|
|
|
|
স্মৃতি |
বঞ্চনা সলিলে |
সেটা এক রবিবারের সকাল।
সলিল চৌধুরী আমায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আমার ক্র্যাফ্ট, স্কিল, টেকনিক, স্টাইল এ সব ছাড়ো। কী কী গান দিয়ে তুমি, আই মিন ইউ, আমাকে মনে রাখতে চাইবে?” আমি সত্যি করেই বললাম, আপনার সব গান দিয়ে। উনি হেসে বললেন, “ধুর! চালাকি করছ।” সলিলদাকে এতটা ইমোশনাল তার আগে কখনও দেখিনি, নিজের কাজ নিয়ে খুব গর্বিত স্বরে বলতে শুনেছি, কিন্তু এত সন্তর্পণ প্রশ্ন করতে শুনিনি; পাছে ভাবেন সত্যিই চালাকি করছি তাই বললাম, লতার ‘আ যা রে পরদেশি’ কী ‘ও সজনা, বরখা বাহার লায়ি’ কিংবা হেমন্তদার ‘রানার’, ‘গাঁয়ের বধূ’, ‘পাল্কির গান’ ছেড়ে দিচ্ছি, শুধু ‘আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা’ গানটাই তো আমাকে সারা জীবন বশ করে রাখবে।
মুহূর্তের মধ্যে একটা ভাবের বিবর্তন হল সলিলদার মধ্যে। একটু উদাস চোখে জিজ্ঞেস করলেন, “গানটার শেষ পঙক্তিগুলো মনে করতে পারছ? আমি কিন্তু আমার জীবনের ছোঁয়াই একটু রাখতে চেয়েছি, যখন বলছি ‘আমি আবার কাঁদব হাসব এই জীবন জোয়ারে ভাসব/আমি বজ্রের কাছে মৃত্যুর মাঝে/রেখে যাব নিশানা।’” আজ ওঁর ষোড়শ মৃত্যুবার্ষিকীর পাশে এসে কেন জানি না, ওঁর এই কথাগুলোকে একটা বিনম্র পরিচয় ঘোষণা ও ভবিষ্যদ্বাণীর মতো শোনাচ্ছে। রবীন্দ্রশতবর্ষে, ১৯৬১-তে, লেখা ও সুর করা এই গান রবীন্দ্র-পরবর্তী শ্রেষ্ঠ বাঙালি সুরকার কি কিছুটা সচেতন ভাবেই সৃষ্টি করেছিলেন? জানি না। বুঝতে পারি না এটাও যে তাঁর নিকট বন্ধু দেবব্রত বিশ্বাসের মতো বাঙালি মনের এত গভীরে স্থান করেও শেষ অবধি তাঁকে এ রকম ছায়াচ্ছন্ন থাকতে হয় কেন? কী জানি, গানে গানে এত প্রবল ভাবে আছেন বলেই কি জন্মদিনে, মৃত্যু তারিখে, সরণিনামে, ফলকে, ফুলমালায় নেই? দেবব্রতর মতো সলিলদাকেও যেটুকু-যা দেখেছি তাতে মনে হয় এই পরিণতিটা ওঁকে দুঃখ দিত না। |
সলিল চৌধুরী গান নিয়েই জন্মেছিলেন ঠিক কথা। কিন্তু ওঁর মুম্বই যাওয়ার পাসপোর্ট এসেছিল গল্প লিখে। যাঁকে পৃথিবী মনে রাখে তাঁর সুরের জন্য, তিনি কিন্তু জীবনের গোড়ায় এবং শেষে দেখিয়েছেন লিখিত বাণীর সঙ্গে তাঁর জীবনের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। ‘গাঁয়ের বধূ’ গান হওয়ার আগে কিন্তু কবিতা হয়ে জন্মেছিল। সুকান্তর কবিতা নিয়ে যখন তিনি প্রথম হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছে যান, প্রথম মুহূর্তে হেমন্ত কিন্তু তাঁর প্রতিভা চিনতে পারেননি। যে গানটি ওঁকে দিয়ে গাওয়ানোর জন্য সলিল ওঁর বাড়ি গিয়েছিলেন সেই গানটি হেমন্তর মনে ধরেনি। ব্যর্থ মনোরথ সলিল নেমে আসছিলেন সিঁড়ি বেয়ে, হঠাৎ মনে হল আর একটা গান শোনানো দরকার। তিনি আবার উঠে গিয়ে কবিতার খাতা খুলে সুর শোনালেন। হেমন্তের কথায়, “আমি সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম এ এক আশ্চর্য কীর্তি।” বলা যায় সেই মুহূর্তেই জন্ম নিল রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলার সেরা কাব্যগীতি। ‘রানার’, ‘পাল্কির গান’, এবং ‘গাঁয়ের বধূ’র পর হেমন্ত বা সলিল কাউকেই আর কবিতার গানে কেউ ছাপিয়ে যেতে পারল না। দুঃখের বিষয় এর পরেও বাকি জীবন কিন্তু সলিলকে লড়ে যেতেই হল। গণনাট্য সংঘের জলসায় জলসায় রাজনৈতিক প্রচারের মাধ্যম হয়েছিল সলিলের বাঁধা গান। কিন্তু বাম রাজনীতি কখনওই সে ভাবে বহু দিন শক্তির মঞ্চে আরোহণ করেনি। যখন সত্যি সত্যি করল কয়েকটি রাজ্যে, সলিলকে দেখা হল মুম্বইয়ের ফিল্ম জগতের পুরোধা পুরুষ হিসেবে। আটপৌরে ভাষায় ‘না ঘর কা না ঘাট কা’।
আর কখন জানি ‘গাঁয়ের বধূ’র নির্মাতা ক্রমশ আমাদের কাছে এক দুখানুভূতির গীতিকার, সুরকার হিসেবে ধরা পড়লেন। এ কথা ওঁকে বলেওছিলাম এক টেলিসিরিয়ালে সুরারোপের জন্য শেষ বারের মতো ওঁর মুম্বই যাবার আগে। ময়দানের এক ক্লাব টেন্টে ওঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। তার পর মাঠে বসে হাতে পানীয় নিয়ে এ কথা শুনে কী রকম এক উন্মনা সুরে বললেন, “তুমি বুঝতে পার আমার গানে এই ‘লিল্ট’ কোত্থেকে আসে? এই দোলা আসে গভীর দুঃখ ও বেদনা থেকে। নিজের মুখে এ সব বলা যায় না, তুমি আমাকে প্রশ্ন করে করে লেখো, আমি বলব।”
সে বার মুম্বই গিয়ে সিরিয়ালে এক অপূর্ব গান বেঁধে কলকাতা ফিরে চিরকালের মতো চলে গেলেন সলিল। না-বলা কথা বলা হয়নি ঠিক আছে, কিন্তু কত যে কাজ না করে চলে যেতে হল, হায় সরস্বতী! কত দিন ধরে যে কলকাতা নিয়ে একটা সিম্ফোনি করায় মেতেছিলেন। কলকাতার বুকে ‘কলকাতা’ সিম্ফোনি নামাবেনই, এমনই বদ্ধপরিকর। সে ‘কলকাতা’ উনি স্টেজে আনতে পারেননি। |
|
|
লতা মঙ্গেশকর এবং সবিতা চৌধুরীর সঙ্গে |
মৃণাল সেন ও বাসু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে |
|
কেউ ভাবতে পারে ‘মধুমতী’র মতো এক সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত কীর্তির পরেও মুম্বইতে বাঁধা বাজার হয়নি সলিলের। তখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘নাগিন’-এর অসামান্য সাফল্যের পরেও ঘরে ফেরার কথা ভাবছেন। সলিল বলতে গেলে আগ মার্কা উদ্বাস্তু, তাঁর যেটুকু ‘দো বিঘা জমিন’সেটা তাঁর প্রতিভা। তার বাইরে তাঁর না হল মুম্বই, না হল কলকাতা। এখনও বলিউডের সেরা সঙ্গীতমুখর ছবির যখন আলোচনা হয় সলিলকে দেখা হয় এক সেরা বাঙালি প্রতিভা হিসেবে। ক’জন খেয়াল রাখে ‘মধুমতী’, ‘আনন্দ’, বা ‘পুনম কি চাঁদ’-এর মতো যে স্বপ্নিল সুরে বম্বেকে বেঁধে দিয়েছিলেন সলিল তার কোনও আঞ্চলিক পরিচিতি হওয়ার নয়। ক’জন খেয়াল রাখে যে লতা মঙ্গেশকরের স্বনির্বাচিত সেরা ১০টি গানের দু’টোই সলিলের সুরে? ক’জন মনে রাখে মুকেশ সেরা জাতীয় গায়ক হয়েছিলেন ‘আনন্দ’-এ সলিলের সুরে ‘কহি দূর যব দিন ঢল যায়ে’ গেয়ে? তার কিছু দিন পরে একদিন সলিল চৌধুরী আমাকে এক বাক্স এলপি রেকর্ড যাতে বেঠোফেনের ৯টা সিম্ফনি ধরা আছে দেখিয়ে বলেছিলেন “এটা লতার দেওয়া। বিলেত থেকে নিয়ে এসে উপহার দিয়ে বলেছিল, ‘দাদা এ জিনিস আপনাকে ছাড়া আর কাকে দেব?”’ তার পর বললেন, “মুকেশ আমাকে এক বাক্স ৫৫৫ সিগারেট দিয়ে বলল, ‘দাদা আপনি আমায় জাতে তুললেন। আপনি আমায় গান দিন আর আমি আপনার জন্য সিগারেট নিয়ে আসব যখন যেখান থেকে পারব।’” তার পর কিছুটা স্মৃতিমেদুর দৃষ্টি হেনে সলিলের মন্তব্য, “আমার কোনও খেদ নেই জানো। গান আমাকে বিশ্বজুড়ে ভালাবাসা পাইয়ে দিয়েছে। কত কিছুই পাইনি, শেষে সব ভুলে যাই যখন কেউ আমার গান শুনে বলে আপনি চোখে জল এনেছেন। আমি কোথাকার কে ভাই, ঈশ্বরের যিনি বরপুত্র সেই মোৎজার্ট সারা জীবনে কী পেয়েছিলেনবঞ্চনা, বঞ্চনা আর বঞ্চনা।” তার পরে ঘুরে বসেই পিয়ানো বাজানো শুরু করলেন আর বললেন, “তুমি বলেছিলে আমি সিন্থেসাইজার কেন ব্যবহার করছি ‘কলকাতা সিম্ফনি’তে। কারণ ওটা অভিজাত যন্ত্র নয়। আমি বলি কী হেন যন্ত্র তৎকালে ছিল যা মোৎজার্ট ব্যবহার করেননি?”
এই নতুন প্রযুক্তি আনার অভিলাষ থেকেই সলিল চৌধুরীর বেহালার স্টুডিও পত্তন। কী অপূর্ব সরঞ্জাম, কিন্তু কাজ কোথায়? বাংলা ছবি বলতে গেলে ধুঁকছে, বাণিজ্যিক টেলিভিশনের সে ভাবে উত্থান হয়নি, সলিল চৌধুরীর অপরূপ সূক্ষ্ম কাজের চাহিদা আক্রান্ত হাবিজাবি সঙ্গীতের দ্বারা। বহু বছর পর বম্বে থেকে কলকাতা ফিরেও তিনি ‘না ঘর কা না ঘাট কা’। ‘লালপাথর’ ছবিতে যে সুর দিলেন তার পরেও সলিলের বাজার বলতে বেসিক গান। ষাটের দশকের সেই কাহিনিই চলল বহুকাল। সাহিত্যের ক্লাসিক যেমন আলমারিতে তোলা থাকে সম্মানের সঙ্গে, শুধু পাতা ওল্টানো হয় না, সলিলের গানও তেমন বাজারের কাছে শিরোধার্য-শিরোমণি। কাজে লাগানোর বিশেষ কেউ নেই। ফলে জীবনের শেষ দিকেও সলিল বলতে গেলে সেল্ফ-এমপ্লয়েড, স্ব-নিযুক্ত! ‘গঙ্গা’র সুরকারও যেন মাঝ দরিয়ায় এক বন্ধু হাওয়ার অপেক্ষায়। একে একে চলে যাচ্ছেন তাঁর শিল্পীরানির্মলেন্দু চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ওঁর কেবলই মনে হয় ‘অকূল দরিয়ায় বুঝি কূল নাই রে’। |
|
|
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে |
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে |
|
এক করুণ ছবি এখনও আমার চোখে ভাসে। হেমন্তদা গত হয়েছেন, সে বার পুজোয় হেমন্তর পুরনো সব গান বাজারে ভাসছে। সলিলদাকে জিজ্ঞেস করলাম, পুজোয় কী গান করলেন? কেমন মলিন মুখে বললেন, “আবার কী গান? আমার তো হেমন্তই চলে গেছে!” ওঁর কথাটা লক্ষণীয়: উনি চিরকাল হেমন্তকে ‘হেমন্তদা’ ও ‘আপনি’ করে উল্লেখ করেছিলেন। ‘হেমন্তই চলে গেছে’ বলতে উনি গায়কের প্রয়াণ ও নিজের কাজের জীবনে শীতের প্রবেশ বুঝিয়েছিলেন হয়তো। জানি না, এ নিছকই আমার অনুমান। এবং এখন যখন ফিরে তাকাই আর দেখি সলিল চৌধুরীর মতো এক জন গীতিকার-সুরকার সেই অর্থে কোনও রাজ্য বা রাষ্ট্রীয় স্তরের সম্মান পাননি তখন মনে হয় সেই অনুমান খুব একটা ভুল নয়। বেহালায় ওঁর সাউন্ড রেকর্ডিং স্টুডিও তখন দেনায় জড়াচ্ছিল। শেষের দিকে আগের দিনের বাংলা আধুনিকের কপি গান আর সদ্যফোঁটা এক বিশেষ ঢঙের গান, যার নামকরণ হয়েছিল ‘জীবনমুখী গান’, এ সবের দ্বারা বেশ ক্ষুণ্ণ থাকতেন। একদিন বললেন, “আচ্ছা, আমরা যে গান বেঁধেছি এত কাল সে সব কি জীবনের দিকে মুখ করে নয়?” তার পর একটু ক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “রবি ঠাকুরের ‘ধায় যেন মোর সকল ভালবাসা/ প্রভু, তোমার পানে, তোমার পানে, তোমার পানে’এও কি জীবনের থেকে মুখ সরিয়ে?”
এত বড় এক জন প্রতিভার মৃত্যুর ১৬ বছর পরেও তাঁর স্মরণে আছে বলতে কী? যা তিনি চাইতেন না সেই সব তো নেই-ই--- তাঁর নামে রাস্তা, একটা স্ট্যাচু, কী নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠানকিন্তু তিনি যেটা গভীর ভাবে চাইতেন, মিউজিক কম্পোজিশনের সিলেবাস, একটা আধুনিক সঙ্গীত রচনার পীঠস্থান, একটা আন্তর্জাতিক সঙ্গীত অ্যাকাডেমি, একটা সঙ্গীত পাঠাগার, এবং প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সঙ্গীত আদান-প্রদানের একটা মঞ্চ, তার ধারপাশ দিয়েও কেউ মাড়ায়নি এত কাল। ওঁরই একটা গান দিয়ে হয়তো ওঁর জীবনের একটা আঁচ জোগানো সম্ভব--- যখন লতাকে দিয়ে ১৯৫৯ সালে গান বাঁধলেন, ‘যা রে যা রে উড়ে যা রে পাখি/ ফুরোলো প্রাণের মেলা, শেষ হয়ে এল বেলা/ আর কেন মিছে তোরে বেঁধে রাখি’। উদ্বাস্তু সলিলের এটাই বড় মুক্তি যে তিনি পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে চলে গেছেন, আমরা ওঁকে ধরে রাখতে পারিনি।
|
ছিলেন অনেকটা ফাস্ট বোলারের মতো |
শান্তনু মৈত্র |
সলিল চৌধুরী যে শিল্পী হিসেবে কোথাও খুব বঞ্চিত হয়েছেন এটা আমার মনে হয় না। উনি একটি পরিপূর্ণ শিল্পীজীবন রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে। বঞ্চিত হব আমরা, যদি না যথার্থ ভাবে তাঁর সৃষ্টি উত্তরসূরিদের জন্য সংরক্ষণ করি। যে কোনও মহৎ শিল্পীর মতোই সাফল্য বা তথাকথিত ‘হিট’-এর কথা না ভেবে সৃষ্টি করার নেশাতেই সৃষ্টি করে গেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গীত তৈরির প্রক্রিয়াটি ছিল অনেকটা ফাস্ট বোলারের মতো। যে ব্যাটসম্যানের মাথা ছাড়া আর কিছুই দেখে না। তিনিও যখন গান রচনা করেছেন, গান আর সুরের দিকেই তাকিয়েছেন। আশ্চর্য সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গেছেন সুর নিয়ে, গায়ক-গাায়িকাদের কণ্ঠ নিয়ে। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘একদিন যাব চলে’ গানটির হিন্দি ভার্সানটিতে ছিল দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় কণ্ঠ। পুরো গানটির মাঝখানে তিনি লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠটি ‘বাঁশির’ মতো ব্যবহার করেছেন। লতার মতো কিংবদন্তির কণ্ঠকে এই ভাবে প্রয়োগ করার মধ্যে যে দাপট আছে তা দিয়েই চেনা যায় সঙ্গীতকার হিসেবে সলিল চৌধুরীর প্রতিপত্তি ছিল কতখানি।
|
মূল্যায়ন হয়নি |
দেবজ্যোতি মিশ্র |
মৃত্যুর এত দিন পরেও সলিল চৌধুরীর কোনও মূল্যায়ন হয়নি। তৈরি হয়নি কোনও সঙ্গীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান, তাঁর স্মরণে কোনও সংগ্রহশালা কী গ্রন্থাগার। এমনকী লেখা হয়নি কোনও সঠিক জীবনীগ্রন্থও। ভাবা যায়? ‘আনন্দ’ ছবিতে এক মৃত্যুপথযাত্রী নায়কের মৃত্যুকে ছাপিয়ে বাঁচার গান হয়ে উঠেছে ‘জিন্দেগি ক্যায়সি হ্যায় পহেলি’। কী অসম্ভব পজিটিভ ছিল তাঁর দৃষ্টি, মন, আবেগ। মৃত্যুকে জীবনের একটা অংশ মনে করার এমন ভাবনাই সলিল চৌধুরীকে রবীন্দ্রনাথের যথার্থ উত্তরসূরি করে তোলে। শুধু গান লেখা বা সুর দেওয়াই নয়, তাঁর গানে বারবার এসেছে গণসঙ্গীতের সর্বজনীন আবেদন। ‘মর্জিনা আবদাল্লা’র মতো আরব্যরজনীর গ্ল্যামারাস গল্প নিয়ে বিনোদনমূলক ছবিতেও কাঠুরিয়াদের জন্য যখন গান লিখছেন সেখানেও এনেছেন মাটির মানুষের গানের মূর্ছনা....‘ও আয় রে আয়, কাঠ কাটি, কাঠ কাটি কাঠ’। তাঁর সব গান ছিল মানুষের উদ্দেশে, মানবতার উদ্দেশে। তাই নাই বা রইল বড় মাপের কোনও পুরস্কারের তকমা। |
|
|
|
|
|