বাংলাদেশি পাচারকারীদের সঙ্গে গোলমালের জের
ট্রাকচালকদের তাণ্ডব পেট্রাপোলে
ণ্ডগোলের সূত্রপাত, বাংলাদেশি ফল পাচারকারীদের সঙ্গে ট্রাক চালকদের মধ্যে। যার রেশ ছড়িয়ে পড়ল গোটা পেট্রাপোল সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউস কর্পোরেশনের পার্কিং এলাকায়। ভাঙচুর, মারধরে জড়িয়ে পড়েন ট্রাক চালকেরা। পরে পুলিশ, বিএসএফ, কমব্যাট ফোর্স এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ দিন গণ্ডগোল ছড়ায়, তা নিয়ে নানা মহল থেকে দীর্ঘ দিন ধরে বিস্তর অভিযোগ উঠছিল। বাংলাদেশ থেকে পাচারকারীরা সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউসের পার্কিং এলাকাকে ব্যবহার করে অবাধে যাতায়াত করে বলে অভিযোগ। ফল-সহ নানা জিনিস এ ভাবে পাচার করা হয়। হাজার হাজার ট্রাক ও চালক-খালাসির ভিড়ে বিএসএফ কিংবা কর্পোরেশনের নিজস্ব রক্ষীরা সব দিকে নজর রাখতে পারেন না। আবার বিএসএফ এবং সরকারি কর্মীদের একাংশ পাচারকারীদের মদত দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে বারে বারে।
ভাঙচুরের পরে ঘটনাস্থলে কমব্যাট ফোর্স।-নিজস্ব চিত্র।
কী হয়েছিল মঙ্গলবার?
বিকেল তখন প্রায় সাড়ে ৫টা। পার্কিং এলাকায় একটি ট্রাকে এক বাংলাদেশি ফল পাচারকারী ফলমূল চাপিয়ে পাচারের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ। বেঁকে বসেন ট্রাকের চালক। মালও ফেরত দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। পেট্রাপোল বন্দর ও ওয়্যারহাউস কর্পোরেশন সূত্রের খবর, বাংলাদেশি পাচারকারী সে সময়ে লোকজন ডেকে আনে। তাদেরই এক জনের ছোড়া ইটের ঘায়ে এক ট্রাক চালকের মাথা ফাটে। তত ক্ষণে চালকদের পক্ষেও লোক জন জড়ো হয়েছিল। দু’পক্ষের মধ্যে খানিকটা হাতাহাতি হয়। উত্তেজিত ট্রাক চালকদের রাগ গিয়ে পড়ে সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউস কর্তৃপক্ষের উপরে। পার্কিং গেট বন্ধ করে দেন চালকেরা। এক নিরাপত্তা রক্ষীকে মারধর করা হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক সজল পালকে তাড়া করেন চালকেরা। তাঁর গেঞ্জি ছিঁড়ে যায়। সজলবাবু আশ্রয় নেন ওয়্যারহাউসের ম্যানেজার হীরেন্দ্রনাথ বসুর অফিসে। দফতরের অন্য একটি ঘরে ভাঙচুর চালান চালকেরা।
পরিস্থিতি ঘোরাল বুঝে তত ক্ষণে বিএসএফ, পুলিশকে খবর দিয়েছেন হীরেন্দ্রনাথবাবু। তারা আসার আগেই শুল্ক দফতরের ঘরে ঢুকে এক ইন্সপেক্টরকে নিগ্রহ করা হয়। ভাঙচুরও চলে। পরে পুলিশ, কম্যবাট ফোর্স, বিএসএফের বিশাল বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বনগাঁর এসডিপিও বিমলকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তিন জন ট্রাক চালককে আটক করা হয়েছে। সকলেই অবশ্য জখম। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও হয়েছে।”
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যান্ড স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “বাংলাদেশিরা পার্কিং এলাকাকে ব্যবহার করে অবৈধ ভাবে যাতায়াত করে। পাচারও চলে। আমরা বহু বার এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এতে দেশের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে।” প্রশাসনের তরফে কোনও সদর্থক ভূমিকা নেওয়া হয়নি বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, শ্রমিক নেতা সমীর ঘোষচৌধুরীর কথায়, “দীর্ঘ দিন ধরে এই পরিস্থিতি চলছে। এখন তা ভয়াবহ আকার নিয়েছে।” বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ ক’দিন আগেই বিষয়টি লিখিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
গত মাসের ২৭ তারিখ পেট্রাপোলে সুসংহত চেকপোস্ট তৈরির প্রকল্পের শিলান্যাস করতে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাকে উপলক্ষ করে সে সময়ে পার্কিং এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ রুখতে কাঁটাতার লাগানো হয়েছিল। ইতিমধ্যেই সেই কাঁটাতার কেটে ফের অবৈধ চলাচল শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ।
এ ধরনের ঘটনা যে আকছার ঘটছে, সে কথা মেনে নিয়েছেন হীরেন্দ্রনাথবাবুও। তিনি বলেন, “পার্কিং এলাকায় নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী ৩৭ জন। পালা করে ১০-১২ জন ডিউটি করেন। কিন্তু এলাকাটি অনেক বড়। নজর এড়িয়ে অনেকে ঢুকে পড়ে। এটা বন্ধ করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু ‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’ আছে বলে ধারণা সরকারি কর্তাদের একাংশের। প্রশাসন, বিএসএফ এবং ওয়্যারহাউস কর্তৃপক্ষের মুষ্টিমেয় কর্মীর মদতে পাচার এবং অনুপ্রবেশ চলে বলে মনে করেন তাঁরা। বনগাঁর মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.