সপ্তম স্থানে বাংলা অবাধে নাবালিকা বিয়ে
মহানগরেও, সভায় উদ্বেগ

হু আন্দোলনের পীঠস্থান কলকাতা নারীবাদী আন্দোলনেরও কেন্দ্রস্থল। অথচ সেই মহানগরেই প্রতি সাতটি মেয়ের মধ্যে একটি মেয়ের বিয়ে হচ্ছে ১৮ পেরোনোর আগেই। শুক্রবার এক আলোচনাসভায় এই তথ্য প্রকাশিত হল। আরও জানা গেল, ১৮ বছরে পৌঁছনোর অনেক আগেই এ রাজ্যের প্রায় ৫৪ শতাংশ নাবালিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। দেশের নিরিখে এই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ আছে সপ্তম স্থানে।
রাজ্যে বাল্য বিবাহ ও কন্যাভ্রূণ হত্যা রোধে আইন আছে। কিন্তু সেটা যে যথেষ্ট নয়, ওই আলোচনাসভাতেই তা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তাঁর মন্তব্য, শুধু আইন করে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব নয়। মন্ত্রী জানান, এই দু’টি ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থাগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাজ্য সরকার। গ্রামে গ্রামে প্রচারের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধের বিষয়টি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। সাবিত্রীদেবী বলেন, “বিষয়টি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে আলোচনা করা হবে।” প্রতিটি শিশুকন্যাকে স্কুলমুখী করা এবং বাল্য বিবাহ রোখার কাজে পঞ্চায়েতকে সামিল করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদে যে-সব নাবালিকা বাবা-মায়ের মতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বিয়ে আটকে দিয়েছে, অনুষ্ঠানে হাজির ছিল তারাও। লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর তাগিদ থেকেই ওই সব নাবালিকা অল্প বয়সে বিয়ের বিরোধিতা করেছে। তাদের দেখে অন্য মেয়েরাও যাতে বাল্য বিবাহ রুখে দিতে এবং পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহী হয়, সেই জন্য ওই সাহসিনীদের পুরস্কৃত করবে সরকার।
যৌথ ভাবে এ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ইউনিসেফ ও সমাজকল্যাণ দফতর। সাবিত্রীদেবী সেখানে বলেন, “আইন ভেঙে রাজ্যে লিঙ্গ নির্ধারণ হচ্ছেই। কন্যাভ্রূণ হত্যাও চলছে। কিছুতেই এগুলোর প্রতিকার করা যাচ্ছে না। সরকারি ভাবে সব বিয়ে নথিভুক্ত করা গেলে বাল্যবিবাহ কিছুটা আটকানো যাবে বলে মনে হয়।”
জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, বাল্য বিবাহে দেশের মধ্যে সব চেয়ে খারাপ অবস্থা বিহারের। সেখানে ৬৮.৯% মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরের আগেই। এ রাজ্যে বাল্য বিবাহ ও কন্যাভ্রূণ হত্যার উদ্বেগজনক ছবি উঠে এসেছিল ২০১১ সালের জনগণনায়। সেই হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে প্রতি হাজার পুরুষ-পিছু নারীর সংখ্যা ৯২৪। এক দশক আগে, ২০০১ সালে এই অনুপাত ছিল হাজার পুরুষ-পিছু ৯৩৪ জন মহিলা। কলকাতায় প্রতি হাজার পুরুষ-পিছু নারীর সংখ্যা ৮৯১।
বাল্য বিবাহ বা কন্যাভ্রূণ হত্যা প্রতিরোধ আইনে ফাঁক থাকায় এ রাজ্যে পরিস্থিতি বদলায়নি বলে মন্তব্য করেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বাল্য বিবাহ ও কন্যাভ্রূণ হত্যা বন্ধ করার মতো পর্যবেক্ষক নেই। কী শাস্তি হবে, আইনে তা স্পষ্ট নয়। ফলে গ্রামেগঞ্জে মারাত্মক চিত্রটাই বহাল রয়েছে।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে সাবিত্রীদেবী জানান, বিভিন্ন সরকারি হোম থেকে বাচ্চারা যাতে পালাতে না-পারে, সেই ব্যাপারে আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, “হোম থেকে বাচ্চারা পালানোর চেষ্টা করলেই সাইরেন বেজে উঠবে। প্রাথমিক ভাবে ২৮টি সরকারি হোমে এই ব্যবস্থা হবে।”
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.