মুবারক আনসারির গ্যারাজে কিছু অকেজো মোটর সাইকেল থাকে। আর থাকে খান কতক সাপ। মেকানিক মুবারক মাঝমাঝেই ডাক্তারিতে নেমে পড়েন। তাঁর রোগীদের নাম গোখরো, কেউটে, চন্দ্রবোড়া। রোগীরা সুস্থ হলে মুবারক নিজেই পৌঁছে দেন বাড়িতে। মানে ঝোপঝাড়
ও জঙ্গলে।
পাঞ্চেতের ঝাঁটিবাজারের বছর চল্লিশের মুবারককে লোকে বলে, ‘সাপ মুবারক’। তাঁর নিজের পছন্দ অবশ্য ‘স্নেক সেভার’ নামটি। মুবারকের গুরু স্নেক পার্কের প্রতিষ্ঠাতা
দীপক মিত্রের কথায়, “সাপের প্রতি এমন নিঃস্বার্থ প্রেম খুব কম লোকেরই আছে। আমি ওঁকে শিখিয়েছি, কী ভাবে সাপের সেবা
করতে হয়।” শুধু সাপ ধরাই নয়, সাপে-কাটা রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসাও করে থাকেন মুবারক। তাঁর গ্যারাজ সাপের হাসপাতাল
হয়ে উঠেছে। |
সাপ ধরার শুরু সেই কৈশোরে। শুরুতে ছিল অ্যাডভেঞ্চার। এখন সেবা। রাতবিরেতে সাপ বেরিয়েছে খবর পেলেই মোটর সাইকেল আর ঝাঁপি নিয়ে ছোটেন মুবারক। ধানবাদ থেকে রঘুনাথপুর কোথায় না ছুটে বেড়ান! দিন কতক আগে এক জোড়া গোখরো ধরেছেন। তারা এখন গ্যারাজে। কিছুদিন পরেই দুই গোখরোকে জঙ্গলে ছেড়ে আসবেন মুবারক।
কিন্তু সাপ কেন?
মুবারকের নিজের কথায়, “শুরুর দিকে সাপ ধরতাম সাহস দেখানোর জন্য। লোকে বলত, ‘কী ডাকাবুকো ছেলে রে বাবা’। শুনতে খারাপ লাগত না। পরে বইপত্র পড়ে দেখলাম, সাপেরা মোটেই ভাল নেই। মানে বিপন্ন। তখনই ঠিক করলাম, আমি সাপ বাঁচাব।”
প্রায় ১২ বছর ধরে দীপকবাবুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা মুবারকের। প্রথম দিকে নির্বিষ সাপ ধরতেন। বিষধর সাপ ধরার কৌশল শিখেছেন দীপকবাবুর কাছেই। রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজশেখর চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের গ্রাম থেকেই দুটো গোখরো ধরেছেন মুবারক। কোথাও সাপ বেরিয়েছে শুনলেই ওঁকে খবর দিই।”
পাঞ্চেতের বাসিন্দা প্রভাতকুমার প্রসাদ বলেন, “মুবারক শুধু চিকিৎসাই করেন না, সাপ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য প্রচারও করেন।” পাঞ্চেতের প্রাক্তন মুখ্য বাস্তুকার অনিমেষ মুখোপাধ্যায় বলতে দ্বিধা করলেন না, “আমি মুবারকের কাছ থেকে সাপ সম্পর্কে অনেক
কিছু জেনেছি।”
মুবারকের কাজ সম্পর্কে জানেন রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি ও নিরসার বিধায়ক অরূপ চট্টোপাধ্যায়। অরূপবাবু বলেন, “মুবারক রেসকিউ লাইসেন্স চেয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি।”
সাপ না স্ত্রী? কার দিকে বেশি টান?
মুবারকের স্ত্রী তারান্নুম আরা একটু হাসলেন। বললেন, “মনে হয় সাপের দিকেই বেশি। বিয়ের পরে রাতবিরেতে যখন সাপ ধরতে ছুটত, খুব রাগ হত। এখন মেনে নিয়েছি। বুঝেছি, ভালবাসার টানেই ও এ-কাজ করে।” |