|
|
|
|
ছন্দে ফিরছে সমতল |
পাহাড়ের পুনর্গঠনের জন্য ২৫০০ কোটি চাইবে মোর্চা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
ভূমিকম্পের রেশ কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে সমতল।
গত রবিবারের সন্ধ্যার আতঙ্ক আর এক বার উস্কে দিয়ে মঙ্গলবার শিলিগুড়ির বিধান রোডের একটি বহুতল কাত হয়ে পড়ে। তাতে সামান্য উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে শিলিগুড়ি শহরের স্কুল-কলেজ, বাজার-হাট ও জনজীবন আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি, পাহাড় থেকেও কমবেশি বাসিন্দা পুজোর বাজার করতে আসছেন। একই ছবি জলপাইগুড়ি শহর এবং ডুয়ার্সেও। তবে দার্জিলিঙের কয়েকটি স্কুল, সরকারি দফতরে বড় মাপের ফাটল এবং ভাঙন দেখা দেওয়ায় এ দিনও সেগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে। আর পাহাড় কার্যত পর্যটক-শূন্য হয়ে পড়ছে। বাসে, ছোট গাড়িতে পর্যটকের দল পাহাড় থেকে সমতলে নেমে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।
কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম বেনজির নূর এ দিন কার্শিয়াঙে যান। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এ দিনই তিনি রাহুল গাঁধীকে সে সংক্রান্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব, মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত এ দিন সকালে শিলিগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি, স্কুল-কলেজ ঘুরে দেখেন। পুরসভার একটি দলও শহর জুড়ে ক্ষয়ক্ষতির সমীক্ষা শুরু করেছে।
জলপাইগুড়ি পুরসভার তরফেও একটি দল গঠন করে পরিস্থিতির রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে বলে পুরপ্রধান মোহন বসু জানিয়েছেন। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত রাজবাড়ির সিংহদুয়ারের অবস্থা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশেষজ্ঞ দল তৈরি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি-পরিস্থিতির সরকারি রিপোর্ট তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আপাতত দার্জিলিং, শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে নতুন বাড়িঘরের ‘রেজিস্ট্রেশন’ বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “ক্ষয়ক্ষতির বিশদ রিপোর্ট তৈরি কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তত দিন ওই তিনটি এলাকায় কোনও নতুন রেজিস্ট্রেশন না করতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানানো হচ্ছে।”
পক্ষান্তরে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ের তিন মহকুমার পুর্নগঠনের জন্য গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফে কমপক্ষে ২,৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে দাবি করা হয়েছে। বিধায়ক তথা মোর্চার প্রচার সচিব হরকা বাহাদুর ছেত্রী বলেন, “ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলায় পাহাড়ে অন্তত ২,৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। শুধু সিকিম লাগোয়া কালিম্পঙের জন্যই ১,৫০০ কোটি টাকা লাগবে। বহু পুরনো ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুর্নগঠন করা কঠিন। টাকার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, কালিম্পংয়ে ৬৫টি দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম ভূমিকম্পে পুরোপুরি বিধ্বস্ত। ওই মহকুমার ৭৬৫টি বাড়ি পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। ২,২২৫টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। মহকুমার প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো চার্চ, ইংরেজ আমলে তৈরি মর্গান হাউস-সহ ঐতিহ্যবাহী স্কুল, কলেজ ভবনের ক্ষতি হয়েছে। তিন মহকুমার অগুনতি রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের সদর দফতরে বড় মাপের ফাটল, ভাঙন হয়েছে। ৫৫ নম্বর এবং ৩১-এ জাতীয় সড়ক খোলা থাকলেও যে কোনও সময় তা ফের ধস-ফাটলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। সোনাদা, ঘুম এলাকায় রাস্তা এবং বহু বাড়িঘরে ফাটল ধরেছে। খারাপ অবস্থা তুনসং চা-বাগান, ফাগু এবং লেবং ভ্যালিরও।
কংগ্রেস সাংসদ মৌসম নূর এ দিন সকালে শিলিগুড়ি হাসপাতালে গিয়ে আহত বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি ভূমিকম্পে মৃত বিনোদ অগ্রবালের বাড়িতে যান। দুপুরে কার্শিয়াঙে গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি, বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন মৌসম। পরে তিনি বলেন, “সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখছি। দিল্লিতে রিপোর্ট দেব।” |
|
|
 |
|
|