চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
ঐতিহ্য বজায় রেখেও নতুন মূল্যবোধ
ই মুহূর্তে বাংলা তথা ভারতের শিল্পকলা-পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায় শিল্পী হিসেবে মেয়েদের অবস্থান খুব সীমিত নয়। অনেক মহিলাশিল্পী খুব সফল ভাবে কাজ করছেন। নতুন ভাবনা নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। ১৯৮০-র দশকের পর থেকে সক্রিয় মহিলাশিল্পীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েছে। অবশ্য এ কথাও অনস্বীকার্য তুলনামূলক ভাবে পুরুষশিল্পীর তুলনায় তা এখনও অনেক কম।
নবীন প্রজন্ম ছবি বা ভাস্কর্যের বিষয় ও আঙ্গিক নিয়ে যে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন তার পরিচয় পাওয়া গেল স্টুডিয়ো ২১-এ সম্প্রতি ‘এন-জেনডার’ শীর্ষক সাত জন শিল্পীর প্রদর্শনী থেকে।
প্রত্যুষা মুখোপাধ্যায় অ্যাক্রিলিকে আঁকা পাঁচটি ক্যানভাসে নিসর্গের ছবি এঁকেছেন। গতানুগতিক নিসর্গচর্চার বাইরে গিয়ে তিনি নতুন ভাবে ঐতিহ্যকে আত্মস্থ করে তাকে নতুন মূল্যবোধে রূপান্তরিত করেছেন। মধ্যযুগীয় অণুচিত্রের নিসর্গের কিছু বৈশিষ্ট্যকে তিনি গ্রহণ করেছেন। বিশেষত যেখানে তিনি পরিপ্রেক্ষিত বা পার্সপেকটিভ বিন্যাসে স্বাভাবিকতাকে অতিক্রম করেছেন, সেখানেই অণুচিত্রের পরিপ্রেক্ষিত রীতির আভাস এসেছে। গ্রাম ও শহরের সংঘাত, আধুনিক উন্নয়ন, প্রকৃতির উপর যে চাপ সৃষ্টি করছে- এ সবেরও খুব সূক্ষ্ম ইঙ্গিত তাঁর ছবিতে প্রচ্ছন্ন রয়েছে। প্রকৃতির স্বাভাবিকতার উপর জ্যামিতিক কাঠামোর বিমূর্ততা আরোপ করে তিনি দুটি মূল্যবোধের দ্বন্দ্বকে উপস্থাপিত করতে চেয়েছেন। ‘বিয়ন্ড স্টারি নাইট’ ছবিটি এর দৃষ্টান্ত। সহজ চটুলতা পরিহার করে প্রচলিত আঙ্গিকেরই গভীরে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন তিনি।
মীনাক্ষী সেনগুপ্তের তিনটি গুয়াস ও সেরিগ্রাফের মিশ্রমাধ্যমে আঁকা ছবি ও একটি ভিডিয়ো ইনস্টলেশন বিশেষ ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কখনও কখনও চটুলতার দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাকে মেনে নিয়েও তিনি আধুনিক মূল্যবোধের অবক্ষয় নিয়ে কাজ করে যান। এই প্রদর্শনীতে ‘খাল্লাস’ শীর্ষক রচনাটিতে একটি ২৩ বছরের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের অ্যাবর্শনের সার্টিফিকেটটি মাত্র উপস্থাপিত হয়েছে। ‘মাদার ইন্ডিয়া’ শীর্ষক ভিডিও ইনস্টলেশনে তিনি তিন প্রজন্মের নারীর অবস্থান দেখিয়েছেন। অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তাঁর কাজে আরো গভীরতা এলে ভারতীয় শৈলীর আরও গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনা বা ‘ক্রিটিক’ তিনি তৈরি করতে পারবেন।
প্রদর্শনীর একটি ছবি
সুদীপ্তা দাসের দুটি ছবি ক্যানভাসের উপর তেলরঙে আঁকা। একটি কাগজের উপর চায়ের রঙের ওয়াশে করা। তিনটি অবয়বী ছবিতেই তিনি অতীতকে সাম্প্রতিকের মূল্যমানে উপস্থাপিত করেছেন। ‘গাঁধী ভিজিট ইন শান্তিনিকেতন’ ছবিটিতে শুধু গাঁধীকে চেনা যায়। অন্য সকলের মুখই অপরিচয়ের অন্তরালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চায়ের রঙের অনামা ছবিটিতে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিও ঝাপসা করা হয়েছে।
তিষা মণ্ডল তাঁর তিনটি মিশ্রমাধ্যমের ছবিতে তিনটি আয়তাকার ক্যানভাসকে পাশাপাশি অনুভূমিক বা আলম্ব ভাবে সাজিয়ে কালো প্রেক্ষাপটে রেখায় কাজ করে প্রায় বিমূর্ত পরিমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন।
অরুণিমা সান্যালের দুটি অ্যাক্রিলিকের ছবিই তিনটি ছোট বর্গাকার ক্যানভাসের সমন্বয়ে করা। তিনটি বিচ্ছিন্ন অংশে তিনি হিংসার বিভিন্ন রূপ এঁকেছেন। তাঁর আঙ্গিকে স্বাতন্ত্র্য ও গভীরতা আছে।
শ্রীষা মুখোপাধ্যায়ের ভাস্কর্য ‘
সুজ দ্যাট ফিট অ্যান্ড সুজ দ্যাট ডোন্ট’। ক্যানভাস দিয়ে জুতো তৈরি করেছেন। তাকে অ্যাক্রিলিকে রং করেছেন। এরকম অজস্র জুতো উপর থেকে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। পাশের বড় আয়নায় সেগুলি প্রতিফলিত হচ্ছে।
গীতি কর্মকারের ভাস্কর্য ‘
কুরসি’ পিতলের পাত ওয়েলডিং মাধ্যমে জুড়ে করা। একটি চেয়ার তিনি গড়ে তুলেছেন, যার বসার জায়গাটি ধাতব শলাকায় আকীর্ণ। ‘ক্রিপিং মুভমেন্ট’ শীর্ষক ভাস্কর্যটি লোহার কাঠামোর উপর লাল সুতোর আবরণে করা। দেশ-কালের প্রাসঙ্গিকতাহীন বিমূর্ত রচনা।
এই প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে শিল্পীদের হয়তো আরও একটু ভাবতে হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.