নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
রাজ্যের নতুন শাসকদলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ এ বার প্রকাশ্যে এল দুর্গাপুরেও। তৃণমূলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের দু’টি অফিসে ভাঙচুর এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছেঁড়ায় জড়িয়ে গেল দলেরই এক গোষ্ঠীর নাম।
বর্ধমান জেলা জুড়েই একের পর এক গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় জেরবার তৃণমূল। মেমারি থেকে রায়না, বর্ধমান শহর থেকে আউশগ্রাম সংঘর্ষের বিরাম নেই। বর্ধমানে পাঁচ জনকে দল থেকে তাড়ানো হয়েছে। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে গুসকরার পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াইকে। বহু ক্ষেত্রে সিপিএম ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে আসা লোকদনের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুলও তুলছেন দলের পুরনো নেতা-কর্মীরা।
দুর্গাপুরে বিধাননগরের পাম্প হাউসের কাছে হামলার ঘটনাটি ঘটে সোমবার রাতে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মী দেবজিৎ পালচৌধুরীর অভিযোগ, হঠাৎই কয়েক জন তাঁদের অফিসে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। ছিঁড়ে দেওয়া হয় দলনেত্রীর ছবি। তাঁর অভিযোগ, “সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও নিখিল মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে।” সংগঠনের উচ্চতর নেতৃত্ব এবং তৃণমূলের দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কেও বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। নিখিলবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি দীর্ঘদিনের তৃণমূল কর্মী। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, দেবজিৎবাবুর নেতৃত্বে এক দল দুষ্কৃতী তাঁর উপরে চড়াও হয়। দেবজিৎ ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা। দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনার ‘প্রকৃত তদন্ত’ও দাবি করেছেন তিনি। পার্থবাবুও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বস্তুত, বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই দলে ‘বেনোজলে’র উপস্থিতি নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু তাতে যে পরিস্থিতি শুধরোয়নি, একাধিক গোষ্ঠীর লাগাতার সংঘর্ষেই সেটা বারবার স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন ধরেই দলের দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল সভাপতি ছিলেন প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। প্রাক্তন বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়েরও নিজস্ব একটি গোষ্ঠী ছিল। তবে টিএমসিপি-র নেতারা দু’টি গোষ্ঠীর সঙ্গেই মোটামুটি যোগাযোগ রেখে চলতেন। বিধানসভা নির্বাচনের পরে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। অপূর্ব মুখোপাধ্যায় ফের বিধায়ক হয়েছেন। আবার দলের সাংগঠনিক পদেও এসেছেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই, তাঁর অনুগামীরা এখন একটু বেশিই ‘উজ্জীবিত’। তাঁদের কেউ কেউ ‘অতিরিক্ত বাহাদুরি’ দেখাতে গিয়ে সমস্যা তৈরি করে ফেলছেন বলেও তৃণমূল সূত্রের খবর। ফলে গোষ্ঠীর বাইরে থাকা লোকজনের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ বাধছে।
অপূর্ববাবু অবশ্য বলেন, “এ সব বরদাস্ত করা হবে না। সকলকেই দলীয় অনুশাসন কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে। কে কার সঙ্গে আছেন বা ছিলেন, সেটা বিচার্য নয়। বিচ্যুতি ঘটলে দল ব্যবস্থা নেবে।” বিধাননগরের ঘটনার পিছনে কে বা কারা আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। বর্তমানে শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রভাতবাবু এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |