তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলাম
পরমাণু কেন্দ্র নিয়ে ফের জটিলতা, ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রীর দূত-ও
হারাষ্ট্রের জাইতাপুর, পশ্চিমবঙ্গের হরিপুরের পর এ বার তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলাম। ফের প্রশ্নচিহ্নের মুখে দেশের পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন।
চলতি বছরেই কুড়ানকুলামে দু’টি পরমাণু চুল্লিতে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুরক্ষাজনিত কারণে ওই পরমাণু কেন্দ্রটি বন্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভে নেমেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ১০০ জন অনির্দিষ্টকাল অনশন শুরু করেছেন। তাদের দাবি, ওই কেন্দ্রটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় করা হয়েছে। আর কেন্দ্রটি সুনামির ধাক্কা সামলাতে পারবে না। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার ঠিক আগে এই বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় কার্যত দিশেহারা কেন্দ্র। গতকালই রাজ্যের মানুষের অসন্তোষের বিষয়টি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। যে ভাবে স্থানীয় মানুষের দুশ্চিন্তাকে ‘আমল না দিয়ে’ নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কেন্দ্রকে এক হাত নেন তিনি। তার পরে আজ প্রধানমন্ত্রী তাঁর দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামীকে ওই এলাকায় পাঠান। কিন্তু তাতে বরফ গলেনি।আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। আন্দোলনের নেতারা মন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করতেও অস্বীকার করেন। ফলে আগামী মাস থেকে ওই কেন্দ্রের দু’টি চুল্লি কাজ শুরু করবে কি না তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই কেন্দ্র তৈরিতে সাহায্যকারী রাশিয়া সরকার ক্ষুব্ধ। রুশ দূতাবাসের পদস্থ কর্তা সার্গেই কারমালিতো বলেন, “এই বিক্ষোভ দুর্ভাগ্যজনক। এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হলেও আমরা আশা করছি আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সব মিটে যাবে।”
গত মার্চে জাপানের ফুকুশিমা দাইচি পরমাণু কেন্দ্রে বিপর্যয়ের পর এ দেশে পরমাণু কেন্দ্রগুলোর সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রের জাইতাপুরে প্রস্তাবিত কেন্দ্র নিয়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার। স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভে এক সময়ে প্রকল্পটির রূপায়ণ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছিল। জাইতাপুরে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে একাধিকাবার বৈঠকের পরে সে সমস্যা আপাতত কাটিয়ে উঠতেও পারলেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যর্থ হতে হয় কেন্দ্রকে। রাশিয়ার সহযোগিতায় পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুরে যে পরমাণু কেন্দ্র গড়ে ওঠার কথা ছিল, তা বাতিল করার দাবিতে নির্বাচনের আগে থেকেই আন্দোলনে নেমেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কুড়ানকুলামের ভবিষ্যত কী হবে?
পথে প্রতিবাদে: পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে পুলিশের সঙ্গে
ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন ডিওয়াইএফআই সমর্থকরা। মঙ্গলবার কোঝিকোড়ে। ছবি: পিটিআই
ইতিমধ্যেই স্থানীয় মানুষ সুরক্ষা নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছেন, সেই অভিযোগের তির সুকৌশলে কেন্দ্রের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। গতকালের চিঠিতে তিনি জানান, সুরক্ষার প্রশ্নে জনগণকে বোঝানোর দায়িত্ব সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছে মনমোহন সরকার। ওই চিঠি পাওয়ার পরেই আজ নারায়ণস্বামীকে কুড়ানকুলাম যেতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে নিজের বক্তব্য পর্যন্ত রাখতে পারেননি তিনি। পরে নারায়ণস্বামী বলেন, “ফুকুশিমার পরমাণু বিপর্যয়ের পরে দেশের সবক’টি পরমাণু চুল্লির সুরক্ষাব্যবস্থা নতুন করে দেখে পরমাণু শক্তি কমিশন। কুড়ানকুলাম পরমাণু কেন্দ্রের জন্য বেশ কিছু নতুন সুপারিশ ইতিমধ্যেই রূপায়িত হয়েছে।” একই সঙ্গে কেন্দ্রের দাবি, পরমাণু কেন্দ্রটি সুনামির ধাক্কাও সামলাতে পারবে। এটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় গড়া হয়েছেএই দাবির বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই বলে দাবি পরমাণু বিশেষজ্ঞদের। যদিও এই দাবি মানতে নারাজ গ্রামবাসীরা।
ভারতে বর্তমানে ২০টি পরমাণু চুল্লি রয়েছে। যার মধ্যে একটি বাদে সব ক’টি চালু রয়েছে। বর্তমানে দেশের মাত্র তিন শতাংশ চাহিদা পরমাণু বিদ্যুতের মাধ্যমে মেটানো হয়ে থাকে। ওই উৎপাদন ২০২০-তে বৃদ্ধি করে ছয় শতাংশ এবং ২০৩০ সালে ১৩ শতাংশ করার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের। সেই লক্ষ্যে আগামী এক দশকে আমেরিকা, ফ্রান্স ও রাশিয়ার সাহায্যে একাধিক পরমাণু কেন্দ্র তৈরি হতে চলেছে ভারতে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.