দল ছাড়লেন পুরুলিয়ার পাড়া কেন্দ্রের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক মিনু বাউরি। মঙ্গলবার তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গেই এ দিন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্য নিতু বাউরি। দল ছাড়ার কারণ হিসাবে দু’জনেরই দাবি, সিপিএমের মধ্যে ‘স্বজনপোষণ’, দরিদ্র তফসিলি জাতির প্রতি ‘অবহেলা’ করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি বলে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মৌতোড় গ্রামের বাসিন্দা মিনু বাউরি সিপিএমের দলীয় সদস্য হওয়ার পাশাপাশি দলের যুব ফ্রন্টের জেলা সহ-সম্পাদিকাও ছিলেন। মৌতোড়-মঙ্গলদা পঞ্চায়েতের প্রধান থাকাকালীন ২০০৯ সালে পাড়া কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হন। কিন্তু এ বছর বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে দল প্রার্থী করেনি। তফসিলি জাতির জন্য পাড়া কেন্দ্র সংরক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও মূলত দলীয় ‘দ্বন্দ্বের’ পরিণতিতেই মিনুদেবীকে টিকিট দেওয়া হয়নি বলে সিপিএম সূত্রের খবর। এর পরে সক্রিয় ভাবে নির্বাচনী কাজকর্ম থেকে নিজেকে দূরেই সরিয়ে রাখেন মিনুদেবী। এ দিনও নিজের ক্ষোভ গোপন রাখেননি। বলেছেন, “সিপিএমের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করার পরেও প্রাপ্য মর্যাদা পাইনি।”
এ দিন রঘুনাথপুর ২ ব্লকের বড়রা গ্রামে দলীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে মিনুদেবী ও নিতু বাউরির হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। বস্তুত, বিধানসভা ভোটের পরে পুরুলিয়ায় সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার অনেক ঘটনা ঘটলেও প্রাক্তন বিধায়কের দলত্যাগ এই প্রথম। শান্তিরামবাবুর দাবি, “সিপিএমের সংগঠনে ধস নেমেছে। তফসিলি জাতির দুই জনপ্রতিনিধির তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ঘটনাই প্রমাণ করছে, ওঁরা তফসিলি জাতি ও এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চাইলেও সিপিএম নেতৃত্ব তাতে বাধা দিয়েছেন। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা থেকেই ওঁরা আমাদের দলে এসেছেন।” মিনুদেবীকে দলের জেলা কমিটিতে নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীনবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “ওই দু’জন মনে করেছেন তৃণমূলে যোগ দেবেন, তাই দিয়েছেন।” এ দিন পুরুলিয়ায় দলের জেলা কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাক্তন বিধায়কের দলত্যাগের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া বলেন, “ওঁর দল ছাড়া থেকেই পরিষ্কার, ওঁকে প্রার্থী না করার সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক ছিল। কমিউনিস্ট পার্টিতে কোনও ব্যক্তির ইচ্ছায় প্রার্থী বাছাই হয় না। দলই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।” দলের ক্ষতি হবে না দাবি করে বাসুদেববাবুর মন্তব্য, “বরং দল শক্তিশালীই হবে।” |