চোখে মুখে চরম বিরক্তির ছাপ। মঙ্গলবার সকালের কাঠফাটা রোদ্দুরে যুবভারতীর কৃত্রিম ঘাস থেকে আসা রাবার পোড়া গন্ধে যখন নাক সিঁটকোচ্ছেন বেশ কিছু কচিকাঁচার দল, তখন সাইডলাইনের ধারে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছেন অ্যালান গাও। গোটা লাল-হলুদ দল অনুশীলনে মগ্ন। আর তিনি কখনও একা একা চক্কর খাচ্ছেন যুবভারতীতে। কখনও পা দোলাচ্ছেন রিজার্ভ বেঞ্চে বসে। কী করার, বুধবার ফেডারেশন কাপে ইস্টবেঙ্গলের মহাগুরুত্বপূর্ণ ডেম্পো ম্যাচে গাও যে খেলতে পারবেন না! কোনও রাখ-ঢাক না রেখেই নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন, “আমাকে আগের ম্যাচে ইচ্ছে করে কার্ড দেখানো হয়েছে। উল্টে পেনাল্টিটাও দিল না। যত বার ঘটনাটা মনে পড়ছে, তত বার রাগে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।” |
মাঠের বাইরে ফুঁসছেন গাও। মাঠের ভিতরে ফুটছেন ওপারা-টোলগে-পেন। গত বছর আই লিগের দু’টো ম্যাচেই ডেম্পোকে হারিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। কোচ ট্রেভর মর্গ্যান অবশ্য পরিসংখ্যানের ফাঁদে পা দিতে নারাজ। বরং শুধুই আগামী নিয়ে সতর্ক থাকতে চান তিনি। অনুশীলনের পর লাল-হলুদ কোচ বললেন, “যা ঘটে গিয়েছে, তা এখন ইতিহাস। ও সব নিয়ে কোনও ভাবনা চিন্তা করতে চাই না। তা ছাড়া আমি পরিসংখ্যানে বিশ্বাস করি না। গত বার মহমেডানকে পাঁচ গোলে হারিয়েছিলাম। এ বার ড্র হল। ফুটবলে ভবিষ্যদ্বাণী হয় না। ডেম্পো ভাল দল। কিন্তু আমরাও জেতার জন্য তৈরি।”
এমনিতে ৪-৩-১-২ ছক বেশি পছন্দ মর্গ্যানের। কিন্তু গাওয়ের অনুপস্থিতিতে বুধবারের মরণ-বাঁচন ম্যাচে দু’রকম ছক তৈরি রাখছেন তিনি।
১) যদি বিপক্ষ এক জন স্ট্রাইকার নিয়ে নামে, তা হলে নিজের দলের ছক হবে ৩-৪-৩। সেক্ষেত্রে টোলগে-রবিন-পেনকে সামনে রেখে মাঝমাঠে হরমনজ্যোৎ, সঞ্জু, মেহতাব এবং নওবা। রক্ষণে ওপারার সঙ্গে রাজু এবং সৌমিক।
২) ডেম্পো দু’টো স্ট্রাইকার নিয়ে নামলে, ইস্টবেঙ্গল তখন ৩-৫-২। ফরোয়ার্ডে রবিন-টোলগেকে রেখে পেন মাঝমাঠে নেমে আসবেন। আর সৌমিক-নওবা রক্ষণ থেকে ওঠা-নামা করবেন। গোলে সন্দীপ। অ্যাটাকিং থার্ডে লোক বাড়ানোর লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা মর্গ্যানের।
ক্লাইম্যাক্স লরেন্স, অ্যান্টনি পেরেরা, ক্লিফোর্ড মিরান্ডার মতো নামী তারকারা ডেম্পোতে থাকলেও ইস্টবেঙ্গল শিবির স্বভাবতই বেশি সতর্ক র্যান্টি মার্টিন্সকে নিয়ে। গত বার ডেম্পোর বিরুদ্ধে দুই ম্যাচে তিন গোল করা টোলগে বলছিলেন, “র্যান্টিকে একটু দেখে খেলতে হবে আমাদের। ও কখন কী করে ফেলে বলা খুব কঠিন।” ড্রেসিংরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে রবিন সিংহ আবার বলছিলেন, “কোনও এক জন ফুটবলারকে নিয়ে আমরা ভাবছি না। তবে হ্যাঁ, র্যান্টি খুব বড় মাপের ফুটবলার। ওকেই যা একটু সাবধানে খেলতে হবে।” লাল-হলুদের প্রধান স্টপার ওপারার অবশ্য এই নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। তাঁর বরং হুঙ্কার, “বিপক্ষে কে আছে জানি না। তবে ইস্টবেঙ্গল যে আগামী তিন বছর ভারতীয় ফুটবলে রাজত্ব করবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।”
যুবভারতীতে প্র্যাক্টিস করার কথা থাকলেও ডেম্পো ফুটবলাররা ‘ক্লোজ্ড ডোর’ অনুশীলন সারলেন ময়দানের একটি মাঠে। গোপনে! সোমবার রাতেই আইএফএ-কে ডেম্পো পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিল, অনুশীলন মাঠের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নেবে। এমনকী লোকাল ম্যানেজারকেও সেই অনুশীলনে আসতে মানা করে দেন ডেম্পো কোচ মরিসিও আফোন্সো। যাতে ম্যাচের আগে র্যান্টি মার্টিন্স-কোকোদের বর্তমান অবস্থা লুকিয়ে রাখা যায়। ডেম্পো কোচ মরিসিওকে ফোনে ধরা হলে তিনি বললেন, “ম্যাচের গুরুত্ব বুঝেই এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি। ম্যাচের আগে আমরা মনোযোগ নষ্ট করতে চাই না।” তবে মহমেডান ম্যাচে যে প্রথম এগারো খেলেছেন, তাঁদের সবাইকেই ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে নামাচ্ছেন ডেম্পো কোচ।
দুই পাহাড়ি দলের ধাক্কায় ফেডারেশন কাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে মোহনবাগান। খবর শোনার পর থেকেই উৎসবের মেজাজে ডুবে ওপারা-টোলগে। মাঠে এক চিত্র সাংবাদিককে সবুজ টি শার্ট পরে ঘুরতে দেখে ওপারা তাঁকে কাছে ডেকে হাসতে হাসতে কটাক্ষ করে বললেন, “দু’টো ম্যাচেই বিদায়। ভেবেছিলাম বছরে পাঁচ বার অন্তত দেখা হবে। মরসুমের শুরুতেই একটা কমে গেল।” পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা টোলগে আবার বললেন, “সমর্থকেরা ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে। সারা বছর অপেক্ষা করে। মোহনবাগানের এই হার কলকাতা ফুটবলের জন্য লজ্জাজনক ব্যাপার।”
মোহনবাগান পারল না। ডেম্পোকে হারিয়ে কলকাতার মান বাঁচাতে পারবে কি ইস্টবেঙ্গল? উত্তর জানতে বুধবার সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।
|