ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ানে সমীক্ষা
বিবারের ভয়াবহতার পর ৪৮ ঘন্টা কেটে গিয়েছে। বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক ধীরে ধীরে কমছে। তবে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। শ্রমিক বস্তি থেকে প্রশাসনিক ভবন, স্কুল-কলেজ থেকে বহুতল কোনও কিছুই রেহাই পায়নি উত্তরের ছয় জেলায়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই রাজ্য সরকারের নির্দেশে প্রতি জেলায় ক্ষতির সঠিক পরিমাণ বার করতে সমীক্ষা শুরু করেছে প্রশাসনিক কর্তারা। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা পড়বে। ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিক আবাসনগুলির অবস্থা ভয়ানক হয়ে উঠেছে। বহু জায়গায় শ্রমিক বস্তির বাড়িঘর ভেঙে পড়ার খবর আসতে শুরু করেছে প্রশাসনের কাছে। গরুবাথান ব্লকের লোয়ার ফাগু, ব্যারন ঝোরা, অম্বিয়ক, নাগরাকাটার ক্যারন, বামনডাঙা, নয়া সাইলি, মালবাজার ব্লকের কুমলাইস, নিদাম এবং ডামডিম চা বাগানে একই দৃশ্য। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের চা শ্রমিক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কাস ইউনিয়নের রাজ্যের সহ-সম্পাদক অমরদান বাক্সলা বলেন, “ডুয়ার্সের চা শ্রমিক আবাসনগুলির অবস্থা খারাপ। বাগান মালিকেরা বিমার টাকার পাশাপাশি হয়ত সরকারের সাহায্য পাবেন। কিন্তু আমাদের দাবি ক্ষতিপূরণের টাকা শ্রমিকদের দেওয়া হোক।” মালবাজারের বিডিও প্রেম বিভাস কাঁসারি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের -এর জলপাইগুড়ির সচিব প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, “বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিতে সরকারি সাহায্য প্রয়োজন। প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।” ভূমিকম্পে নিহতের স্মরণে মালবাজারের ছোট গাড়ির চালকদের সংগঠন ‘নিউ কার স্ট্যান্ডের’র সদস্যরা এদিন সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালিয়েছেন। সাধারণ মানুষও এতে অংশ নেয়। ভূমিকম্পে স্কুলের দেওয়ালে ফাটল ধরায় আলিপুরদুয়ার জংশনের জিৎপুর উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষিকা রত্না সরকার জানান, পরিচালন সমিতির সাথে আলোচনা করে মঙ্গলবার ও বুধবার স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার বাস্তুকাররা স্কুল পরিদর্শন করে আপাতত ষষ্ট ও দশম শ্রেণির ক্লাস ঘর ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সিকিমে পরিদর্শনে যাওয়ার পথে শিশুকে আদর মুখ্যমন্ত্রীর।
মঙ্গলবার কালিম্পংয়ের কাছে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
আলিপুরদুয়ারের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দিলীপ দাস বলেন, “স্কুলগুলি কর্তৃপক্ষগুলিকে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে বলা হয়েছে।” আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক অমলকান্তি রায় বলেন, “আলিপুরদুয়ার মহকুমায় ভুমিকম্পে ১০-১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ পাঠানোর কাজ শুরু করা হয়েছে।” বালুরঘাট হাসপাতালে নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারে বড়সড় ফাটল রয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “হাসপাতাল ভবন ও খাদিমপুর সরকারি আবাসনে ফাটল তৈরি হয়েছে। অন্য ব্লক থেকে বড় কোনও ক্ষতির খবর নেই।” মালঞ্চায় একটি বেসরকারি হিমঘরের দেওয়ালে ফাটল হওয়ায় আলু সংরক্ষণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোচবিহার জেলায় ৫০ লক্ষ টাকা ছাড়িয়েছে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। বিদ্যুৎ দফতরের তরফে জানানো হয়, ট্রান্সফরমার বিকল, বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। কোচবিহার জেলা হাসপাতাল, জেনকিন্স স্কুল, ডিএম বাংলো, পুরনো ডিএম অফিস, এসপি বাংলো সহ বিভিন্ন হাসপাতালের দেওয়ালে ফাটল। পূর্ত দফতরের কোচবিহারের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আশিস সাহা বলেন, “এখনও পর্যন্ত অফিস, কোয়াটারে ফাটলের যে হিসেব তাতে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে।” ভূমিকম্পে করণদিঘির ভূষামণি এফপি স্কুলে দুটি ক্লাসরুমের দেওয়ালে একাধিক ফাটল দেখা দেওয়া আতঙ্কিত শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। এ দিন পড়ুয়াদের বারান্দায় বসিয়ে ক্লাস করানো হয়। উত্তর দিনাজপুর জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “ক্ষয়ক্ষতি হিসেব করা হচ্ছে।” এদিন রায়গঞ্জে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ রায়গঞ্জ জেল পরিদর্শনে যান কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী। দার্জিলিং পাহাড় ও শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে আতঙ্কে বহু স্কুল বন্ধ ছিল। প্রশাসনের তরফে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব শুরু হয়েছে। কালিম্পঙের গেলখোলায় ধস নেমে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধসে ৩১-এ জাতীয় রাস্তা বন্ধ ছিল। পরে গেলখোলা এবং বিরিকধারায় সড়ক পরিষ্কার করে একমুখী চলাচল শুরু হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.