দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদী। স্কুল-কলেজে, বিডিও অফিস, কাছারিতে যেতে নদীবাঁধের উপর দিয়ে ইটপাতা রাস্তাই ভরসা। এতদিন ওই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করছিলেন স্থানীয় মানুষ। কিন্তু দিন কয়েক আগে নদীবাঁধের উপরে ওই রাস্তায় প্রায় ৩০০ মিটার এলাকা জুড়ে ধস নামে। ধস সারিয়ে রাস্তাটি ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হলেও আজ পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন পথচারীরা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নামখানা বাজার থেকে নারায়ণপঞ্জ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা ওই নদীবাঁধের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয় ৪-৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের। অন্যান্য সময় ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে সমস্যা না হলেও বর্ষার সময় খুবই অসুবিধায় পড়তে হত পথচারীদের। তাঁদের সুবিধার কথা ভেবে কয়েক বছর আগে ওই রাস্তায় ইট পাতা হয়। ওই রাস্তা দিয়ে এলাকার কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী নামখানা হাইস্কুল, নামখানা বাজার সি এস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। নানা কাজে বিডিও অফিস, থানায় যাতায়াত করেন স্থানীয় মানুষ। কাকদ্বীপ মহকুমা হাসাপাতালে রোগী নিয়ে আসোর ক্ষেত্রেও এলাকার মানুষ এই রাস্তাই ব্যবহার করেন। কয়েকদিন আগে নদীতে ভাটা চলাকালীন ওই রাস্তার ৩০০ মিটার এলাকায় ধস নামে। বর্তমানে রাস্তার এমনই অবস্থা যে যাতায়াক করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উপর স্থানীয় মানুষের আশঙ্কা, এখনই ওই ধস মেরামত করা না হলে সামনের ভরা কোটালে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। বিপর্যয় রুখতে নদীবাঁধের পাকাপাকি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। পাশপাশি তাঁদের অভিযোগ, বাজারের কাছে নদীবাঁধ লাগোয়া একটি শ্যালো পাম্প মেশিন বসানো রয়েছে। মাছ ধরার ট্রলারগুলি ওই পাম্প থেকে জল নেওয়ার জন্য বাঁধের কাছে আসা-যাওয়ার কারণেই এই অবস্থা। জল নিতে এলে ট্রলারগুলি বাঁধের গায়ে ক্রমাগত ধাক্কা খায়। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক স্থানীয় বাসিন্দা ভৈরব দাস ওই শ্যালোটি বসায়। শ্যালো থেকে জল নিতে দৈনিক ৭০ থেকে ৮০টি ট্রলার আসে। কোনও জেটি না থাকায় ট্রলারগুলি ক্রমাগত বাঁধের গায়ে ধাক্কা খেতে থাকে। ফলে ক্ষতি হচ্ছে বাঁধের। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক ভুঁইয়া বলেন, “আমাদের স্কুলের আড়াই থেকে তিন হাজার ছাত্রছাত্রী ওই বাঁধের রাস্তা দিয়ে নিত্য যাতায়াত করে। বর্তমানে রাস্তার যা অবস্থা তাতে যাতায়াত করাই সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দা অশোক প্রধান, স্বদেশরঞ্জন দাসের অভিযোগ, “ওই শ্যালো পাম্প বন্ধ করার জন্য বহু বার প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। বাঁধের ক্ষতির ব্যাপারেও বলা হয়েছে। কিন্তু কোনও সুরাহাই হয়নি।”
বাঁধের উপর দিয়ে ওই তিন কিলোমিটার রাস্তায় কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই। দিনের বেলায় কোনওরকমে যাতায়াত করা গেলেও রাতে ওই রাস্তার ধসে যাওয়া অংশ দিয়ে যাতায়াত করা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্যালোর মালিক ভৈরববাবুর বক্তব্য, “আমি নিজের জমিতেই শ্যালো বসিয়েছি। মৎস্যজীবী ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে জল সরবরাহ করি। বিনিময়ে সামান্য আয় হয়। গ্রামের কিছু মানুষ শত্রুতা করতেই এই অভিযোগ তুলেছে।”
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “ট্রলারগুলি জল নিতে যাওয়ায় যদি বাঁধের ক্ষতি হয় তাহলে ওখান থেকে জল নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। পরিবর্তে যেখানে ট্রলার থেকে মাছ ওঠানো-নামানো হয়, সেখান থেকে জল নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ট্রলার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।” বাঁধে ধস নামার প্রসঙ্গে সেচ দফতরের মৌসুনি সাব ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার প্রদীপ হালদার বলেন, “ওই পাম্পহাউস নিয়ে সমস্যার বাপারে মহকুমাশাসককে জানিয়েছি। বর্তমানে বাঁধের অবস্থা বিপজ্জনক। ওই রাস্তা দিয়ে ভারী কিছু বহন করতে নিষেধ করা হয়েছে। শীঘ্রই ওই ধস মেরামতির ব্যবস্থা হবে।” |