দুই উপাচার্যের ইস্তফায় কাজের পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন
নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মণিমালা দাস পদত্যাগ করেছিলেন জুলাইয়ে।
সেপ্টেম্বরে ইস্তফা দিলেন বর্ধমান ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা।
রাজ্যে সরকার বদলের পরে তিন-তিন জন উপাচার্যের ইস্তফা কিছু জল্পনা উস্কে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষার পরিবেশ নিয়েও।
মঙ্গলবার রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুব্রত পাল লিখেছেন, ‘এক জন শিক্ষাবিদের পক্ষে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন ক্রমশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’ তাই আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নন্দদুলাল পারিয়াও কয়েক দিন আগে আচার্যের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে তাতে নন্দদুলালবাবু জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত কারণে তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান। সুব্রতবাবুর কার্যকাল ছিল আগামী এপ্রিল পর্যন্ত আর নন্দদুলালবাবুর মেয়াদ ছিল আরও তিন বছর।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য বিদ্যাসাগর ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ইস্তফা নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাননি। নন্দদুলালবাবুর ইস্তফা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েই পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন উনি।”
আর বর্ধমানের উপাচার্য?
মন্ত্রী বলেন, “ওঁর ইস্তফা নিয়ে কিছু বলতে পারব না।”
রাজনৈতিক পালাবদলের পরে যে-সব ক্ষেত্রে রদবদলের জোরালো সম্ভাবনা ছিল, শিক্ষা তার অন্যতম। নয়া সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার সংস্কারের জন্য গঠিত কমিটি বিভিন্ন সময়েই বাম আমলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নিয়ে বারবার সমালোচনা করেছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের অনেকেই আলিমুদ্দিনের অনুগত এমন অভিযোগও শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখে। কিন্তু রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আইনে উপাচার্যদের সরিয়ে দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই।
সুব্রত পাল নন্দদুলাল পারিয়া
উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আইনে বেশ কিছু রদবদলের প্রস্তাব দিয়েছে। সেটি কার্যকর হলে মেয়াদ ফুরোনোর আগেই উপাচার্যদের সরিয়ে দিতে পারবে রাজ্য সরকার। শীঘ্রই অর্ডিন্যান্স জারি করে সরকার বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ওই সব পরিবর্তন বলবৎ করতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। ওয়াকিবহাল অনেকেই মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত উপাচার্যেরা হয়তো সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন। তাই সরকার সরিয়ে দেওয়ার আগেই অব্যাহতি চাইছেন কেউ কেউ।
তবে বর্ধমানের উপাচার্য সুব্রতবাবু এই ব্যাপারে খুব একটা ধোঁয়াশা রাখেননি। এ দিন তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমাল লেগেই আছে। এক জন শিক্ষাবিদ হিসেবে এই অপ্রয়োজনীয় ঝামেলার মধ্যে থেকে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” সেই সঙ্গে সুব্রতবাবুর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ‘স্বাভাবিক পরিবেশ’ নেই, সে-কথা জানানোর জন্য বারবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। উপাচার্যের দাবি, মন্ত্রীকে বারবার টেলিফোন করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। সাক্ষাতের চেষ্টা করেও সুযোগ মেলেনি। এই নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “আমাকে কিন্তু টেলিফোনে পাওয়া যায়।”
গত ১১ অগস্ট রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি তাঁকে জানান সুব্রতবাবু। সেই আলোচনায় ‘আশ্বস্ত’ হয়ে পরের দিন, ১২ অগস্ট কাজে যোগ দেন তিনি। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির বদল হয়নি। সম্প্রতি রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে জানান, স্থানীয় বিধায়ক হিসেবে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি সেল গড়েছেন। কয়েক জনের নাম রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠিয়ে দেন তিনি। সেই ঘটনায় বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন সুব্রতবাবু। এমনও বলেছিলেন, প্রয়োজনে তিনি পদত্যাগ করতেও পিছপা হবেন না।
তার পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। বিজ্ঞান শাখার সচিব, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার কিছু দুষ্কৃতীর হাতে প্রহৃত হন। অভিযোগ, যাঁরা শুভপ্রসাদবাবুকে মারধর করেছে, তারা শাসক দল তৃণমূলের সমর্থক। সেই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এ-পর্যন্ত কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, উপাচার্যের ইস্তফার সিদ্ধান্তে ইন্ধন জুগিয়েছে ওই ঘটনাও।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদা্যলয়ের উপাচার্য অবশ্য জানিয়েছেন, নিতান্ত ব্যক্তিগত কারণেই তিনি পদত্যাগ করছেন। তিনি গবেষণায় মন দিতে চান বলেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু চার বছরের মেয়াদে যিনি উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন, মাত্র এক বছর পরেই তিনি তা ছেড়ে দিতে চাইবেন কেন এই নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে।
বিগত বাম সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরীর মতে, নতুন সরকার এসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্বশাসন দেওয়ার নামে যে-নমুনা দেখাচ্ছে, তাতে উপাচার্যদের এই ধরনের সিদ্ধান্ত বিস্ময়ের নয়। তিনি বলেন, “রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আইন বহাল হয়েছে রাজ্যপালের সম্মতিতেই। আবার রাজ্যপালই আচার্য হিসেবে তাকে পঙ্গু করে রেখেছেন। গত জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন কাজ ছাড়া সব বন্ধ। এমনকী নির্বাচনও বন্ধ, যেটা রুটিন কাজের মধ্যেই পড়ে।”
মঙ্গলবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট ও সিন্ডিকেটের মেয়াদ ফুরিয়েছে। আগের দিন অর্থাৎ সোমবারেই শেষ হয়ে গিয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল এবং কোর্টের মেয়াদও। এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়, জানতে চেয়ে আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.