পুজোর আগেই শুরু হবে পঠনপাঠন
প্রস্তুতি চলছিল আগে থেকেই। স্নাতকোত্তর স্তরের বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তির কাজ শেষ। বাকি ছিল প্রস্তাবিত জমিতে শিলান্যাস। সোমবার তাও সাড়ম্বরে হয়ে গেল। আর এক সপ্তাহ পরেই সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা শুরু হতে চলেছে। ‘পিছিয়ে পড়া জেলার’ তকমা ঝেড়ে সামনের দিকে কয়েক কদম এগিয়ে গেল পুরুলিয়া জেলা।
পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে পুরুলিয়া-বোকারো ৩২ জাতীয় সড়কের পাশে, সৈনিক স্কুলের কাছে জগন্নাথ কিশোর কলেজের দান করা জমিতে নির্মাণ হতে চলেছে সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়। জমির পরিমাণ ১২.৮৪ একর। সীমানা প্রাচীর তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন তৈরি করার জন্য রাজ্য সরকার দু’ধাপে মোট ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। সেই নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুরুলিয়া শহরের জগন্নাথ কিশোর কলেজ ও বিবেকনগরে প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের সভাঘরে এবং রঘুনাথপুর কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ‘ক্যাম্পাস’ চালু করা হয়েছে। সেখানে কলা বিভাগের বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, সংস্কৃত ও শিক্ষা বিজ্ঞান বিষয়ে পঠন পাঠন শুরু হতে চলেছে। সেই সঙ্গে, বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও বানিজ্য বিভাগের হিসাবশাস্ত্র পড়ানো হবে। ইতিমধ্যেই ছাত্রছাত্রী ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৩০০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর বিভাগ যাত্রা শুরু করতে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুরের ‘ক্যাম্পাস’গুলিতে পঠন-পাঠন শুরু হতে চলেছে।
এখানেই হবে ভবন। ছবি: সুজিত মাহাতো।
পুরুলিয়া জেলার ১৯টি ডিগ্রি কলেজ, ১টি সরকারি ও ৩টি বেসরকারি বিএড কলেজ এবং ১টি বেসরকারি কারিগরি কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় এসেছে। বিশ্বিদ্যালয়ের উপাচার্য তপতী মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই জেলার ২৪টি কলেজ নিয়ে এই বিশ্বিদ্যালয় গড়ে উঠল। আগামী দিনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রযুক্তি বিদ্যায় পড়াশোনা করার সুযোগ তৈরি হবে।” শিলান্যাস করতে এসে উচ্চিশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “আগামী দিনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আমরা একটি আইন কলেজ তৈরি করতে চাই। জলের কম ব্যবহারে চাষ করা নিয়ে একটি গবেষণা কেন্দ্র খোলারও ইচ্ছা রয়েছে।” তিনি জানান, এখানকার উপজাতি ও জনজাতি এবং তাঁদের কৃষ্টি নিয়েও গবেষণার কাজ হবে। স্থানীয় শিল্প কলা, তসর, গালা শিল্প ও মুখোশ শিল্প বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ থাকবে বলে মন্ত্রী আশ্বাস দেন।
পুরুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ নরহরি মাহাতো ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আর্জি রাখেন, “জেলার বহু মানুষ কুড়মালি ভাষায় কথা বলেন। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কুড়মালি ভাষায় পঠনপাঠন শুরু করা হোক।” মন্ত্রী জানান, কোন ভাষায় পড়া হবে- তা ঠিক করতে অভিরূপ সরকারের নেতৃত্বে একটি কমিশন রয়েছে। ওই কমিশনের সদস্যেরা উপাচার্যের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকে বসবেন। তবে সাঁওতালি ভাষাকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া হবে।
নরহরিবাবু বলেন, “যে জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে তার উল্টো দিকে সৈনিক স্কুলের লাগোয়া প্রতিরক্ষা দফতরের অনেকটা জমি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রতিরক্ষা দফতরের অনুমতি নিয়ে ওই জায়গায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হোক।” বাঘমুণ্ডির বিধায়ক কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো জানান, ওই জমির জন্য তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি ও অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে অনুরোধ করবেন। তিনি বলেন, “আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে অনেক আন্দোলন করেছিলাম। আজ স্বপ্ন পূরণ হল।” বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন করেছিল বাম সরকার। বাঁকুড়া-পুরুলিয়া সীমান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি খোঁজা শুরু হয়। কিন্তু, এ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। বাঁকুড়া সরে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পুরুলিয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলাবাসী মনে করছেন, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়- পুজোর উপহার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.