|
|
|
|
|
|
|
‘ডেট’ নিয়ে ঘেঁটে যাওয়া |
মনের মতো পুরুষটির দেখা পাওয়া কি অসম্ভব? কোথায় পাব সেই সোলমেট?
ঠিকানা কি দিতে পারবে নেট? রেচেল ম্যাকাসেকের অভিজ্ঞতার পায়ে পায়ে দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী
|
প্রথম দিনে বিল |
মার্কের সঙ্গে ডেটটা ভাল যাবে না জানতাম আমি। ডেটে যাওয়ার আগে এমন কয়েকটা ঘটনা পরপর ঘটল যে মন বলছিল এই আলাপটা ভাল হতে পারে না। কী কী হয়েছিল বলি:
১) অন লাইনে মার্কের যে ছবিটা দেখলাম সেটা খালি গা-ছবি। এই গা দেখানো হাবভাব বলে দেয় ছেলেটা কতটা মরিয়া!
২) ডেটের ঠিক কয়েক দিন আগেই দেখা হয়ে গেল এক জন প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে, যার সঙ্গে ব্রেক আপটা ছিল ভয়ঙ্কর।
৩) আমি নিজেও মানসিক ভাবে একদম ভাল ছিলাম না। ছেলেরা আমায় পছন্দ করে কি না, আর কেউ জীবনে কখনও আমার প্রেমে পড়বে কি না, এ রকম নানা প্রশ্ন মনে আর মাথায় ভিড় করছিল। ছাইপাঁশ ভেবে ভেবে এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম, আমি যে শহরে থাকি সেখান থেকে বহু দূরে থাকা এক পুরনো আধাখ্যাঁচড়া ডেটের সঙ্গে ই-মেল-এ আবার সম্পর্ক পাতানোর চেষ্টা শুরু করেছিলাম। টেকেনি। বলাই বাহুল্য।
অতএব বেশ একটা ভেঙে পড়া মন নিয়েই মার্কের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এবং যা হওয়ার তাই হল। ওর সঙ্গে কথা বলার বিষয় খুঁজে পেলাম না। খাওয়ার বিলটা ও নিজে না দিয়ে ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রস্তাব দিল (যদিও আমার স্পষ্ট মনে আছে যে ই-মেল-এ মার্ক বলেছিল, “ক্যান আই বাই ইউ আ ড্রিঙ্ক”?) আর আমি বুঝে গেলাম এ বারও আমার কপালে কী নাচছে! ছেলেরা ডেটের প্রথম দিনে বিল না দিলে আমার পক্ষে তাদের প্রেমে পড়া প্রায় অসম্ভব। ‘প্রায়’ বলছি কেন না, কখন কী হয়ে যায় কিছু তো বলা যায় না। তাই না? কিন্তু বার বার এটাই কেন হয় আমার সঙ্গে? ’০৬-এর আমেরিকার জনগণনা তো বলছে এ দেশে ৯২ মিলিয়ন সিঙ্গল ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই যদি হবে তা হলে একটা ভাল, ঠিকঠাক ছেলে খুঁজে পেতে এত সমস্যা কীসের? আমি রেচেল ম্যাকাসেক, বছর ৩৩-এর এক সাংবাদিক, ওয়াশিংটনে এক কামরার ফ্ল্যাটে বেড়াল নিয়ে একা থাকা মোটের ওপর ভাল দেখতে মহিলা বিষয়টা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে বসলাম। |
অন লাইন ডেট |
ওই তো! দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ম্যাচ ডট কম-এ মিট করা আমার আজকের ডেট ‘স্ক্র্যাপি ১৩’ (ওর অনলাইন নাম)। একটু অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে। ও কী ভাবছে অনুমান করতে পেরে হাসি পেল। ও ভাবছে আচ্ছা, মেয়েটা অন লাইনে যে ছবিটা দিয়েছিল, সেটা ওর আসল ছবি তো? ওর ওজন যখন ৫০ কেজি কম ছিল তখন তোলা না তো? এবং মেয়েটা আদৌ আসবে তো?
৩০-৩৫ ডলার খরচা করে এই সব সাইটের মেম্বার হয়েছি আসব না আবার? তা ছাড়া ‘স্ক্র্যাপি ১৩’-র থেকে আমি বিশেষ কিছু আশা করছি না। নিজেকে বলছি ‘ওনিয়নস পার্সোনাল’ বলে সাইটটাতে ‘দ্য কিড’ বলে যে বাচ্চা ছেলেটাকে (ওর বয়স ২৬) মিট করব বলে কথা দিয়েছি তার ছবি বলছে সে দারুণ হট! তাই এটা না হলে ওটা। নো মন খারাপ! |
|
মনটাকে হাল্কা করে হেঁটে গেলাম ‘স্ক্র্যাপি ১৩’র দিকে। হাইটটা যা বলেছিল তার থেকে ইঞ্চি দু’এক কম হবেই। এই হচ্ছে ছেলেদের মুশকিল, হাইট নিয়ে বাড়িয়ে বাড়িয়ে লিখবেই। আমার হাইটটা অন্য মেয়েদের মতো পাঁচ সাড়ে তিন-চার হলে কথা ছিল কিন্তু পাঁচ সাড়ে আট উচ্চতায় বেঁটে ছেলে দেখলেই মাথা গরম লাগে। বিরক্তি চেপে হাত মিলিয়ে একটা টেবিলে মুখোমুখি বসলাম দু’জনে। যথারীতি কথা বলার কিছু পেলাম না। অভদ্রতা না করে এই সব ক্ষেত্রে আমি সাধারণত যা করে থাকি সেটাই করলাম। ‘তুমি কী কাজ করো’ জাতীয় বোকা বোকা বিষয় নিয়ে কথা চালালাম। সেটা শেষ হয়ে গেলে রাজ্যের আরও হাবিজাবি। ততক্ষণে দুটো ড্রিঙ্ক গলা দিয়ে নেমে গেছে আর ‘স্ক্র্যাপি ১৩’ জানতে চেয়েছে, “আমরা ডিনার করব তো?” তার মানে ও আমার সঙ্গে আরও সময় কাটাতে চায়? কিন্তু আমি তো চাই না! কী যে করি? আবার ভদ্রতা। হ্যাঁ বললাম। ডিনার শেষে রেস্তোরাঁ থেকে বেড়িয়ে ‘স্ক্র্যাপি ১৩’ জানতে চাইল, “তুমি আবার দেখা করতে চাও?” কী সমস্যা! এই ধরনের প্রশ্নের সোজাসাপটা উত্তর আমি কিছুতেই মুখের ওপর দিতে পারি না। এটা ই-মেল-এ জানতে চাইলে কী এমন ক্ষতি হত হে? এবং আরও একবার আমার সেই বিখ্যাত ভদ্রতার ফাঁদে পড়ে বললাম, ‘শিয়োর’। ও কী বুঝল যে আমি ‘হ্যাঁ’ বলিনি। বলেছি, “নিশ্চয়ই। দেখা করাই যায়, কিন্তু আমি চাই না।”
বাড়ি এসে ভাবছিলাম, আমি কি বেশি রিঅ্যাক্ট করছি? এটাও তো সত্যি, একটা মাত্র ডেটে একটা মানুষকে কিছুই চেনা যায় না। তো সে যা-ই হোক, ‘দ্য কিড’-এর সঙ্গে পরের উইক এন্ডে দেখা তো করি।
দেখা হল, আড্ডা হল দারুণ। খুব হট একটা ছেলে। ওর সামনে নিজেকে বাচ্চা দেখানোর জন্য আমি বোধ হয় একটু বেশিই চোখের পাতা কাঁপিয়ে সরল (নাকি বোকা?) সাজার চেষ্টা করে ফেললাম। মাঝে মাঝে এ রকম করতে দারুণ লাগে। অনেক দিন বাদে নিজেকে খুশি খুশি লাগছিল। একটা ছেলে যার এখনও পুরুষ হয়ে উঠতে ঢের দেরি। আমার হাত ধরেই জীবনের পথে হাঁটবে না হয় এই সব ভাবতে ভাবতে কয়েকটা দিন কেটে গেল।
এ দিকে ‘স্ক্র্যাপি ১৩’ আর ‘দ্য কিড’ এর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রেখে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। সম্পর্ক হচ্ছে কি? ছেলেগুলো কী চায়? আমি কিছু চাই কি? কোনও প্রশ্নেরই উত্তর না পেয়ে কেনেথ, আমার বহু দিনের পড়শি আর বন্ধু, ওর দ্বারস্থ হলাম। এবং যেটা বোঝা গেল সেটা হল ‘স্ক্র্যাপি ১৩’র প্রতি আমার কোনও আকর্ষণই নেই আর ‘দ্য কিড’কে ভাল লাগলেও ও যে অন লাইনে হাইট নিয়ে মিথ্যে বলেছে, সেটা আমার ভাল লাগেনি।
অতএব আমি ‘ক্যারট টপ’-- লেখক, ছ’ফুট সাড়ে তিন ইঞ্চির সঙ্গে ডেট পাকা করে ফেললাম। ডেট শুরুর দু’মিনিটের মধ্যে বুঝে গেলাম লোকটা বড্ড বেশি কথা বলে আর বড্ড জোরে। আর খালি বলে, ‘আমার দিকে তাকাও, আমার দিকে তাকাও’ কী বিরক্তিকর! ভাবছিলাম বলে দিই, তোমার ওই মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে কী দেখব বাবা? ভদ্রতায় বাধল। পরিবেশটা হাল্কা করার জন্য জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কী ড্রিঙ্ক অর্ডার করলে যেন?
‘অ্যাঁ’? এই হল ‘ক্যারট টপ’-এর উত্তর! ‘শোনো আমার সঙ্গে কথা বলতে গেলে জোরে কথা বলতে হয়। আমি কানে কম শুনি’ বলল ‘ক্যারট টপ’। ও ব্যান্ডে বাজাত বহু বছর। চেল্লামেল্লিতে কানটা নাকি সামান্য গেছে। তক্ষুনি কল্পনা করে ফেললাম বাকি জীবনটা ‘ক্যারট টপ-এর সঙ্গে কাটাতে গিয়ে কী ভাবে গলার শিরা ফুলিয়ে ফুলিয়ে চেঁচাচ্ছি! উফ্! লোকটার কিচ্ছু ভাল লাগছিল না। এমনকী রেস্তোরাঁয় ওর চেনা এক জনের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ায় আলাপ করিয়ে দিয়ে ও যখন বলল, ‘এই হল রেচেল, ওর চুলটা কী সুন্দর না’ তখনও না।
ওয়েটার যখন ‘ক্যারট টপ’-এর তৃতীয় ড্রিঙ্কটা দিচ্ছিল, তখন টেবিলের উল্টো দিক থেকে মুখটা বাড়িয়ে ‘ক্যারট টপ’ আমায় বলল, ‘ওয়েটারের বগলের গন্ধটা ঠিক মেয়েদের ওইখানটার মতো না?’
দিন কয়েক পরে ‘ক্যারট টপ’-এর একটা ই-মেল পেলাম, ‘আমার ভেবে দারুণ লাগছে যে, ডেটের প্রথম দিনে তোমার সঙ্গে মেয়েদের ওই জায়গাটা নিয়ে কথা বললাম’। সেই আমাদের শেষ যোগাযোগ।
কিছুটা জোর করেই ‘স্ক্র্যাপি ১৩’র সঙ্গে আবার একটা চান্স নেওয়া যায় কি না, দেখতে চলে গেলাম পরের উইকয এন্ডে। এবং ফেরার পথে সারাদিনের ধকল, বোলিং পুল-এর পরিশ্রম আর বেশ কয়েকটা ড্রিঙ্ক গলায় ঢালা আমি ‘স্ক্র্যাপি ১৩-কে চুমুও খেয়ে ফেললাম। একদম ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে। আমাকে বাড়িতে নামিয়ে দেওয়ার সময় ওর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলছিল, ও ওপরে আসতে চায়। ত্বরিত গতিতে ভেবে ফেললাম, ছেলেটা চুমু ভালই খায়, কিন্তু যে ভাবে চুমু খেতে খেতে শরীরের এ দিক ও দিক হাত চালাচ্ছিল, তাতে আমার ফ্ল্যাটে গেলে যেটা করবে সেটা আমি চাই কি না। উত্তর পেলাম না।
পরের সোমবার অফিসে গিয়ে আমার বস মাইককে যখন ‘স্ক্র্যাপি ১৩’র কথা বললাম ও বলল, ‘এক্ষুনি একটা ই-মেল করো। বলে দাও এটা নিয়ে তুমি আর এগোতে চাও না।’ আমি একটু দোনোমনো করছিলাম। মাইক এই সব সময়ে আমাকে ধাক্কা দেওয়ার কাজটা করে। একটা চুমুতে যে কিছু যায় আসে না, সেটা ও আরও সোজা করে বুঝিয়ে দিতেই ই-মেলটা লিখে ফেললাম। |
সিঙ্গল ইভেন্টস |
ছেলে পিছু আট মিনিট সময় আমার হাতে। আলাপ জমিয়ে, ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়া বা অন্য কিছু করে ব্যাপারটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ইন্টারনেট দেখে, টাকা দিয়ে, ইভেন্টটার টিকিট কেটেছি। ভাল কাউকে দেখার আশায় এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম। শুনেছি কোনও মেয়ের সঙ্গে ডেট করবে কি না, সেটা বুঝে নিতে ছেলেদের ১৫ মিনিট লাগে, আর মেয়েদের পাক্কা এক ঘণ্টা।
ইভেন্ট থেকে বাইরে এলাম একটি বলিভীয় ছেলের সঙ্গে। আকর্ষণীয় চেহারা। চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস। যে ধরনের ছেলেদের দেখলে ভালও লাগে আবার কোথাও একটা অস্বস্তিও হয়। ছেলেটি আমায় দারুণ একটা রেস্তোরাঁয় খাওয়াতে নিয়ে গেল। দারুণ শ্যাম্পেন। ততোধিক ভাল মিউজিক আর খাবার। অসাধারণ একটা সন্ধে। কিন্তু ফেরার সময় গাড়িতে যে ভাবে আমার গায়ে হাত দেওয়া শুরু হল, তাতে বুঝলাম ব্যাপারটা বাড়াবাড়ির দিকে এগোচ্ছে। ডেটিং-এ নাম করে কি এরা শুধু শোওয়ার জন্য মেয়ে খোঁজে? নাকি আমি একটু বেশিই নেগেটিভ ভাবছি? ছেলেটিকে বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ করলাম। ও আবার দেখা করতে চাইল। কিন্তু আমি উৎসাহ পেলাম না। |
ব্লাইন্ড ডেটস |
বন্ধুরা যে আমার জন্য আর কত করবে? অনলাইন ডেটিং আর সিঙ্গল ইভেন্টে আমার ধ্যাড়ানো শেষই হচ্ছিল না। শেষে ওরা প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার জন্য পুরনো পদ্ধতিতে ছেলে খুঁজে বার করা শুরু করল। সেই আদিম ব্লাইন্ড ডেট। প্রথম দিন যে ছেলেটির সঙ্গে দেখা করতে গেলাম তাঁর নাম লরেঞ্জো। এত ভাল দেখতে ছেলে খুব কম দেখেছি। কিন্তু এ যে মারাত্মক নার্ভাস! তুতলে যাচ্ছে, চোখের দিকে তাকাতে পারছে না! তাও স্রেফ একটা দারুণ দেখতে ছেলের সঙ্গে সময় কাটানোর নেশায় গোটা সন্ধেটা কাটিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ও যখন আমায় ভদ্রতাসূচক আলতো জড়িয়ে গালে ঠোঁট রাখল, বুঝতে পারলাম আমাদের মধ্যে কোনও রসায়ন নেই। হবেও না জীবনে। বন্ধুদের বলতেই প্রায় তেড়ে উঠল ওরা। বলল, সম্যসাটা ছেলেদের নয়। আমার। আমি ভুলে যাই ডেটিং ব্যপারটা উপভোগ করার। ভুলে যাই এটা নিয়ে এত তাত্ত্বিক কচকচানির কিছু নেই। এই কিছু না ভেবে স্রেফ উপভোগ করা ব্যাপারটা কী, কী করে করতে হয়, সেটাই আমার মাথায় ঢোকে না। কাউকে কাউকে এক বার দেখলেই ভাবতে থাকি, আমার বিয়ের গাউনটা কেমন ডিজাইনের হবে, আমার আর তার সন্তান কেমন দেখতে হবে আর কেউ কেউ হাজার ভাল হলেও, হাজার প্রেম নিবেদন করলেও মনে ধরে না! |
|
নিজেকে নিয়ে একরাশ ঘ্যানঘ্যানে বিরক্তির মধ্যেই এমন একটা ই-মেল পেলাম যে মনটা বসন্তের সকালের মতো ফুরফুরে হয়ে গেল। জাস্টিন। একটা কনফারেন্সে দেখা হয়েছিল। নিছক সাধারণ কথা বার্তা। বিজনেস কার্ড বিনিময়। তার পর এই এত দিন পরে সেই জাস্টিনের ই-মেল। ওয়াশিংটনে আসছে একটা কাজে। এক রাত থাকবে। আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। সময় কাটাতে চায়। মাত্র একটা সন্ধে ওর হাতে আর সেটা আমার সঙ্গে কাটাতে চায়? তার মানে আমি ওর কাছে এতটা স্পেশাল? প্রায় উড়ছিলাম আমি। জাস্টিনের সঙ্গে সন্ধেটা স্বপ্নের মতো কেটে গেল। ফেরার সময় ওকে নামিয়ে দিতে গেলাম। চাইছিলাম, জাস্টিন বলুক ও আমায় আরও কাছে পেতে চায়। কিন্তু সে রকম কিছু হল না। আলতো করে আমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে ও শুধু বলল, ‘আমি জানি কত দূর যেতে হয়।’ এত দিনে বুঝতে পারছিলাম ঠিক কী খুঁজছিলাম। রসায়ন কাকে বলে! আর বার বার ভোলার চেষ্টা করছিলাম, জাস্টিন আমার শহরে থাকে না। ওর কাছে উড়ে যেতেও আমার পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। এ ধরনের লম্বা দূরত্বের সম্পকের্র পরিণতি জানতাম। কিন্তু ভাল লাগার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আমার তখন যুক্তি-বুদ্ধি লোপ পেয়েছিল।
কিন্তু তখনও জানতাম না জাস্টিন-অধ্যায় আমার জীবনে কতটা ক্ষণস্থায়ী। এই ছেলেটির সঙ্গেও অনলাইনেই আলাপ। দেখা করার প্রস্তাব ও-ই দেয়। জাস্টিন চলে যাওয়ার পর একা লাগত। ভাবলাম দেখা করতে ক্ষতি নেই। ওর সামনাসামনি হওয়া মাত্রই জাস্টিন নামের মানুষটা মন থেকে উড়ে গেল শুকনো খড়কুটোর মতো। ও এক জন শিল্পী। লম্বা। অসম্ভব সুন্দর কথা বলে। অসম্ভব উষ্ণ। আমার শহরেই থাকে। আর তার থেকেও বড় কথা ও সেই সব কিছু যা আমি আমার ‘স্বপ্নের পুরুষ’-এর মধ্যে খুঁজেছি। সার্কাস দেখতে গিয়েছিলাম আমরা। কী দেখলাম কে জানে! আমাদের হাঁটুতে হাঁটুতে ছোঁয়া লাগছিল। শিউরে উঠছিলাম ভাললাগায়। এ রকম যে কত দিন হয়নি! আদৌ কখনও হয়েছে কি? |
|
একসঙ্গে ডিনার করলাম। ফেরার সময় মেট্রো করে ফিরছিলাম দু’জনে। আমি ওর গা ঘেঁষে বসেছিলাম। কথা না বলে ওর কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিয়েছিলাম। ও আমায় এক হাত দিয়ে ধরে রেখেছিল আলতো করে। আমার খোলা চোখে তখন অনেক স্বপ্ন। চলে যাওয়ার সময় আমার গালে আলতো চুমু খেল ও, ‘মমমমম’ বলে মিঠে হাসল। সেই আমাদের শেষ দেখা। পাঁচ দিন পরে ওর কাছ থেকে একটা ই-মেল পেলাম। ‘সেই রাতটা খুব সুন্দর কেটেছিল। কিন্তু আমার মনে হল তোমায় বলে দেওয়া উচিত যে মাত্র কিছু দিন আগেই আমার একটা বহু দিনের গভীর সম্পর্ক ভেঙে গেছে। সেই আঘাতটা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ডেট করা শুরু করতে চাইছি ঠিকই। কিন্তু ওই টুকুই। আমার মনে হল, তুমি আমার কাছে আরও বেশি কিছু চাও। তোমাকে অন্ধকারে রাখতে চাই না।’
|
ফাইল মিলিয়ে |
‘বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পার্টনার খুঁজে দিই আমরা।’ ‘ম্যাচ মেকারস ডট কম’ আর ‘ই হারমনি ডট কম’-এর এই দাবিতে নড়েচড়ে বসলাম। গাঁটের পয়সা খরচা করে মেম্বারও হলাম। ওদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি হল, আমার পছন্দ-অপছন্দ, পড়াশোনা, ভালবাসার মানুষের কাছে কী চাই ইত্যাদি জেনে নিয়ে আমার একটা ফাইল বানানো আর সেই ফাইল মিলিয়ে পুরুষদের সঙ্গে ডেটে পাঠানো। যে ক’জনের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম, তাদের মধ্যে বিজ্ঞানসম্মত কোনও ম্যাজিক পেলাম না এবং রেচেল ম্যাকাসেক সিঙ্গলই থেকে গেল। তা হলে কি আমার শহরে আর একটাও ডেট-যোগ্য পুরুষ নেই? কিংবা যাঁরা ছিলেন তাঁরা সবাই অন্য শহরে চলে গেছেন? পরবর্তী কয়েকটা মাস আমেরিকার ছোট বড় পাঁচটা শহর ঘুরে ফেললাম নতুন পুরুষের সন্ধানে। নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, শারলট, ডেনভার, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া। শহরগুলোতে যেখানে যাকে চিনতাম বললাম ডেটিং নিয়ে এ রকম একটা এক্সপেরিমেন্ট করছি। বেশ কয়েকটা উইক এন্ডের দৌড়দৌড়ি শেষে বুঝলাম জায়গা পাল্টালেই ডেটিং-এর চেহারা-চরিত্র পাল্টে যায় না। |
অতএব |
|
পরের কয়েক মাস ডেটিং নিয়ে বেশ কিছু বই পড়ে ফেললাম। ডেটিং গুরুর সাহায্য নিলাম নিজেকে ভাল ভাবে পড়ে ফেলতে। আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, আরও বহির্মুখী হওয়া এবং নিজেকে বিজ্ঞাপন করার আর্টটা রপ্ত করে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করলাম। নিজেকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করলাম ভেঙে পড়লে চলবে না, ব্যর্থতায় ভয় পেলে চলবে না। কেউ না কেউ নিশ্চয়ই আমার জন্য সত্যি অপেক্ষা করে আছে। এর মধ্যে আরও এক জনের সঙ্গে আলাপ কিছু দূর এগিয়ে ভেঙে গেছে। মাসখানেকের ডিপ্রেশনের পর আমি আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। এখন আমার ডেটিং সার্কেলে বেশ নাম হয়েছে। অনেক পুরুষ আমাকে চেনে, কেউ কেউ আমাকে ‘ভাল ডেট’ বলে সার্টিফিকেটও দিয়েছে। তবে প্রেম, বিয়ে, সংসার এইগুলো খুঁজে পেতে গেলে আমাকে আরও অপেক্ষা করতে হবে। ঠিক করেছি, কিছুতেই হাল ছাড়ব না। খোলা মনে ভালবাসার অপেক্ষায় থাকব। আর হ্যাঁ, ব্যাগে সব সময় রাখব আমার ঘন কালো মাসকারা আর গোলাপি লিপ গ্লস। বলা তো যায় না, কখন তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়!
|
সূত্র: দ্য সায়েন্স অব সিঙ্গল, রেচেল ম্যাকাসেক, রিভারহেড, ২০১১ |
|
|
|
|
|