নাটক সমালোচনা...
ফিরছেন বিবেকানন্দ
র কয়েক মাসের মধ্যেই কলকাতায় অবতীর্ণ হবেন রামকৃষ্ণ পরমহংস, গিরিশ ঘোষ, ভগিনী নিবেদিতা, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, অ্যানি বেসান্ত এবং সারদা মা। এবং অবশ্যই স্বামী বিবেকানন্দ।
চলাফেরা করবেন তাঁরা আপনাদের সামনেই।
কলকাতার অন্তত দু’টি নাট্যদল কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে যে! বিবেকানন্দের সেই সময়কে মঞ্চে ফেরত আনতে। এর আগে কোনও ঐতিহাসিক চরিত্রকে নিয়ে এমন উৎসাহ দেখিয়েছে বলিউড; ভগত সিংহকে নিয়ে একাধিক ছবি, এমনকী হালে সূর্য সেনকে নিয়েও বলিউডেই দু’টো ছবি হয়েছে। এ বার সেই ট্রেন্ড কলকাতার নাটকেও। এক দিকে লোককৃষ্টি, অন্য দিকে সংবেদ। আসলে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবার্ষিকীর বছরেই যে তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে বিবেকানন্দের সার্ধশতবার্ষিকী উদ্যাপনের। এখনও বছর দু’য়েক বাকি ২০১৩-র। কিন্তু নাটকের চরিত্র হিসেবে বিবেকানন্দ এতটাই লোভনীয় যে এ বছরের শেষেই তিনি ফিরে আসতে চলেছেন কলকাতার মঞ্চে লোককৃষ্টি আর সংবেদের হাত ধরে। প্রথম দলের নাটকের নাম ‘বিলে’। দ্বিতীয় দলের নাটকের নাম ‘ভারতের সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ’।
এ বার ‘পরিবর্তন’ চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও! তবে এই ‘পরিবর্তন’ অবশ্যই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগানের কাঙ্ক্ষিত ‘পরিবর্তন’ নয়। বিধানসভা ভোটের আগে নিজের দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের আচরণে ‘সংশোধন, পরিবর্তন’ চান মুখ্যমন্ত্রী। চান, মানুষের কাছে গিয়ে সিপিএম-এর কর্মীরা তাদের কথা শুনুন| চান, মানুষের উপরে দলের 'মাতব্বরী' বন্ধ হোক!
এ বার ‘পরিবর্তন’ চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও! তবে এই ‘পরিবর্তন’ অবশ্যই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগানের কাঙ্ক্ষিত ‘পরিবর্তন’ নয়। বিধানসভা ভোটের আগে নিজের দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের আচরণে ‘সংশোধন, পরিবর্তন’ চান মুখ্যমন্ত্রী। চান, মানুষের কাছে গিয়ে সিপিএম-এর কর্মীরা তাদের কথা শুনুন| চান, মানুষের উপরে দলের 'মাতব্বরী' বন্ধ হোক!
বিশালত্বের দিক দিয়েও মোটে ৩৯ বছর ৫ মাস কয়েক দিনের জীবনটা এতটাই বৈচিত্রময় যে, তাঁকে নাটকের দু’-আড়াই ঘণ্টার চৌহদ্দিতে ধরতে দুই পরিচালকেরই প্রায় ঘুম ছুটে যাওয়ার জোগাড়। “আমার তো ভীষণ ভয় করছে। এখন কেবল ইন্টারনেট ঘাঁটছি, আর রাশি রাশি বই পড়ছি, সে সময়কার পোশাক, কথা বলার ধরন এগুলো বোঝার জন্য,” বলছেন লোককৃষ্টির পরিচালক ফাল্গুনি চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে সংবেদের পরিচালক এবং নাট্যকার এক জনই সমীর মজুমদার। তাঁর কথায়, “গোস্পদে জমা জলে যেমন আকাশের প্রতিফলন পড়ে, আমার নাটকও তেমনই।”
তবে এই টেনশনের মিলই শেষ। দুই দল, দুই নাট্যকার এবং দুই পরিচালক একেবারে ভিন্ন ফর্মে ধরতে চাইছেন বিবেকানন্দকে। সংবেদ ধরছে নরেন থেকে বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার সময়টা। আবার লোককৃষ্টির ‘বিলে’ ধরতে চাইছে এক দিকে সন্ন্যাসী আর অন্য দিকে সংগঠনের নেতা বিবেকানন্দের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব সেটাকে। সংবেদের বিবেকানন্দ এগোচ্ছে শ্রুতির মধ্যে দিয়েতার মাঝে মঞ্চে আসছেন চরিত্ররা। লোককৃষ্টি ছোট বিলে আর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে ধরতে চাইছে নরেন থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার রাস্তাটা।
আর একে অপরের অজান্তেই এক অন্য ধরনের ‘ছুট’-এও অংশগ্রহণ করছে দু’টি দলই।
তাই বিবেকানন্দের চরিত্রে লোককৃষ্টির পাখির চোখ তারকা দেবশঙ্কর হালদার। ‘রুদ্ধসঙ্গীত’-এ জর্জ বিশ্বাস করার পর এ বারে তাঁকেই বিবেকানন্দ হিসেবে পেতে চাইছেন ফাল্গুনি। “দু’বার নাটকটা আগাপাস্তালা শুনেছে দেবশঙ্কর, কিন্তু পাকা কথা এখনও দেয়নি,” জানাচ্ছেন তিনি। একই কথা দেবশঙ্করেরও “ঐতিহাসিক চরিত্র করাটা কোনও ব্যাপার নয়। আমি তো কেবল ‘রুদ্ধসঙ্গীত’ই করি না। আরও অনেকগুলো নাটকেরই অংশ আমি। এই নাটকটাও যদি করি, তার আগেও আরও কয়েকটা নাটক করে ফেলব আমি।”
কিন্তু বিবেকানন্দের চরিত্রে অভিনয় করাটা কতটা আকর্ষণীয় তাঁর কাছে? “আকর্ষণীয় তখনই হবে, যখন ‘বিলে’র বিবেকানন্দ গালিলেওর মতো মস্তিষ্কের অলিগলি, দ্বন্দ্ব সব কিছু নিয়ে সামনে আসবে। স্ক্রিপ্টটা শুনেছি। দ্বিতীয় ভাগে কয়েকটা চেঞ্জও সাজেস্ট করেছি। এ বার দেখা যাক।” এক দলের পাখির চোখ যদি হয়ে থাকে পোড় খাওয়া দেবশঙ্কর, তো অন্য দলে একেবারে আনকোরা নতুন ছেলেদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। টিসিএস-এর ইঞ্জিনিয়ার। “একেবারে মাটির তাল। তাই ওকে একেবারে আমার মতো করে গড়েপিটে নেওয়াটা আরও সহজ হয়েছে,” জানাচ্ছেন সমীর। তবে সংবেদ যেখানে বিখ্যাতদের এনে ফেলেছে, সেটা হল গানে। লোপামুদ্রা মিত্র, মনোময় ভট্টাচার্যের মতো গায়করা ইতিমধ্যেই সংবেদের নাটকের জন্য গান রেকর্ড করে ফেলেছেন। সঙ্গে আছেন সুপ্রতীক দাস। এবং স্তোত্রপাঠে শিবাজি চট্টোপাধ্যায়।
দেবশঙ্কর হালদার, লোপামুদ্রা মিত্র আর মনোময় ভট্টাচার্য
লোককৃষ্টির ‘বিলে’তেও গানের একটা বিরাট ভূমিকা থাকছে। “আসলে বিবেকানন্দ নিজে দারুণ গান গাইতেন। রামকৃষ্ণ মাঝে মাঝেই ওঁর কাছে গান শোনার আব্দার করতেন। সেই সব গান নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় খুঁজে বের করেছেন। কিন্তু সেগুলো ঠিক কোন সুরে সে সময়ে গাওয়া হত, তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব পড়েছে আমার ওপর,” বলছেন ফাল্গুনি, “তারই খোঁজ চালাচ্ছি, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছি।”
কিন্তু বিবেকানন্দের পুরো জীবন নিয়ে নাটক লেখাটা ঠিক কত বড় চ্যালেঞ্জ? ‘বিলে’র নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “বিবেকানন্দের মতো একটা চরিত্রকে নিয়ে নাটক লেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু প্রথমে একেবারেই কনফিডেন্ট ছিলাম না। প্রায় মাস সাতেক লেগেছিল পুরো নাটকটা নামাতে।” অন্য দিকে সমীর মজুমদার বলছেন তাঁর লেগেছে প্রায় দেড় বছর।
কিন্তু লোককৃষ্টি যদি দেবশঙ্করকে না পায়? তিনি তো এখনও পাকা কথা দেননি। “তা হলে আমাদের খুব সমস্যা হবে।” কিন্তু এই মুহূর্তে টালিগঞ্জে যাঁকে নিয়ে কাড়াকাড়ি, সেই আবিরের দিকে কেন তাকাচ্ছেন না ফাল্গুনি? নিজের পুত্রকেও তো বিবেকানন্দ হিসেবে মঞ্চে তোলা যায়। “ওকে ওই চরিত্রে মানাবে না,” জানাচ্ছেন পরিচালক, “তা ছাড়া ও এখন যা ব্যস্ত, সময় দিতে পারবে বলেও মনে হয় না।”
দু’টো নাটকই নামতে চলেছে এ বছরের শেষের দিকে। এখন দেখার কোন স্বামী বিবেকানন্দকে ঠিক কী ভাবে গ্রহণ করে আকাদেমি চত্বর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.