পুজোর মুখে অপরাধ বাড়ছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুঠপাট কিছুই বাদ নেই। বরাহনগর থেকে বীজপুর শিল্পাঞ্চলের ১১টি থানা এলাকায় এই বাড়তে থাকা অপরাধ নিয়ে চিন্তিত বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের গাফিলতির জন্যই দুষ্কৃতীদের এই বাড়বাড়ন্ত।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের কর্তারা গাফিলতির অভিযোগ মানেননি। তবে অপরাধ যে বাড়ছে, তা মেনে নিয়েছেন তাঁরা। অপরাধ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারার পিছনে তাঁদের সাফাই, থানাগুলির পুরনো আধিকারিকরা বদলি হয়েছেন সম্প্রতি। নতুন আইসি-দের এলাকা চিনতে সময় লাগছে। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। তা ছাড়া, বেশ কয়েক মাস ধরে ব্যারাকপুরে এসডিপিও পদটি ফাঁকা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারও সাড়ে তিন মাসের জন্য ছুটিতে গিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ দুই পুলিশকর্তার অনুপস্থিতি বিপাকে ফেলেছে থানাগুলিকে। প্রতিদিনের অপরাধ এবং তার তদন্ত নিয়ে তদন্তকারীরা নিয়মিত যে ভাবে এসডিপিও এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলোচনা করতেন, এই পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “আমি নিজে নিয়মিত তদন্তকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। তা ছাড়া, সবাই মিলেই এই সমস্যাটির মোকাবিলা করছি।” তাঁর আশ্বাস, “ব্যারাকপুরের এসডিপিও পদটি বেশিদিন ফাঁকা থাকবে না। নতুন নিয়োগ হবে। তাতে প্রাথমিক ভাবে সমস্যা মিটে যাবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন থানা এলাকায় রাত-পাহারার দলগুলিকে সক্রিয় করা হয়েছে।”
রাজ্য প্রশাসনের তরফে প্রতিবারই পুজোর আগে শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাটো করার নির্দেশ থাকে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু গত এক মাসে এমন কোনও দিন নেই, যে দিন শিল্পাঞ্চলে চুরি-ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। এ তথ্য পুলিশেরই। বেশির ভাগ অপরাধেরই কিনার হয়নি। অধরা অপরাধীরা। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “এলাকারই কিছু দুষ্কৃতী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের এলাকায় ঢুকে পড়েছে। ঘাঁটি গেড়ে তারা শিল্পাঞ্চলে অপরাধমূলক কাজকর্ম চালাচ্ছে।” প্রসঙ্গত, বড় কোনও অপরাধ হলে তা দেখার জন্য ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে পুলিশের বিশেষ বাহিনী ‘স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ’ রয়েছে। এসডিপিও এবং এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার না-থাকলে তাঁদের কাজ ভাগ করে নেওয়ার কথা জেলার বাকি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ডিএসপি-দের। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত বরাহনগরে খুনের কিনারায় জেলা পুলিশ ব্যর্থ হওয়ায় তা সিআইডি-র হাতে গিয়েছে। ঘোলায় দিনেরবেলা বাড়িতে ঢুকে লুঠের ঘটনার কিনারা হয়নি। ব্যারাকপুরের লজে তরুণী খুনের ঘটনাতেও পুলিশ অন্ধকারে। বৃহস্পতিবারই ব্যারাকপুর আদালত চত্বর থেকে এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় এক অভিযুক্ত পুলিশের হাত ছাড়িয়ে পালায়। ফের বড় কোনও অপরাধ হওয়ার আগে পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। |