কাঠের পুতুল-প্রতিমায়
মণ্ডপ সাজছে নতুনগ্রামে
‘পুতুল নেবে গো পুতুল’!
বছর দশেক আগেই এই গান গেয়ে গ্রামে কাঠের পুতুল বিক্রি করতেন কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের পাশে নতুনগ্রামের শিল্পীরা। গ্রামীণ মেলায়ও তাঁদের দেখা মিলত।
পুতুল বলতে পেঁচা, খুব বেশি হলে গৌরাঙ্গ। পুতুল বিক্রি করেও তাঁদের দু’বেলা দু’মুঠো ভাতও জুটত না। দুর্গাপুজো তখন নতুনগ্রামের কাঠশিল্পীদের কাছে আনন্দের বদলে বিষাদের বার্তাই বয়ে আনত।
নব্বই দশকের শেষের দিক থেকে কলকাতার পুজোয় এল ‘পরিবর্তন’। জায়গা করে নিল ‘থিম পুজো’। পুজোকর্তারা নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ মণ্ডপ তৈরি করাতে শুরু করলেন। আর এই থিম পুজোর হাত ধরেই চাহিদা বাড়তে থাকল নতুনগ্রামের পুতুল তৈরির কারিগরদেরও।
অগ্রদ্বীপ স্টেশনবাজার এলাকায় অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
নতুনগ্রামের ৬৩টি পরিবার পুতুল তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের একাংশ এখন অগ্রদ্বীপ স্টেশনের কাছে চলে এসেছেন। তবে এখন তাঁরা আর শুধু পেঁচা, গৌরাঙ্গই নয়, তৈরি করছেন কাঠের দুর্গাও। আর বছরের পর বছর ধরে সেই সব মূর্তি কলকাতার বিভিন্ন মণ্ডপে ঠাঁই পাচ্ছে। শুধু কলকাতাই নয়, শিলিগুড়ি, দূর্গাপুর, আসানসোল-সহ বিভিন্ন জায়গায় নতুনগ্রামের শিল্পীদের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে।
কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের স্টেশনের কাছেই অক্ষয় ভাস্করের স্টুডিও। সেখানে এ বার নারকেল গাছের কাঠ খোদাই করে তৈরি করা হচ্ছে প্রতিমা। অক্ষয়বাবু বললেন, “কলকাতার লেকভিউ ক্লাবে এই দেবীমূর্তি থাকবে। শুধু মূর্তি নয়, নারকেল দড়ি, গুড়ো, ঝাঁটার কাঠি দিয়ে ওখানে মণ্ডপও তৈরি করা হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “ওই ক্লাবেই ১৫০ থেকে ২০০টি ছোট-বড় পুতুল যাবে। প্রতিটি পুতুলই নারকেলের গুড়ি খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে।” এছাড়াও কলকাতার কালীঘাটের শ্রীসঙ্ঘ ক্লাব, সাউট সিটি মলেও তাঁর তৈরি কাঠের মূর্তি যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
শুধু অজয় ভাস্করই নন, নতুনগ্রামের টোটন সূত্রধর বেলঘড়িয়ার বাণী মন্দির সঙ্ঘের জন্য কাঠের দুর্গা তৈরি করেছেন, যা ইতিমধ্যেই মণ্ডপে সাজানো হয়ে গিয়েছে। টোটনবাবুর কথায়, “পুজোর প্রায় পাঁচ মাস আগে থেকে কলকাতার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের লোকেরা নতুনগ্রামে এসে বরাত দিয়ে যান। আর আমরা দিন-রাত এক করে বরাত অনুযায়ী কাজ করি।” এ বছর নতুনগ্রামের কাজ দেখতে পাওয়া যাবে দমদম ক্যান্টনমেন্ট, ভবানীপুর ৭৬ পল্লী, ঢাকুরিয়া, সেলিমপুর-সহ কলকাতার বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে।
নতুনগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ৬৩টি পরিবারের প্রায় ৩০০ জন শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কেউ খোদাই করছেন তো কেউ রং করছেন। কাজে হাত লাগিয়েছেন যুবক, বৃদ্ধ, পড়ুয়ারাও। গ্রামবাসীরা জানান, ২০০৩ সালে এই গ্রামের গোপাল ভাস্কর বেহালার রায়বাহাদুর রোডে একটি পুজো মণ্ডপে ইট খোদাই করে (মেশিনে তৈরি মডিউলার ব্রিক) দুর্গা ও সখীর অপরূপ শিল্প তুলে ধরেছিলেন। এর পর থেকেই কলকাতার পুজোর বাজারে অগ্রদ্বীপের পাশে নতুনগ্রামের নাম একাত্ম হয়ে উঠল।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা কার্তিক সূত্রধর বলেন, “এক সময় আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পুতুল ফেরি করতাম। তাও পেট ভরত না।” ওই বাড়ির বধূ লক্ষ্মীদেবী বলেন, “বছর ১২ আগেও সাবু খেয়ে দিন কাটিয়েছি। এখন মা দুর্গা মুখ তুলে চেয়েছেন।”
এখন তাঁরা দুধে-ভাতে রয়েছেন ঠিকই, তবে আক্ষেপও আছে তাঁদের।
নতুনগ্রামের শিল্পী অজয় ভাস্কর, কার্তিক সূত্রধরদের বললেন, “অনেক সময় প্রাপ্য বকেয়া পাই না। তাই অহেতুক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.