সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের অচলাবস্থা কাটল না মঙ্গলবারেও। বন্ধ থাকল কলেজ। বন্ধ রইল পড়াশোনা।
সোমবার ওই কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের তালাবন্দি করে রেখে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র পরিষদ। তার পাল্টা বিক্ষোভ করে টিএমসিপি। এর আগে টিএমসিপি-র বিক্ষোভের সময় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল অধ্যক্ষকে। সোমবারের ঘটনার পরেই তিনি জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে সর্বদল বৈঠক ডেকে সমস্যা মেটানোর অনুরোধ জানান। বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ দিন অধ্যক্ষ লক্ষ্মীনারায়ণ মণ্ডল বলেন, “কলেজে সুস্থ পরিবেশ ফেরানোর লক্ষ্যে সর্বদল বৈঠক ডাকতে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলাম। সদর মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যেই বৈঠক ডাকা হবে।” তত দিন কলেজ বন্ধ থাকবে বলেই জানান অধ্যক্ষ।
ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি অবশ্য নিজেদের অবস্থানেই অনড়। কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এই সংগঠনের নিজেদের দ্বন্দ্বের জন্যই কলেজের স্বাভাবিক পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে। যদিও যুযুধান দুই ছাত্র সংগঠনেরই দাবি, তারা কলেজে পঠনপাঠনের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই আন্দোলন করছে। ছাত্র পরিষদের এ-ও অভিযোগ, অধ্যক্ষ মাঝেমধ্যেই ক্লাস চলাকালীন বিনা নোটিসে ক্লাস বন্ধ করে দেন। অবিলম্বে কলেজ খোলার দাবিতে এ দিন সিউড়ি (সদর) মহকুমাশাসক সুজয় আচার্যকে স্মারকলিপিও দিয়েছে টিএমসিপি এবং ছাত্র পরিষদ। পাশাপাশি কলেজ বন্ধ রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধ্যক্ষ তথা কর্তৃপক্ষ, তার প্রতিবাদও করা হয়েছে এই দুই ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে। তাদের আরও বক্তব্য, সর্বদল বৈঠকের বদলে ছাত্র সংগঠনগুলিকে নিয়েই বৈঠক হওয়া উচিত ছিল।
ছাত্র পরিষদ নেতা শুভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এই সামান্য ব্যাপারেও জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।” টিএমসিপি নেতা জিয়াউল হকের কটাক্ষ, “কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের প্রশাসন সামলাতে ব্যর্থ। না হলেও কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ তাঁরা হতেন না। আর এ ভাবে কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানাই।” কলেজের অধ্যক্ষ অবশ্য বলেছেন, “এর আগেরবার ছাত্র আন্দোলনের জন্য আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার দু-এক দিনের মধ্যেই ছাত্র সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করা হয়। তাতেই সর্বদল বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই মতো জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। তা ছাড়া ছাত্র আন্দোলনের নামে বেশ কিছু দিন থেকে কলেজে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।” তিনি জানান, সোমবার রাতেই কলেজ বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়েছিল। টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক-সহ সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মহকুমাশাসক বলেছেন, “সমস্যা সমাধানের জন্য শীঘ্রই সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।” |