পাসপোর্টে নোট গুঁজে ঘুষ, পাকড়াও ৩ |
এ রাজ্যে বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তরপত্রের সঙ্গে পঞ্চাশ, একশো টাকার নোট গেঁথে দেওয়া হয় হামেশাই। সেই সঙ্গে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য পরীক্ষকের উদ্দেশে থাকে কাতর আর্জি। এ বার কলকাতা বিমানবন্দরে তিনটি পাসপোর্টের সঙ্গে পাওয়া গেল ৫০০ টাকার তিনটি নোট! তবে তার সঙ্গে কোনও আবেদন ছিল না।
মঙ্গলবার সকালে কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে ব্যাঙ্কক যাওয়ার বিমানে উঠতে যাচ্ছিলেন হরিণঘাটার তিন যুবক। তাঁদের তিনটি পাসপোর্টেই নোট গুঁজে দেওয়া হয়েছিল। ডিসি (অভিবাসন) শাকিল আহমেদ জানান, ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে তিন যুবককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম খোকন মণ্ডল, সাগর মজুমদার, শাজাহান মণ্ডল। তাঁদের বয়স ২৬ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
টাকা দেওয়ার কারণ কী?
জেরায় তিন যুবক জানান, মাত্র কয়েক দিন আগেই ভিসা না-দিয়ে বিদেশের একটি শহর থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যুবকদের আশঙ্কা ছিল, সেই কারণেই এ বার বৈধ পাসপোর্ট ও টিকিট থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বিমানে উঠতে দেওয়া হবে না। তাই অফিসারকে ‘খুশি’ করার জন্য প্রতিটি পাসপোর্টের সঙ্গে ৫০০ টাকার নোট গুঁজে দিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের ধারণা ছিল, অভিবাসন অফিসার খুশি হলেই অনায়াসে বিমানে উঠে চলে যেতে পারবেন গন্তব্যে।
প্রশ্ন উঠেছে, পাসপোর্ট পরীক্ষককে ঘুষ দেওয়ার কথা ওই তিন যুবকের মাথায় এল কী ভাবে? তা হলে কি কলকাতা বিমানবন্দরের কোথাও কোথাও কোনও কোনও কাজে ঘুষ দেওয়ার রেওয়াজ আছে? সরাসরি জবাব দিতে চাননি ডিসি (অভিবাসন)। তিনি বলেন, “যাঁরা ঘুষ দিচ্ছিলেন, তাঁদের গ্রেফতার করে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের কাছেও একটি সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যে-অফিসার টাকা না-নিয়ে ওই তিন জনকে ধরিয়ে
দিয়েছেন, তাঁকে পুরস্কার দেওয়ার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে।”
টাকা না-দিলে ওই যুবকেরা অনায়াসে ঢাকা হয়ে ব্যাঙ্কক পৌঁছে যেতেন। কিন্তু ঘুষ দেওয়াটাই কাল হল। এ দিন সকালে কাউন্টারে অভিবাসন অফিসার পাসপোর্টের সঙ্গে টাকা পেয়ে প্রথমে হতচকিত হয়ে যান। পরপর তিনটি পাসপোর্টের সঙ্গেই একটি করে ৫০০ টাকার নোট! তাঁদের পাসপোর্টে সব কিছু ঠিকঠাক রয়েছে। টিকিটও বৈধ। ব্যাঙ্ককে নেমে সেখান থেকে ভিসা নেবেন বলেও জানিয়েছেন! তা হলে ঘুষ কেন?
জেরায় ধৃতেরা জানান, মাত্র কয়েক মাস আগে তাঁরা কুয়ালা লামপুর গিয়েছিলেন। সেখানে নেমে সে-দেশে ঢোকার জন্য ভিসার আবেদন করেন। তা মঞ্জুর হয়নি।
কেন বারবার বিদেশে যেতে চাইছেন ওই তিন যুবক? ধৃতেরা অফিসারদের জানান, শ্রমিকের কাজ করার জন্য এ বার তাঁরা তাইল্যান্ড যেতে চাইছিলেন। কলকাতা থেকে জিএমজি-র উড়ানে ঢাকা ঘুরে ব্যাঙ্কক যাওয়ার কথা ছিল। বিমানবন্দরে পৌঁছে তাঁদের আশঙ্কা হয়, আগের বার কুয়ালা লামপুর থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল। এ বার হয়তো তাঁদের বিমানেই উঠতে দেওয়া হবে না। তাই টাকা দিয়ে পাসপোর্ট পরীক্ষকের মন পাওয়ার চেষ্টা! |