মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শিল্পশহর হলদিয়ায় ৫ জনের মৃত্যুর পরে প্রশ্ন উঠছে শহরের সামগ্রিক যান-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়েই। অভিযোগ, তেল ট্যাঙ্কারগুলি কোনও বিধি-নিষেধ মানে না। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা হয়। সব জেনেশুনেও উদাসীন প্রশাসন।
সোমবার রাতে নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি তেল ট্যাঙ্কারের ধাক্কাতেই প্রাণ গিয়েছে পাঁচ জনের। মৃতেরা হলেন, নন্দীগ্রামের তৃপ্তি দিন্ডা, সুতাহাটার মৌমিতা দাস, সৈয়দ নূর আলি, গোবিন্দপুরের সাবিত্রী বেরা, হলদিয়ার গাঁধীনগরের রাজু মণ্ডল। জখম ১৭ জনের চিকিৎসা চলছে তমলুক হাসপাতালে। গুরুতর ৫ জনকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। হলদিয়ার এসডিপিও অমিতাভ মাইতি জানান, বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে সোমবার রাতে মানুষের ঢল নেমেছিল শহরের পথে। দুর্গাচকের স্টেট ব্যাঙ্ক রেলগেট থেকে সিপিটি মার্কেট পর্যন্ত বসেছিল মেলা। ভিড়ের মধ্যে মোটর সাইকেল, রিকশা সব মিলিয়ে যানজটের পরিস্থিতি। তারই মধ্যে তৈল শোধনাগারের দিক থেকে আসা তেল ট্যাঙ্কারটি রেলগেট থেকে ৫০ মিটার দূরে নিয়ন্ত্রণ হারায়। প্রথমে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা মারে। তারপর ধাক্কা মারে সামনে থাকা ফাঁকা একটি ট্যাঙ্কারে। তারপর একের পর এক পথচারীকে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় ট্যাঙ্কারটি। গোটা এলাকায় তখন আতঙ্ক। মৃত ও আহতের উদ্ধারে হাত লাগান এলাকার মানুষ। জখমদের হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে যান সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, বিধায়ক শিউলি সাহা। |
ট্রাফিক পুলিশবিহীন মোহনা মার্কেট। ছবি: আরিফ ইকবাল খান |
মঙ্গলবার হাসপাতাল মর্গে ১০ বছরের মৌমিতার দেহ নিতে এসেছিলেন কাকা জগদীশ দাস। কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না শোকার্ত জগদীশবাবু। মামা নূর আলির দেহ নিতে আসা আমজাদ হোসেনও শোকস্তব্ধ। সাবিত্রীদেবীর দেহ নিয়ে দেওর চন্দন বেরার হাহাকার, “পুজোর আগে আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।”
বেআইনি পার্কিয়ের জেরে যানজট ও বিধি নিষেধ না মানায় দুর্ঘটনা হলদিয়ার পুরনো সমস্যা। সোমবার রাতে রাস্তায় অগুনতি মানুষ থাকলেও ছিল না কোনও পুলিশ। হলদিয়ার এসডিপিও অমিতাভ মাইতি সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বলেন, “হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালের ব্যবস্থা করলেও আমরা ট্রাফিক পুলিশ দিতে পারিনি। বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য জেলার বিভিন্ন থানা থেকে কিছু কনস্টেবল পেয়েছিলাম। তাতে অবশ্য কোনও লাভ হয়নি।” শিল্পাঞ্চলে বড় ট্রাক-ট্যাঙ্কারের কোনও টার্মিনাল নেই। ফলে, পার্কিং সমস্যা মেটার আশা অমিতাভবাবুও দেখছেন না। |