দশ বছর ধরে ‘ভাবনা আজ ও কাল’ রবীন্দ্রনাথের নানা সৃষ্টিকে নানা ভাবে উপস্থাপনা করেছেন, যার মধ্যে নবতম পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কর্ণধার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের কাছে নাচ-ই প্রাধান্য পেলেও দশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান ছিল বৈচিত্রে ভরা এবং তা রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে নয়। বিড়লা সভাঘরে ‘তিন অধ্যায়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল সরোদে সঞ্জয় চক্রবর্তী ও তবলায় তন্ময় বসুকে নিয়ে আধ ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান। সঞ্জয় বাজালেন রাগ খাম্বাজে আলাপ, জোড়, ঝালা। সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাজানো হলেও সমগ্র অনুষ্ঠানটি ছিল সুরমাধুর্যে ভরা। বিশেষ ভাবে ‘যদি তোর ডাক শুনে’ ও ঝালা অংশে সঞ্জয় ও তন্ময় একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠেন। |
দ্বিতীয় অধ্যায়ে এল রবীন্দ্রনাথের ‘সাধারণ মেয়ে’র নৃত্যনাট্য রূপ। পাঠে শ্রীলা মজুমদার, নৃত্যনির্মিতি ও মূল চরিত্রে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সঙ্গে তাঁর সহযোগী শিল্পীরা। প্রথম থেকে শেষ অবধি নৃত্যানুষ্ঠানটি ছিল পেশাদারিত্বে ভরা। চমৎকার পড়েছেন শ্রীলা। এই ধরনের কাব্যপাঠে তিনি অসাধারণ। আর ঋতুপর্ণার নৃত্যের প্রতিটি মুহূর্ত দৃষ্টিনন্দনময়। পদছন্দ ও সমগ্র মঞ্চ জুড়ে যে গতিশীলতা তিনি দেখিয়েছেন, তা এক কথায় অনবদ্য। তবে কিছু গানের সংযোজনা নিয়ে প্রশ্ন জাগে ও নৃত্যনাট্যের সামগ্রিক ভাবনার সঙ্গে সহমত পোষণ করা না গেলেও সামগ্রিক আনন্দপ্রাপ্তিতে তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। পরবর্তী অধ্যায়ে রবীন্দ্রনাথের ‘ঘরে বাইরে’ ও ‘চার অধ্যায়’-এর সামান্য অংশ পাঠ করলেন ব্রাত্য বসু, দেবশঙ্কর হালদার ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিন জনেই দক্ষ অভিনেতা। কোথাও খামতি ছিল না। শুধু অতৃপ্তি থাকল পূর্ণ অংশ শোনা গেল না বলে। তন্ময় বসুর তালতন্ত্রের পরিসীমাও ছিল সংক্ষিপ্ত। |
সব শেষে নিবেদিত হল রবীন্দ্রনাথের ‘সাগরিকা’ নৃত্যনাট্য। ঋতুপর্ণার নাচের কথা আগেই উল্লেখিত। পাঠে রায়া ভট্টাচার্য ও দেবশঙ্কর হালদার উভয়েই মুগ্ধ করেছেন। এ দিনের অনুষ্ঠানের সঞ্চালকও ছিলেন রায়া। সঞ্চালক থেকে তিনি যখন কাব্যপাঠের ভূমিকায় এলেন, তখন তাঁর উচ্চারণে যে পার্থক্য ধরা পড়ে তাতেই বোঝা যায়, ক্ষেত্র বিশেষে নিজেকে কী ভাবে পরিবর্তন করতে হয়। সোহিনী মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রাবলি রুদ্র, শ্রেয়সী মিত্র ও শৌনক চট্টোপাধ্যায়ের প্রত্যেকটি গান সুগীত। |