নিজস্ব সংবাদদাতা • রানিগঞ্জ |
হলফনামা জমা দিয়ে ইসিএলকে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা স্ববিরোধি আচরণের অভিযোগ খণ্ডন করার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। খনি আবাসন থেকে জবরদখল উচ্ছেদ সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশ পালনের ব্যাপারে ওই সংস্থা স্ববিরোধী আচরণ করছে বলে অভিযোগ এনেছিলেন জনস্বার্থ মামলাকারী আইনজীবী পার্থ ঘোষ। তার প্রেক্ষিতেই সম্প্রতি এই নির্দেশ দেয় আদালত।
২০০৯-এর ডিসেম্বরে আইনজীবী পার্থ ঘোষ ইসিএলের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। তিনি দাবি করেন, ইসিএলের অধিকাংশ কর্মী আবাসনই বহিরাগতদের দখলে চলে গিয়েছে। অন্য দিকে, আবাসন দিতে না-পেরে ইসিএল প্রতি মাসে কর্মীদের আবাসন ভাতা দিচ্ছে। বহিরাগতদের দখলে চলে যাওয়া আবাসনগুলিতে জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং রক্ষণাবেক্ষণেও কোটি-কোটি টাকা খরচ করছে। ইসিএলের তরফে জানানো হয়, মাফিয়াদের দখলে থাকা কর্মী আবাসন তারা দখলমুক্ত করতে পারছে না। পুলিশও সাহায্য করছে না বলে জানানো হয়। ইসিএলকে সাহায্য করার জন্য রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তার পরে ইসিএলের আইনজীবী মলয় বসু জানিয়েছিলেন, আবাসন দখলমুক্ত করতে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশও কোনও সাহায্য করছে না বলে তিনি ফের অভিযোগ করেন। গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল ও অসীমকুমার রায়ের এজলাশ থেকে বর্ধমানের পুলিশ সুপারকে ওই জনস্বার্থ মামলাকারীর নিরাপত্তার ব্যাপারে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর পরে পার্থবাবু আদালতে অভিযোগ জানান, খনি আবাসন দখলমুক্ত করার বিষয়ে ইসিএল আদালতকে এক রকম জানাচ্ছে, শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আপোষে গিয়ে অন্য রকম কাজ করছে। তিনি জানান, ৫ অগস্ট কয়লা মন্ত্রকের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের একটি বৈঠক হয়। সেখানে খনিকর্মী আবাসন থেকে দখল উচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে সংগঠনগুলি সরব হয়। যে পদ্ধতিতে উচ্ছেদ হচ্ছে, তা তাঁরা মেনে নেবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষকে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার দাবি জানায় তারা। পার্থবাবু জানান, এর পরেই ইসিএল প্রতিটি এরিয়ার জিএম-কে এরিয়া স্তরে সংযুক্ত পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার নির্দেশ দিয়েছে। তাঁর দাবি, আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরে ইসিএল এমন কাজ করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল মহম্মদ ফারুক রেজ্জাক এবং ইসিএলের আইনজীবী মলয় বসু জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কাজ শুরু হয়েছে। যে বৈঠক ডাক হয়েছে, সেখানে কোর্টের নির্দেশ নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না। এর পরেই আদালত এ ব্যাপারে ইসিএলকে হলফনামা জমা দিতে বলে।
এআইটিইউসি অনুমোদিত অল ইন্ডিয়া মাইনস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রামচন্দ্র সিংহ দাবি করেন, জবরদখল হয়ে থাকা আবাসনগুলি থাকার অযোগ্য। খনি জাতীয়করণের আগে প্রজন্মের পর প্রজন্ম একই পরিবারের লোকজন সংস্থায় কাজ করতেন। এখন সেই সব পরিবারের লোকজনই আবাসনে রয়ে গিয়েছেন। মাফিয়াদের দখল করে রাখার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে তাঁর দাবি। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা হবে। |