ভূমিকম্প প্রবণ বলে চিহ্নিত ছিলই। কয়েক মাস আগে এই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে কোচবিহার শহর জুড়ে বাড়ির তৈরির ক্ষেত্রে সর্তকতামূলক হোর্ডিংও দেওয়া হয়। রবিবার সন্ধ্যার বড় মাপের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও এ বার বহুতল-সহ নতুন বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হবে কোচবিহারে। মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট, নকশা অনুমোদনের বাধ্যকতামূলক করার দাবিও উঠেছে। সেই সঙ্গে সমস্ত বেআইনি ও দুর্বল বাড়ি চিহ্নিত করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির দাবিও উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে একই সুরে সরব হয়েছেন কোচবিহারের সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা। নাগরিক সংগঠনগুলিও এব্যাপারে সরব হয়েছে। পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে মোট হোল্ডিং রয়েছে ১৬ হাজারের বেশি। তার মধ্যে দোতলা ও বহুতল বাড়ির সংখ্যা এক হাজারের বেশি। প্রতি মাসে শতাধিক নকশার অনুমোদন চেয়ে আবেদন জমা পড়ে। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া সমীক্ষা রিপোট অনুযায়ী কোচবিহার ভূমিকম্প প্রবণ ‘জোন’ ফাইভে রয়েছে। কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান বীরেন কুণ্ডু অবশ্য বলেছেন, “সকলের মূল্যবান পরামর্শ মাথা রেখে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলব। তার ভিত্তিতেই সমস্ত রকম বাড়ির অনুমোদন দেওয়ার রূপরেখা তৈরি করা হবে।” প্রসঙ্গত, রবিবারের ভূমিকম্পে কোচবিহার জেলা জুড়ে বহু দোতলা, বহুতলের ফাটল তৈরি হয়েছে। ফাটল কোচবিহার রাজবাড়িতেও। কোচবিহারের তৃণমূল কংগ্রেস জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ভূমিকম্প প্রবণ কোচবিহারে এখনই বাড়তি সর্তকতা নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে বিপদের আশঙ্কা বাড়বে। নতুন বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করার জরুরি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুরসভার সঙ্গে কথা বলব।” একই ভাবে ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহও বলেছেন, “কোচবিহারে পুকুর বুজিয়ে, বিধি ভেঙে বাড়ি ও বহুতল তৈরির নানা অভিযোগ রয়েছে। রবিবার পর পুরসভা প্রশাসনের বাড়তি সর্তকতা নেওয়া দরকার।” সিপিএম নেতা তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা মহানন্দ সাহা বলেন, “বাড়ির তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাব। পুরসভাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। শহরের সমস্ত বেআইনি ও দুর্বল কাঠামোর বাড়ির তালিকাও তৈরি করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’ বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “নতুন বাড়ি, বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শ নিয়েই নকশার অনুমোদন দেওয়ার দরকার। পুরসভা ও প্রশাসনের সঙ্গে ওই ব্যাপারে কথা বলব।” কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি রাজু রায় বলেন, “কোচবিহারে দেদার বহুতলের ছাড়পত্র দেওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। তিনতলার বেশি বাড়ি বা ভবন তৈরির অনুমতি না দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে বলব। তবে কীভাবে শহরে এত বহুতলের অনুমতি দেওয়া হল, তারও তদন্ত দরকার।” |