‘সন্ত্রাস’ করে এক সময় হাসনাবাদে এলাকা দখলে অভিযুক্ত বাবু মাস্টারকে অবশেষে গ্রেফতার করল পুলিশ।
হাসনাবাদের ভবানীপুরের মডেলবাজারের বাসিন্দা ফিরোজ কামাল মনি ওরফে বাবু মাস্টারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে পুলিশের খাতায় খুন-জখম, ধর্ষণ, মারামারি-সহ একাধিক অভিযোগ ছিল। পেশায় মডেলবাজারের একটি হাইস্কুলের শিক্ষক বাবুর দাপটে এলাকার সাধারণ মানুষ ‘অতিষ্ঠ’ ছিলেন। অভিযোগ, এক সময়ে সিপিএমের ‘ছত্রছায়া’য় থাকা বাবুর নেতৃত্বে এলাকার ‘দখল’ নিয়েছিলেন বামপন্থীরা। ঠিক যেমন শাসনে প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক মজিদ মাস্টারকে সামনে রেখে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ ভেড়ি এলাকায় ‘আধিপত্য’ বিস্তার করা হয়েছিল। এ হেন বাবু মাস্টার ধরা পড়ায় স্বাভাবিক ভাবেই এলাকায় স্বস্তি এসেছে। |
এত দিন পুলিশের চোখে ‘ফেরার’ ছিলেন বাবু। সোমবার হাসনাবাদ থানার ওসি অনিমেষ সিংহরায়ের কাছে খবর আসে, মধ্যমগ্রামে বাদু রোডে হুমাইপুরের কাছে এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন মাঝবয়সী ওই ব্যক্তি। সেই মতো রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বারাসত থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হাসনাবাদের পুলিশ সেখানে হানা দেয়। গ্রেফতার করে রাতেই বাবুকে আনা হয় হাসনাবাদে। তাঁকে জেরা করে আমলানি থেকে একটি রিভলভার এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। এসডিপিও (বসিরহাট) আনন্দ সরকার বলেন, “একাধিক সংঘর্ষ, ধর্ষণ, খুনের ঘটনায় বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। ২০-২২টি মামলা ঝুলছে তাঁর নামে।” বাবুকে গ্রেফতারের বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কাছেও গুরুত্ব পাচ্ছিল বলে জেলা পুলিশ সূত্রের খবর। যদিও ধৃত বাবু এ দিন দাবি করেন, তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
বস্তুত, দলের সঙ্গে নানা মামলায় অভিযুক্ত বাবুর ‘ঘনিষ্ঠতা’ মেনে নিতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্বের বড় অংশ। যদিও বাবু ‘তৃণমূল নেতা’ হিসাবে এলাকায় ‘স্বীকৃতি’ পেতে উঠেপড়ে লাগেন। ‘রাজনৈতিক’ সভাও করেন হাসনাবাদে। পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের যে অংশটি সরব হয়েছিল, তাঁদের কয়েক জনকে মারধর করার অভিযোগও ওঠে বাবুর বিরুদ্ধে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু ঘটনার কথা জানতে পেরে বাবু মাস্টার ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের উদ্দেশে ‘বার্তা’ দেন, জোর করে কেউ দলে ঢুকতে চাইলে তা গ্রাহ্য করা হবে না। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতারা।
এর পরেও দাপট কমেনি বাবুর। কিছু দিন আগেই বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের আসন্ন উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়ের সামনেই হেনস্থা হতে হয় বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুরুল ইসলামকে। তাঁর বিরুদ্ধে দলেরই কিছু নেতা-কর্মী অভিযোগ তোলেন, বাবুকে ‘প্রশ্রয়’ দিচ্ছেন নুরুল। |