁদের হাতে তুলে দিতে সাহস পাননি। সেই সাহস দেখিয়েছিলেন তৎকালীন রাজরাজেশ্বর শিবতলা লেনের বাগদিরা। তাঁরা দেবীকে তুলে দেন শ্রীকুমারবাবুদের হাতে।
আর সেই প্রতিমা নিয়ে বিসর্জনের মিছিল করেন প্রতিবাদকারীরা। শহর জুড়ে এই মিছিল পরিক্রমা করার পরে রাজবাড়ি উত্তর ফটকের কাছে ভেড়িখানায় পুলিশ এই মিছিলের গতি রোধ করে। গ্রেফতার করা হয় নেতৃস্থানীয়দের। টানা এক মাস ধরে প্রতিমা পড়ে থাকে ভেড়িখানার পুকুর পাড়ে। এর প্রতিবাদে সমাজসেবীরা বর্ধমান জজ কোর্ট ও পরে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। শেষে বিচারে জেতেন তাঁরাই। এক মাস পরে ফের শহর ঘুরে ঢাক ঢোল বাজিয়ে প্রতিমার নিরঞ্জন হয় স্থানীয় গুরুদাসী পাড়ের পুকুরে। মামলা করেই যেহেতু দেবীর বিসর্জনের অনুমতি আদায় করা হয়েছিল, তাই দেবীর নাম হয়ে যায় ‘ফৌজদারি কালী’।
পুজো কমিটির সম্পাদক শম্ভুনাথ মিশ্র বলেন, “একদা পুজোর সময় তিন দিন ধরে চলত যাত্রাপালা। এখন অবশ্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পুজোর প্রণামী বাবদ সংগৃহীত কাপড় দুঃস্থ মহিলাদের মধ্যে বিলি করে দেওয়া হয়। পুজোর দিনগুলিতে অনেকে বেনারসী শাড়ি প্রণামী দেন। ওই শাড়িগুলিকে দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়ের সময় আবেদনের ভিত্তিতে বিলি করা হয়। |