|
|
|
|
মোদীকে ঘিরে টানাপোড়েন বিজেপিতে, কংগ্রেসে স্বস্তি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
স্পেকট্রাম থেকে কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি একের পর অস্বস্তির কাঁটায় বিদ্ধ কংগ্রেসকে অবশেষে কিছুটা স্বস্তি দিল মূল প্রতিপক্ষ বিজেপিই!
লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রা বনাম নরেন্দ্র মোদীর অনশন দুই নেতার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দৌড়ে বিজেপির অন্দরমহলেই টানাপোড়েন দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। শুধু এটুকুই নয়। কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, তিন দিনের অনশনে মোদী তাঁর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার তকমা ঘোচাতে যেমন ব্যর্থ, তেমনই গুজরাতের বাইরে তাঁর ‘সদ্ভাবনার’ রাজনীতি কোনও দাগ কাটতে পারেনি। উপরন্তু মোদীকে ঘিরে এনডিএ-র অন্দরের বিভাজন ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
তাদের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের ফলে মূল প্রতিপক্ষ কংগ্রেসই যে লাভবান হচ্ছে, তা বিলক্ষণ বুঝছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আর তাই ঘরোয়া আলোচনায় অরুণ জেটলি-সুষমা স্বরাজরা আজ থেকেই বলতে শুরু করেছেন যে, নেতৃত্ব নিয়ে এই টানাপোড়েন এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। না হলে মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস প্রশ্নে সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টিই ধামাচাপা পড়ে যাবে। আর তাতে ক্ষতি বিজেপিরই।
একের পর দুর্নীতির অভিযোগের ধাক্কায় দেশ জুড়ে তাঁদের বিরুদ্ধে যে একটা হাওয়া তৈরি হয়েছে, তা এক রকম মেনেই নিচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা। এই পরিস্থিতিতে আডবাণীর ফের রথযাত্রার ঘোষণায় কিছুটা চিন্তায় ছিলেন তারা। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “কিন্তু সেই সঙ্গে এটা ভাবিনি যে, মেঘ না চাইতেই এ ভাবে জল পাওয়া যাবে।” আডবাণীর রথযাত্রা ঘোষণার পর সপ্তাহ না ঘুরতেই মোদীর
অনশনের রাজনীতি ও নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস আখেরে এটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দল অভ্যন্তরীণ কলহে জেরবার। ওই কংগ্রেস নেতার কটাক্ষ, “দেশ সামলাবেন কী, ওঁরা আগে নিজেদের সামলান!”
গোড়ায় গুজরাত থেকে তাঁর রথযাত্রা শুরু করার কথা ভেবেছিলেন আডবাণী। কিন্তু মোদীর অনশনের পরে জায়গা বদলানোর কথা ভাবছেন তিনি। বিহারে জয়প্রকাশ নারায়ণের জন্মস্থান থেকে রথযাত্রা শুরু করতে পারেন তিনি। এই বিষয়টি নিয়েও মজা দেখছে কংগ্রেস।
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, কংগ্রেসের বড় একটা অংশই আডবাণী বা তাঁর রথযাত্রা নিয়ে চিন্তিত নয়। কারণ আডবাণী ও তাঁর রথ-রাজনীতি বহু ব্যবহারে ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। তুলনায় কংগ্রেস নেতৃত্ব নরেন্দ্র মোদীর অনশন নিয়েই বেশি আগ্রহী ছিলেন। মোদীর অনশন ‘সফল’ হলে কপালে ভাঁজ বাড়ত কংগ্রেসের।
কিন্তু মোদীর অনশন শেষ হওয়ার পরে দৃশ্যতই স্বস্তিতে কংগ্রেস নেতারা। দলের শীর্ষ নেতাদের মতে, মোদী তাঁর অনশন রাজনীতির প্রচারে কোনও কৌশল বাকি রাখেননি। দিল্লির সব বড় সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। গুজরাতি ভাষার পরিবর্তে হিন্দিতে বক্তৃতা করেছেন। সর্বভারতীয় স্তরে সব বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাভ বিশেষ হয়নি।
মোদীর প্রথম উদ্দেশ্য ছিল, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অস্ত্র করে তাঁর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ মুছে ফেলা। কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের ব্যাখ্যা, অনশন চলাকালীন যে ভাবে দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আমদাবাদের রাস্তায় মিছিল বেরিয়েছে, তাতেই প্রমাণ সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তার মধ্যেই এক ইমামের দেওয়া টুপি পরতে রাজি না হয়ে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন মোদী। দ্বিতীয়ত, গুজরাতের বাইরেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা সফল হয়নি। তৃতীয়ত, অনশনকে ঘিরে এনডিএ শরিকদের আচরণেই স্পষ্ট, মোদী তাঁদের কাছে সর্বজনগ্রাহ্য নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। জেডি (ইউ) তো সরাসরি তাঁর সমালোচনা করেছে। তাঁর ‘তোষণ’ রাজনীতির বিরোধিতা করেছে শিবসেনা। সর্বোপরি, সুষমা স্বরাজের মতো দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মোদীর রাজনৈতিক উত্তরণের পথে বড় বাধা। কাল মোদীর অনশন মঞ্চে গিয়ে সুষমা যা বলেছেন, তাতে কোথাও সর্বভারতীয় স্তরে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরণের বার্তা নিহিত ছিল না। ছিল মোদীকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গৌরবান্বিত করার বার্তা।
এই সব কিছুর মধ্যে দিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্কটের ছবিটাই ফুটে উঠেছে বলে মনে করছে কংগ্রেস। তবে অনেকেই বলছেন, সরকারের একের পর এক সঙ্কটের মুখে প্রধান বিরোধী দলের মধ্যেকার এই টানাপোড়েন কংগ্রেসের সামনে একটা সুযোগ এনে দিলেও তাকে তারা কতটা কাজে লাগাতে পারে, এখন সেটাই দেখার। |
|
|
 |
|
|