সম্পাদকীয় ২...
অপ্রস্তুত
বিধ্বংসী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত উত্তর-পূর্ব ভারত। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গও। ভূগর্ভস্থ কম্পনকেন্দ্রটির অবস্থিতি ছিল সিকিমে, সেখানে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি। এ রাজ্য তুলনায় কম ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু যে-কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাজ্যের অপ্রস্তুত চেহারাটি যেমন প্রকট হইয়া পড়ে, এ ক্ষেত্রেও তাহার ব্যত্যয় হয় নাই। উত্তরবঙ্গে বাড়ি ভাঙিয়াছে প্রচুর, ফাটল ধরিয়াছে সেতুতেও। দক্ষিণবঙ্গ কম্পনকেন্দ্র হইতে দূরে অবস্থিত হইলেও অসংখ্য বাড়িতে ছোট-বড় ফাটল দেখা দিয়াছে। দক্ষিণবঙ্গ হয়তো সে ভাবে ভূমিকম্পপ্রবণ নয়। রাজ্যের সর্বত্রই গৃহনির্মাণে যে পরিকল্পনাহীনতার ছাপ, তাহাতে ভূকম্পনিরোধক বাড়ি তৈরির প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনও প্রশ্নই এখানে ওঠে না।
যেমন দেখা গিয়াছে, ভূমিকম্পে সেই সব ইমারত অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে, যেগুলি হয় ঔপনিবেশিক আমলের স্থাপত্য নতুবা একেবারে সাম্প্রতিক প্রযুক্তিপুষ্ট বহুতল। শেষোক্ত ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা হইতে শিক্ষাগ্রহণ করিয়া এমন ভাবেই ইমারতগুলির নির্মাণ হয়, যাহাতে ভূকম্পে অল্পবিস্তর দুলিলেও শেষাবধি সেগুলি স্বস্থানেই স্থিতু হয়, হুড়মুড় করিয়া ধূলিসাৎ হয় না। ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের নিয়মানুবর্তিতা ফিরাইয়া আনিবার আশা করিয়া লাভ নাই। কিন্তু গৃহনির্মাণে, বহুতল অফিস বা আবাসন তৈরিতে ভূকম্পরোধী প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়ায় পূর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বদান দরকার। তজ্জন্য যে মানসিকতা, ভাবনা-চিন্তা দরকার, এখনও তাহা অদৃশ্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ অকস্মাৎই আসে। কিন্তু সেই আকস্মিকের জন্য প্রস্তুত থাকিবার কাজটি দৈনন্দিন।
ভূমিকম্পই হউক, আর অগ্নিসংযোগই হউক, আগে হইতে নাগরিকগণকে জানানো দরকার, বিপর্যয় ঘটিলে কী কী করণীয়। আর, বিপর্যয় ঘটিয়া যাওয়ার পর দরকার তাহার দ্রুত মোকাবিলা, ধ্বংসস্তূপে আটক আহতদের উদ্ধার, চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে সমগ্র দেশই পিছাইয়া আছে, পশ্চিমবঙ্গ আরও পিছনে। এই পশ্চাৎপদতার প্রমাণ কয় বছর আগের সুনামি বিপর্যয়ের পর মিলিয়াছিল, প্রতি বছর বন্যার সময়ও মেলে। প্রশিক্ষণবর্জিত, আধুনিক যন্ত্রপাতিহীন এবং লোকবলরহিত বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরগুলি যে কার্যকালে আর্তত্রাণে সফল হইবে না, ইহা আশ্চর্য নয়। এক দমকলের দিকে তাকাইলেই বুঝা যায়, বিপর্যয় মোকাবিলায় এ রাজ্য কী আদিম যুগে পড়িয়া আছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সাড়ে তিনশো পদ রাজ্যে শূন্য পড়িয়া আছে। ইহা যেমন অর্থহীন, তেমনই রাজ্যের রাজকোষের বর্তমান দুরবস্থার মধ্যে ওই সব শূন্য পদে লোক ঢুকাইবার প্রয়াসও কঠিন। বরং নূতন লোক না লইয়া, বিভিন্ন দফতরে যে বহুসংখ্যক কর্মহীন লোকের বাড়তি কর্মসংস্থান হইয়াছে, তাহাদের মধ্য হইতেই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মী বাছিয়া লওয়া হউক। কাজ করার জন্য দফতরকে একটি কন্ট্রোল রুম-ও দেওয়া হউক, যেখান হইতে বিপর্যয় মোকাবিলার কাজগুলির সমন্বয় সাধন করা হইবে। জেলা স্তর পর্যন্ত পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখা এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণ মারফত কর্মী-দলকে চাঙা রাখাও জরুরি। আসলে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সুষ্ঠু পরিচালন কিছুটা বিমা প্রকল্পের মতো। কখন কী ভাবে কাজে লাগিবে না জানিলেও দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকাটা বাঞ্ছনীয়, এমনকী আবশ্যিক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.