বিসর্জনের দিন প্রতিমা বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে দরজার পাল্লায় লেগে ভেঙে পড়েছিল গণেশের ডান হাত। পরিবারের সদস্যেরা চিন্তায় পড়েন, প্রতিমার অঙ্গহানি যে ঘোর অমঙ্গল। এর জেরে আকারই ছোট করে দেওয়া হল প্রতিমার। গত প্রায় ১২০ বছর ধরে তাই ছোট প্রতিমারই পুজো চলছে বর্ধমান শহরের লাকুড্ডির বামুনপাড়ার অধিকারী পরিবারে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় চারশো বছরের পুরনো এই পুজো শুরু করেছিলেন পূর্বপুরুষ নৃহরি অধিকারী। তিনি ছিলেন বর্ধমান রাজ পরিবারের পুরোহিত। কথিত রয়েছে, তিনি এক দিন স্বপ্ন দেখেন, নিজের বাড়িতে ষোড়শ উপাচারে পুজো করতে পারবেন কি না জিজ্ঞাসা করছেন দেবী। তার পরেই তাঁর পরিবারে শুরু হয় দুর্গার আরাধনা। তবে সেই সময়ে প্রতিমার আকার ছিল ৪২ বর্গফুট। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ বর্গফুট। |
পরিবারের সদস্য তারকনাথ অধিকারী জানান, আকার ছোট হওয়ার পিছনে রয়েছে সেই দুর্ঘটনার কাহিনী। প্রায় ১২০ বছর আগে বিজয়ার দিন মণ্ডপ থেকে প্রতিমা বের করতে গিয়ে দরজার পাল্লায় ধাক্কা লেগে ভেঙে পড়ে সিদ্ধিদাতা গণেশের ডান হাতের একাংশ। তারকনাথবাবু বলেন, “তার পরেই পরিবারের সব শরিকেরা মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রতিমার অঙ্গহানি পরিবারের পক্ষে অমঙ্গলের। আর কখনও যেন এমন না ঘটে সে জন্য প্রতিমার আকার কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।” তখন থেকেই একচালার দেবী প্রতিমার আকার এতটাই ছোট করা হয়েছে যে টেবিলে বসিয়ে পুজো করা হয়।
গোস্বামী মতে এই পরিবারের পুজোয় প্রতিমার সব সাজই মাটির তৈরি। এমনকী মুকুটও। পুজো উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে চলে আসেন ছয় ভাই ও সাত বোনের পরিবারের প্রায় সব সদস্যই। ফলে পুজোর দিনগুলিতে প্রায় দেড়শো পাত পড়ে অধিকারী বাড়িতে। সেই সঙ্গে আড্ডা, স্মৃতিচারণ। প্রাচীন এই প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন স্থানীয় মানুষও। এক সময়ে আসতেন বর্ধমানের রাজ পরিবারের সদস্যেরাও। পুজো ঘিরে আগের জৌলুস আর না থাকলেও অতীতের গরিমা এখনও টের পাওয়া যায়। |