মৃত্যু এত কাছে, আগে দেখেননি চিরঞ্জিৎ
পাশের বাড়ির বুয়া চাকরি নিয়ে সিকিমে গিয়েছিল। অরূপবাবুরা ভেবেছিলেন, এ বার একটা ভাল বেড়াতে যাওয়ার জায়গা হল। কিন্তু যাই-যাচ্ছি করেও সেখানে যাওয়া হয়ে ওঠেনি চুঁচুড়ার ১ নম্বর কাপাসডাঙার বাসিন্দা অরূপ দাসদের। মঙ্গলবার যখন বুয়ার কফিন-বন্দি দেহ এল পাড়ায়, কান্না চেপে রাখতে পারেননি অরূপবাবু। বললেন, “ছোট থেকে দেখছি, এত মিষ্টি ব্যবহার। পড়া শেষ করতে না করতেই চাকরি পেয়ে গেল। আমরা অনেকেই ভেবেছিলাম এ বার সিকিম বেড়াতে গেলে ওর কাছেই উঠব। এ নিয়ে কথাও হয়েছে অনেক বার। এ ভাবে সব শেষ হয়ে যাবে বিশ্বাস করতে পারছি না।”
বছর বাইশের ঝকঝকে তরুণ সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (বুয়া) দেহ মঙ্গলবার পৌঁছয় তাঁর কাপাসডাঙার বাড়িতে। ওষুধ প্রস্তুতকারী একটি সংস্থার সিকিমের রংপো অফিসে কর্মরত ছিলেন সন্দীপন। রবিবারের ভূমিকম্পে বাড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন তিনি। শিলিগুড়ি থেকে বাতানুকূল অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁর দেহ আনেন বাবা-মা এবং কয়েক জন আত্মীয়। বেলা ১টা নাগাদ গাড়ি যখন ঢুকছে কাপাসডাঙায়, দু’পাশে কাতারে কাতারে মানুষ। চন্দননগর পুরসভার শববাহী গাড়িতে সন্দীপনের দেহ যায় শেষকৃত্যের জন্য।
সন্দীপনের মৃত্যুতে হতবাক তাঁর আর এক পরিচিত, যিনি নিজেও রবিবার ভূকম্পের দিন ছিলেন সিকিমে। সন্দীপনের বাড়ি থেকে মিনিট দশেকের দূরত্বেই থাকতেন চিরঞ্জিৎ ঘোষ। আদি বাড়ি বনগাঁর চড়কতলায়। রংপোর খানিখোলায় একটি শিক্ষায়তনে ব্যাচেলর অব ফার্মেসি কোর্সের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন মাস কয়েক আগে। বিপর্যয়ে জখম হয়েছেন তিনিও। মঙ্গলবার ফিরেছেন বাড়িতে।
সিকিম থেকে ফিরে। ছবি: পার্থসারথি নন্দী
সে দিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে চিরঞ্জিৎ বলেন, “সন্দীপনদা আমার কলেজেরই সিনিয়র। থাকত আমাদের হস্টেল থেকে কিছুটা দূরে। তবু কথাবার্তা হত।” কী হয়েছিল রবিবার সন্ধ্যায়? চারতলা হস্টেলের দোতলায় ঘর চিরঞ্জিতের। তাঁর অভিজ্ঞতা, “হঠাৎ খাটটা যেন দুলে উঠল। ঘরের দেওয়াল, আসবাবপত্রও কাঁপছিল। বুঝতে পারি ভূমিকম্প। হস্টেল থেকে সকলে ছুটে বেরিয়ে আসি।” হুড়মুড় করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে চোট পান চিরঞ্জিৎ। কোমর, হাত-পায় ছড়ে যায়। রক্ত বেরোচ্ছিল। কিন্তু সে সব তখন কে তোয়াক্কা করে! হস্টেলের মাঠে নেমে আসে শ’তিনেক পড়ুয়া। তত ক্ষণে হস্টেলের দেওয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। রাতটা হস্টেলের নির্মীয়মাণ একটি শেড-এর তলায় কাটে সকলের। খাবার-জল কিছুই ছিল না। চিরঞ্জিৎ বলেন, “বার বার বাবা-মা, বাড়ির কথা মনে পড়ছিল। ভাবছিলাম, এ যাত্রা ফিরলে হয়।” সন্দীপনের কথা তিনি জানতে পারেন পর দিন সকালে।
রবিবার রাতটা নির্ঘুমে কেটেছে চিরঞ্জিতের মা রিনাদেবীর। রাতে খাওয়া-দাওয়াও করেননি। বললেন, “ছেলে মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে। এ কথা জেনে কী ভাবে খাব! ঘুমোবই বা কেমন করে!”
কী ভাবে পেয়েছিলেন ছেলের খবর? চিরঞ্জিতের দাদা সাহেব জানালেন, প্রথমে টেলিফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। মিনিট পনেরো পরে ফোন ধরে ভাই। পাশ থেকে শুধুই চিৎকারের শব্দ ভেসে আসছিল। বাড়ির লোকের উদ্বেগের কথা ভেবে জখম হওয়ার খবর তখন জানাননি চিরঞ্জিৎ। ফিরলেন কী ভাবে? চিরঞ্জিতের অভিজ্ঞতা তিক্ত। জানালেন, রংপো থেকে শিলিগুড়ি গাড়ি-ভাড়া ২০০ টাকা। কিন্তু সোমবার তাঁকে গুনতে হয়েছে ১২০০ টাকা। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেনে শিয়ালদহ হয়ে বনগাঁর বাড়িতে এসেছেন।
বাড়ি ফিরে স্বস্তি পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সন্দীপনের মৃত্যুতে মন ভারাক্রান্ত বছর কুড়ির তরুণ চিরঞ্জিতের। বললেন, “মৃত্যু এত কাছ থেকে কখনও দেখিনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.