বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের জরিমানা বেড়ে দাঁড়াল ৯ লক্ষ টাকা।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গিরিশ গুপ্ত ও বিচারপতি রঘুনাথ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার একটি রায়ে জানায়, প্রতারিতাকে ৯ লক্ষ টাকা দেবে প্রতারক। মেয়েটির নামে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার ওই টাকা ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় সর্বোচ্চ সুদের প্রকল্পে জমা রাখবেন। পাঁচ বছরের মেয়াদে ওই টাকা জমা করতে হবে। মহিলা সুদের টাকা পেতে থাকবেন। যদি কখনও থোক টাকার প্রয়োজন হয়, তা হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে তা তোলা যাবে।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সহবাস করে বিয়ে না করলে, আইনের চোখে তাকে ধর্ষণ বলা হত দীর্ঘ দিন। কিন্তু পরবর্তী কালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, প্রাপ্তবয়স্ক দুই নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মতিতে সহবাস করলে তা ধর্ষণ নয়। তবে সেখানে বিয়ের প্রতিশ্রুতি না রাখলে, তা প্রতারণার পর্যায়ে পড়বে। হাইকোর্ট সেই মত ধর্ষণের দায় থেকে মুক্ত করে শুধু প্রতারণার শাস্তিই দিয়েছেন
পশ্চিম মেদিনীপুর আদালত অবশ্য এর আগে অভিযুক্তকে ধর্ষণের ও প্রতারণার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। দোষী ব্যক্তি নিম্ন আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে আপিল মামলা করেন। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ধর্ষণের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে প্রতারণার শাস্তি বহাল রাখল। শুধু নিম্ন আদালত প্রায় ২০ বছর আগে যে এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, হাইকোর্ট তা বাড়িয়ে ৯ লক্ষ টাকা করল। ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, কুড়ি বছর আগের এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এখন ৯ লক্ষ টাকা বলে ধরা হয়েছে।
নিম্ন আদালতে এই মামলা শুরু হয় ১৯৯০ সালের শেষে। মেয়েটির বাবা পেশায় পুলিশ কনস্টেবল। তিনি আদালতকে জানান, মেয়ে তার স্কুলের এক শিক্ষিকার বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট টিউশন নিত। এক দিন যখন সে পড়তে যায়, তখন শিক্ষিকা বাড়িতে ছিলেন না। শিক্ষিকার ছেলে বাড়িতে ছিল। সে দিনই মেয়েটি ধর্ষিতা হয়। ঘটনাটি দুই পরিবারে জানাজানি হলে অভিভাবকেরা তাদের পড়াশোনার শেষে বিয়ে দিতে সম্মত হন। এর পর থেকে দু’জনের মেলামেশা বাড়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরে গ্রামে ফিরে ছেলেটি মেয়েটিকে জানায়, তাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। এর পরে পুলিশের কাছে মেয়েটি ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগ জানিয়ে এফআইআর দায়ের করে।
১৯৯০ থেকে ২০১১। সে দিনের কিশোরী মেয়ে এখন নিজেও পুলিশে চাকরি করা মহিলা। বিবাহিতা। কিন্তু লড়াইটা থামাননি। ২০০৮ সালে নিম্ন আদালতে রায় বেরোয়। আসামি আপিল করে হাইকোর্টে। এ দিন হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছে, এই জাতীয় প্রতারণায় রক্ষাকবচের ব্যবস্থা না থাকলে প্রতারিতার সংখ্যা প্রতি দিন বাড়বে। রায় দেওয়ার আগেই ছেলেটিকে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে ১০ লক্ষ টাকা জমা দিতে বলেছিল হাইকোর্ট। রায় বেরনোর পরে ছেলেটিকে ১ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। |