|
|
|
|
 |
 |
কে বলল, কম ওজন মানেই চাবুক-ফিট?
মোটা মানেই আনফিট আর রোগা হলেই আহা, আহা, কী বডি! লোকে বলে বটে,
কিন্তু এমনটা না-ও হতে পারে। রোগা আর আন্ডারওয়েট-এর মধ্যে বিস্তর ফারাক।
আন্ডারওয়েট-এর এ টু জেড। ফিটনেস এক্সপার্ট বিশ্বজিৎ তপাদার |
|
রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা, দৈহিক শক্তি ও কর্মক্ষমতা এবং শরীরের নমনীয়তাকে ফিটনেস-এর মানদণ্ড হিসাবে বিচার করাই যেতে পারে। কিন্তু আন্ডারওয়েট অথবা অপরিমিত ওজনে ভুগতে থাকা এমন কাউকে আর যাই হোক ‘ফিট’ অন্তত বলা যাবে না। রোগা হলেই ফিট হয় না কারণ ওবিসিটি-এর মতো আন্ডারওয়েট একটা শারীরিক সমস্যা, আর এই সমস্যায় ভুগতে থাকা মানুষের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। কোনও রকম হতাশায় না ভুগে ইচ্ছে করলে কমজোরি ও রোগা শরীরটাকে সুঠাম, সুন্দর এবং ফিট করে নেওয়া যায়। সাফল্য নিশ্চিত করতে সব কিছু বুঝে নিয়ে ধাপে ধাপে এগোন।
|
প্রকৃত আন্ডারওয়েট কাকে বলব? |
উচ্চতা অনুযায়ী দৈহিক ওজনের ন্যূনতম পরিমাপ থেকে যদি বেশ খানিকটা কম থাকে তা হলেই আন্ডারওয়েট বা অপরিমিত ওজন বলে চিহ্নিত করা হয়। বডি-মাস ইনডেক্স পুরুষদের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৪.৯ এবং মহিলাদের ১৯ থেকে ২৪.৯ স্বাভাবিক ধরা হলেও, কারও পরিমাপ যদি ১৮.৫ বা তার নিচে নেমে যায় এক মাত্র তখনই আন্ডারওয়েট বা অপরিমিত ওজন বলা হয়ে থাকে।
|
আন্ডারওয়েটদের সমস্যা কোথায়? |
 |
উচ্চতা অনুযায়ী দেহের ওজন স্বাভাবিকের থেকে অনেক কম থাকলে শরীরের শক্তি, কর্মক্ষমতা, কোমলতা, নমনীয়তা এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতার ঘাটতি তো থাকবেই, এ ছাড়া বেশ কিছু শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হতে পারে। অল্পতেই দেহে সংক্রমণের প্রবণতা, জীবনীশক্তির অভাব, একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া, মানসিক অবসাদ, নিজের চেহারা নিয়ে একটা হীনম্মন্যতা, মহিলাদের অ্যামেনোরিয়া বা ঋতুস্রাবের অনুপস্থিতি, গর্ভধারণের অসুবিধা, রক্তাল্পতা, অস্টিয়োপরোসিস-এর সম্ভাবনা এমনকী অনমনীয় ত্বকের সমস্যাও হতে পারে। |
|
আন্ডারওয়েট হওয়ার কারণ কী |
• অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস
• পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব
• পাকস্থলী ও যকৃতের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে শরীরে পুষ্টির মাত্রা হ্রাস
• ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ অথবা সিনড্রোম যেমন দীর্ঘদিনের ডায়রিয়া, অ্যাসিডিটি, পেটে কৃমি, কোষ্ঠবদ্ধতা, বদহজম
• হাইপার থাইরয়েড
• বয়ঃসন্ধিক্ষণে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোগাটে ভাব দেখা দেয়
• জিনগত রোগাটে গড়ন
• অতিরিক্ত ডায়েটিং-এর ঠেলায় খাবারে ভয় যেমন অ্যানেরেক্সিয়া, অথবা বুলিমিয়া
• সম্প্রতি ব্রিটেনের ল্যাঙ্কাস্টার ইউনিভার্সিটি অধীন ইনস্টিটিউট অব হেলথ রিসার্চ-এর এক সমীক্ষায় মহিলাদের মধ্যে ওবিসিটি এবং পুরুষদের মধ্যে আন্ডারওয়েট-এর প্রবণতাকে এক ধরনের ‘ইন্টেলেকচুয়াল ডিজেবিলিটি’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যার কারণ হিসেবে এক মাত্র শরীরচর্চা থেকে বিরত থাকাকেই দায়ী করা হয়েছে।
|
চেহারার হাল ফেরাতে কী করবেন |
স্বাস্থ্যকর ক্যালোরিযুক্ত খাদ্যাভাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাসই হবে আপনার সাফল্যের মূল মন্ত্র। তবে সবার আগে পেটের গণ্ডগোল ঠিক করতে হবে। পেটের অসুখ ঠিক না করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে না। অনেকেই আছেন আরও রোগা হয়ে যাওয়ার ভয়ে ব্যায়াম করতে চান না। এই ধরনের ভীতি কিন্তু সম্পূর্ণ অমূলক, কারণ পরিমিত ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস শুধু যে মাংসপেশির হাল ফেরাতে সাহায্য করবে তা কিন্তু নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে আপনার খিদেও ঠিক সময় পাবে এবং কোষ্ঠবদ্ধতা কমাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে। তা ছাড়া শরীরচর্চাই এক মাত্র প্রাকৃতিক উপায় যার দ্বারা আপনি আপনার মেটাবলিজমকে অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে পারেন। যে করেই হোক শরীরকে ফোলাতে হবে, এই মানসিকতায় শরীরে মাংসপেশির বদলে মেদ বৃদ্ধি করবেন না। এতে কিন্তু কখনই আপনাকে ফিট দেখতে লাগবে না, বরঞ্চ একটা সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আর একটা সমস্যাকে আমন্ত্রণ করার মতো ব্যাপার হবে। শরীরকে বিশ্রাম দিতেই হবে। কারণ বিশ্রামের সময়ই ‘মাস্ল মাস’ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলে সব থেকে বেশি।
|
কী ধরনের ব্যায়াম করবেন |
অতিরিক্ত পরিশ্রম সাপেক্ষ কার্ডিয়ো-ভাসকুলার ব্যায়ামগুলির পরিবর্তে ‘মাল্টি-জয়েন্ট মোবিলিটি’ ওয়ার্ক আউট-এর উপর বেশি জোর দিন, এতে শরীরের নমনীয়তা, সন্ধির কোমলতা বাড়বে এবং ক্লান্তি কম হবে। মাংসপেশির শক্তি ও আয়তন বাড়িয়ে তুলতে স্ট্রেংথ ট্রেনিং ও ওয়েট ট্রেনিং-এর সাহায্য নিন। ‘ক্যালিসথেনিক্স’ অর্থাৎ নিজের দেহের ওজনকে কাজে লাগিয়ে ব্যায়াম অসাধারণ কাজ করে, তবে প্রথম প্রথম আশানুরূপ দৈহিক শক্তি না থাকলে এই ধরনের ব্যায়ামে সাফল্য পাওয়া যায় কম। কিছু দিন হালকা ওজন দিয়ে শুরু করে মাংসপেশির ‘মাস’ ও ‘স্ট্রেংথ’ একটু বাড়িয়ে নেওয়ার পর ‘ক্যালিসথেনিক্স’ করলে সব থেকে ভাল ফল পাওয়া যায়। ‘পিলাটিস’ একটি হার্ড কোর এক্সারসাইজ। এটি সরাসরি মাংসপেশির টোন, শিরদাঁড়ার নমনীয়তা এবং ভেতরের শক্তি বাড়ায়, এক টানা কিছু দিন চালিয়ে যেতে পারলে পেশি গঠনেও সাহায্য করে। ‘রিল্যাক্সারসাইজ’ এবং যোগাসন পরোক্ষ ভাবে কাজে আসে, যেমন মাংসপেশির মধ্যে রক্তের জোগান বাড়িয়ে তোলে, হজমের উন্নতি করে, কোষ্ঠবদ্ধতা কমায়, মানসিক অস্থিরতা ও অবসাদ কাটায়, ও শরীর ও মনকে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে।
|
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস
চালু করুন |
একটা দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবসম্মত খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করুন। সব সময় আপনার হজম শক্তির কথা মাথায় রেখেই খাবার খেতে হবে। যতই রোগা থাকুন অতিরিক্ত ভাজাভুজি এবং জাঙ্ক ফুড খাবেন না। রাস্তার খোলা খাবারে ব্যবহৃত জল, তেল এবং কেমিক্যাল শরীরে সংক্রমণের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে পেশির বৃদ্ধির প্রক্রিয়া থমকে যেতে পারে। চটজলদি স্বাস্থ্য চাই বলে রাতারাতি বেশি ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেতে শুরু করবেন না, খাওয়ার শুরুতেই ফ্যাট যুক্ত খাবার যেমন ক্রিম, মাখন, মার্জারিন বা তেলে ভাজা খাবেন না। এতে আপনার খাবার ইচ্ছে কমে যেতে পারে।
|
 |
হঠাৎ করে ফ্যাট যুক্ত খাবার খাওয়া শুরু করলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সারা দিনে ৫-৬ বার খাওয়ার অভ্যাস করুন। ছোট মিল-এর মধ্যে ৩ ঘণ্টা, বড় মিল-এর মধ্যে ৬ ঘণ্টা গ্যাপ রাখুন। খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের মেলবন্ধন অবশ্যই রাখতে হবে। শুধু মাত্র প্রোটিন বা শুধুই কার্বোহাইড্রেট দিয়ে চলবে না, দু’টোই চাই, না হলে কিন্তু ‘মাস্ল মাস’ বাড়বে না। কৃত্রিম উপায়ে না গিয়ে চেষ্টা করুন রোজকার খাবারের থেকে এ সব গ্রহণ করতে। পর্যাপ্ত জল খান আর ধূমপান এড়িয়ে চলুন। ভুল করেও বিয়ার খেয়ে শরীর ফোলাবার চেষ্টা করবেন না। এতে পেটের সমস্যা বাড়বে, একটা নেয়াপাতি ভুঁড়ি তৈরি হবে আর আপনার বুক, হাত-পা সেই সরুই
থেকে যাবে।
|
যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫ |
|
|
 |
|
|