নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বেলুনওয়ালাকে দেখে ঘিরে ধরেছিল বেশ কয়েকটি শিশু। তাদের আবদার মতো বিভিন্ন রঙের বেলুন গ্যাস ভরে ফুলিয়ে দিচ্ছিলেন বেলুনওয়ালা। আচমকাই বিকট শব্দে বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডারটি ফেটে গেল। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার চারদিকে ছিটকে পড়ল বাচ্চারা। গুরুতর জখম হলেন বেলুন বিক্রেতাও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে, শিবপুরের কাজী পাড়ায়।
|
বিস্ফোরণ হওয়ার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশি-তদন্ত। (ডান দিকে) মঙ্গলবার, হাওড়ায়। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ কাজী পাড়ার সফি আলম লেনে বেলুন বিক্রি করছিলেন স্থানীয় যুবক সন্দীপ সাউ। তিনি পেশায় কন্ডাক্টর। তাঁর মামা বেলুন বিক্রি করেন। তিনি দেশে যাওয়ায় এ দিন সন্দীপই এলাকায় বেলুন বিক্রি করতে বেরোন। সন্ধ্যায় সফি আলম লেনে এলে তাঁকে ঘিরে ধরে বেলুন কিনছিল স্থানীয় বাচ্চারা। কয়েক জন বেলুন নিয়ে চলে গেলেও থেকে গিয়েছিল ৫ থেকে ৯ বছরের এগারো জন। আচমকাই হাইড্রোজেন গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডারটি প্রচণ্ড গরম হয়ে ফেটে যায়। লোহার টুকরোর আঘাতে জখম হয় ১১ জন শিশুই। প্রত্যেকেরই শরীর ঝলসে গিয়েছে। গুরুতর জখম হয় সন্দীপও। |
এ দিকে, বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনে বেরিয়ে আসেন আষপাশের লোকেরা। স্থানীয় ব্যবসায়ী খুরশিদ আলি বলেন, “বিকট শব্দ শুনে চমকে উঠি। প্রথমে ভেবেছিলাম টায়ার ফাটল। দোকান থেকে বেরিয়ে দেখি কতগুলি বাচ্চা রাস্তায় পড়ে ছটফট করছে।” স্থানীয়েরাই ওই শিশুদের এবং বেলুনওয়ালাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পরে আতঙ্কে এলাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, মহম্মদ ফারজান, ফৈয়াজ খান, আরজু খান, তৈফিক খান, সঞ্জীব দাস, শেখ আফারিয়া, শেখ সিমুরান নামে সাত জন শিশু ও বেলুন বিক্রেতা সন্দীপ হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি। বাকি চার শিশুকে অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছেন পরিবারের লোকেরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, জিঙ্ক ও সালফিউরিক অ্যাসিড মিশিয়ে তৈরি হাইড্রোজেন গ্যাসই বেলুনে ভরা হয়। মিশ্রণে কোনওটি পরিমাণে ভুল থাকার ফলেই গ্যাস সিলিন্ডারটি বিস্ফোরণ হয়েছে।
এ দিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জখম বাচ্চাদের পরিবারের লোকেরা তাড়াতাড়ি প্রত্যেকের চিকিৎসা করার দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “আরজু খান, তৈফিক খান ও সন্দীপের অবস্থা গুরুতর। তৈফিকের চোখে বড় রকমের আঘাত। ওকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে।” হাসপাতালে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে আরজু ও তৈফিকের মা নৌসিলি খান বলেন, “বিকট শব্দ শুনে ছুটে এসে দেখি আমার দুই ছেলে রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছে।” |