মাধ্যমিকের ভয় কাটাতে দাওয়াই পাড়ার ক্লাবের
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসার আগে ভয় তো থাকেই। এলাকার পড়ুয়াদের মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে এই ভীতি কাটানোর পাশাপাশি অনগ্রসর এলাকায় শিক্ষার প্রসার, এই দুই লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছে কাঁকসার একটি ক্লাব গ্রন্থাগার। ক্লাবের উদ্যোগে মাধ্যমিকের আদলে চালু হয়েছে একটি পরীক্ষা। দু’দশক ধরে এই পরীক্ষার আয়োজন করে আসছে কাঁকসার এই ক্লাবটি।
১৯৯১ সালে কাঁকসা ব্লকের ১৩টি স্কুলের শ’খানেক পড়ুয়াকে নিয়ে শুরু হয়েছিল এই পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল কাঁকসা হাইস্কুল। আগে পরীক্ষা আয়োজন ও পুরস্কারের সব খরচ বহন করত কাঁকসা হাটতলার এই ক্লাবই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ে। এ বছরই যেমন পরীক্ষার্থী ৬৬০ জন। বেড়েছে জিনিসপত্রের দামও। তাই ইদানীং পরীক্ষার্থীদের থেকে অল্প ‘ফি’ নেওয়া হচ্ছে। এ বার পরীক্ষার্থী পিছু ২০ টাকা ‘ফি’ নেওয়া হয়েছে। তাতে নাম লিখিয়েও পরীক্ষা না দেওয়ার প্রবণতাও কমেছে বলে জানা ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তবে তাতে অবশ্য পাঁচটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র, পরীক্ষা আয়োজনের আনুষঙ্গিক নানা খরচ ও পুরস্কারের সব খরচ উঠবে না। ক্লাবের পক্ষ থেকে দশ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ামক কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাধু। কাল, রবিবার কাঁকসা, আউশগ্রাম ও গলসি ব্লকের ৩৯টি স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা পরীক্ষায় বসবে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কাঁকসা ব্লকের স্কুলগুলি দিয়ে শুরু হলেও ক্রমশ এই পরীক্ষার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে পাশের দুই ব্লক আউশগ্রাম ও গলসিতেও। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাঁকসা হাইস্কুল ছাড়াও এ বার পরীক্ষা হবে মলানদিঘি দুর্গাদাস বিদ্যামন্দির ও মানকর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
ভৌতবিজ্ঞান, অঙ্ক, ইংরেজি, জীবন বিজ্ঞান এবং ভারত ও ভারতবাসী (ইতিহাস ও ভুগোল একত্রে), এই পাঁচটি বিষয়ে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা প্রশ্নপত্র তৈরি করে পাঠান গ্রন্থাগারে। চূড়ান্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করে গ্রন্থাগারের পরীক্ষা নিয়ামক কমিটি। উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হয় শিক্ষকদের কাছে। মেধা তালিকা প্রকাশের পরে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানাধিকারীকে প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী রেবতীরঞ্জন ভৌমিক স্মৃতি রৌপ্য পদক এবং তৃতীয় স্থানাধিকারীকে প্রয়াত সমাজসেবী বৈদ্যনাথ দে স্মৃতি রৌপ্য পদক দেওয়া হয়। এ ছাড়া অঙ্কে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপককে দেওয়া হয় মির্জা তাজউদ্দিন বেগ স্মৃতি পুরস্কার।
পরীক্ষার সময়ে শিক্ষকেরা তদারক করেন। মাঝে মাঝে বিশেষ পরিদর্শক হিসেবে পরীক্ষাকেন্দ্র ঘুরে যান এলাকার কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তি, সরকারি কোনও আধিকারিক বা অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নাগরিক। কাঁকসা থানার তরফে কয়েক জন পুলিশ কর্মীকেও পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরীক্ষা নিয়ামক কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা যাতে অচেনা পরিস্থিতিতে পড়েছে মনে না করে, সে জন্য সেই ধরনের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হয়।”
কাঁকসা গার্লস হাইস্কুলের ফাল্গুনি দত্ত, পানাগড়ের রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরের প্রসেঞ্জিৎ দাসরা জানায়, অন্য স্কুলে পরীক্ষা দিতে গিয়ে মানসিক চাপ তৈরি হয়। কিন্তু এখানে পরীক্ষায় বসার পরে তা আর হবে না বলেই তাদের ধারণা। সিলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার পাল বলেন, “পড়ুয়ারা মাধ্যমিকের জন্য মানসিক ভাবে তৈরি হয়ে যাবে।” বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, “পড়ুয়াদের এ ভাবে সাহায্য করতে পেরে আমরা ধন্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.