শিলদা শিবিরে এ বার বিক্ষোভ পুলিশকর্মীদের।
রাজ্য পুলিশের কয়েক জন আইআরবি জওয়ান শিবিরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই ছুটিতে গিয়েছিলেন বলে সোমবার পরিদর্শনে এসে জানতে পারেন ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বিনীত গোয়েল। ১১ জওয়ানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেন তিনি। ওই ১১ জনকে শো-কজ করা হয়। আর তার জেরেই এ দিন সকাল থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ। জওয়ানেরা দাবি করেন, কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে তাঁরা ‘বৃহত্তর আন্দোলন’-এর পথে যাবেন। শিবিরে গিয়ে জওয়ানদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিনপুর থানার আইসি অশোক মিশ্রও। পরে ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) অলোক রাজোরিয়া গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার গৌরব শর্মা বলেন, “ওখানে একটা সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু সেটা আরক্ষা বাহিনীর নিজস্ব ব্যাপার। এ ব্যাপারে মন্তব্য করব না।”
২০১০-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি মাওবাদীরা হামলা চালিয়েছিল এই শিলদা শিবিরে। তখন সেখানে ছিলেন ইএফআর জওয়ানেরা। হামলায় ২৪ জন ইএফআর জওয়ান নিহত হন। এ যাবত এ রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে সেটাই সর্ববৃহৎ মাওবাদী হামলা। সে সময়ে শিবিরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে খড়্গপুরের সালুয়ায় ইএফআর সদর দফতরে তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন জওয়ানদের পরিজনেরা। বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যও। এমনকী, বাহিনীর স্পেশাল আইজি বিনয় চক্রবর্তী পর্যন্ত মুখে কালো কাপড় বেঁধে বেনজির সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। পরে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন নিজে জওয়ান ও তাঁদের পরিজনেদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের দাবি-অভিযোগের বিহিতের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়।
প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের বিক্ষোভ রাজ্য প্রশাসনের পক্ষে সে বারও ছিল চরম অস্বস্তির। এ বারও শিলদার মতো স্পর্শকাতর এলাকার শিবিরে বিক্ষোভের ঘটনায় প্রশাসনিক মহলে বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে। জওয়ানদের বক্তব্য, একটানা কাজের মাঝে ছুটি চেয়েও না পেয়ে অনেকেই মানসিক অবসাদে ভোগেন। কর্তৃপক্ষের সে দিকে হুঁশ নেই।
শিলদা-শিবিরের বাইরে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার বিভিন্ন থানায় কর্মরত কনস্টেবল, অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর এবং সাব-ইনস্পেক্টর এবং তাঁদের পরিজনেদের মধ্যে আবার সরকারি আর একটি নির্দেশকে ঘিরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। গত ২৬ অগস্ট ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ)-এর ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার কর্মীরা এখন থেকে অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পরিবর্তে নবগঠিত ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার কর্মী হিসেবেই বিবেচিত হবেন। এর ফলে ৮টি থানায় বর্তমানে কর্মরত ৫৫ জন এসআই, ৬৬ জন এএসআই, ৩৭৮ জন কনস্টেবল, ১৭ জন মহিলা কনস্টেবল ও ১৩ জন পুলিশ-ড্রাইভারকে ওই ৮টি থানার মধ্যেই ঘুরে-ফিরে কাজ করতে হবে।
কিন্তু সরকারি ভাবেই ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ৮টি থানাই ‘মাওবাদী প্রভাবিত’। সব সময়েই চাপের মধ্যে থাকেন পুলিশকর্মীরা। এত দিন পশ্চিম মেদিনীপুর অবিভক্ত জেলা হওয়ায় মাওবাদী এলাকায় দু’বছর কাটিয়ে জেলার মধ্যেই অপেক্ষাকৃত কম চাপের জায়গায় ‘পোস্টিং’ পেতে পারতেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু নতুন নির্দেশের ফলে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলাতেই আটকে থাকতে হবে তাঁদের। এর প্রতিকার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন পুলিশকর্মীদের পরিজনেরা। তাঁরা চিঠি পাঠানো শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের আবেদন, ঝাড়গ্রামে কর্মরত পুলিশকর্মীদের অন্তত পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ জেলাতেও বদলির সুযোগ রাখা হোক। |