চারুলতার সেই অসাধারণ দৃশ্যটা মনে পড়ে? গাছে দোলনা ঝুলছে। চারু দোলনায়, দেওর অমলের মৃদু ধাক্কার অপেক্ষায়। অমলের ঠাট্টা, এ বার দোলনায় ট্যাক্স বসবে। উত্তর না দিয়েই চারু দুলছে আর আপন মনে গেয়ে চলেছে ‘ফুলে ফুলে’। বা ধরুন, তিন কন্যার শেষ পর্ব সমাপ্তি’র কথাই। ফুলশয্যার রাতে পালিয়ে গিয়ে মৃন্ময়ীর সেই প্রাণ ভরে নদীর ধারে দোলনা চড়া। তার পর এক সময় দোলনাতেই ঘুমিয়ে পড়া। সত্যি, অমন একটা দোলনা দেখলে মন আনচান করে বইকী। এই কাঠখোট্টা শহরে সেই বাগান, নদীর পাড়, গাছের ডাল ভাবাই যায় না। তবু কোনও পার্কে কখনও-সখনও দোলনায় চোখ পড়লে এই বয়সেও মনটা দুলে ওঠে। আচ্ছা, কখনও ভেবেছেন কি বাড়িতেই যদি অমন একটি দোলনা টাঙানো যেত, তো কেমন হত? উত্তর একটাই। বাড়িটা প্রাণবন্ত হয়ে উঠত। ও, আর ভুলেও ভাববেন না যে সেটি ছোটদের একচেটিয়া। |
এই যেমন নিস্তব্ধ দুপুরে একলা ঘরে আপনি। দোলনায় চেপে বসুন। মুহূর্তেই টাইম মেশিনে চড়ে পৌঁছে যাবেন সেই ফেলে আসা ছোট্টবেলায়। চলকে উঠবে স্মৃতির ঝলক। বা ধরুন, অফিস থেকে রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। স্নান সেরে এক কাপ কফি হাতে দোলনায় শরীর এলিয়ে দিন। হালকা আলোয় যন্ত্র-সঙ্গীতের মূর্চ্ছনা, সঙ্গে মৃদু দুলুনিশরীর-মন দুই’ই চাঙ্গা। তাই তো বলছি, আর কিনব কিনছি করে সময় নষ্ট না করে আজই বেরিয়ে পড়ুন। দোলনার উদ্দেশ্যে।
দোলনার সে কাল এবং এ কাল দু’টি দড়ি আর একটা কাঁঠাল কাঠের পিঁড়ি। গাছের মোটা ডালে ঝোলালেই তৈরি হয়ে যেত সে কালের দোলনা। সে ডালও নেই, সঙ্গে সময়ও বাড়ন্ত। তাই ঘর সাজানোর বিভিন্ন দোকানই নিয়ে এসেছে আজকের গৃহস্থের উপযুক্ত দোলনা। দাম মোটামুটি ১,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০,০০০ টাকা অবধি। আপনি কোনটা নেবেন সেটা নির্ভর করছে দোলনাখানা কোথায় টাঙাবেন তার উপর। যদি ছাদে বা বাইরের বাগানে লাগাতে চান তবে নিতে হবে জল-নিরোধক উপাদানের তৈরি দোলনা। গান মেটাল বা রট আয়রনের তৈরি দোলনাগুলি অনায়াসে বাইরে রাখতে পারেন। এগুলি শক্তপোক্ত স্ট্যান্ড-এর সঙ্গে ঝোলানো থাকে। এ রকম দোলনার মাথায় থাকে জল-নিরোধক উপাদানের তৈরি আচ্ছাদন। ফলে রোদ-বাদলের চিন্তা করতে হবে না। এই সব দোলনাতে দু’জন থেকে তিন জনের বসার ব্যবস্থা থাকে। |
বাগানে যদি বেশ কিছু গাছ থাকে আর আপনার যদি শৌখিন জিনিস পছন্দ হয়, তবে চোখ বুজে বেছে নিন বাবুই পাখির বাসা’র নকশার দোলনা। একটি সিটের এই ধরনের দোলনা, বাগানের সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রা আনবে। ডিম্বাকৃতি গড়নের দোলনাগুলোও বাহির-ঘর দু’য়ের জন্যই মানানসই। কম খরচে ঘরে রাখতে পারেন দড়ি-দোলনা। কটনের তৈরি পোক্ত দড়ির এই দোলনাগুলি দেখতে ছিমছাম। বসার জায়গা বেতের তৈরি। এগুলি দেখতে সাধারণ, অথচ নজর কাড়ে। আবার বাড়িতে কিছুটা জায়গা থাকলে দড়ির তৈরি হ্যামক-ও বেছে নিতে পারেন। দু’পাশে দু’টি শক্ত কাঠ রয়েছে। বই হাতে করে এ রকম একটি হ্যামক-এ শুয়ে বেশ কিছু ঘণ্টা দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারেন। অথবা ছুটির দুপুরের বরাদ্দ ভাতঘুমটাও সেরে নিতে পারেন এই হ্যামক-এ।
বাচ্চাদের জন্য দোলনা খুঁজলে কিনতে পারেন বেতের দোলনা। দেখলে মনে হবে রকিং চেয়ার। কিন্তু সিলিং-এর হুকের সঙ্গে টাঙালেই দোলনা রেডি। এর আবার একটা পোশাকি নাম আছে- ‘দীপক ঝোলা’। লাগাতে পারেন স্টেনলেস স্টিলের তৈরি ফোল্ডেবল দোলনাও। মাঝারি আকারের কতগুলি আংটার মতো রড দিয়ে দোলনার ফ্রেম তৈরি। শুধু কাঠের পছন্দ মতো বসার জায়গা বানিয়ে নিতে হবে। এর মস্ত বড় সুবিধে হচ্ছে, এটি ইচ্ছে মতো খুলেও রাখা যায়। ক্যানভাসের তৈরি দোলনাও বারান্দার জন্য বেশ ভাল। সুন্দর সাজানো ড্রয়িংরুমের জন্য রংচঙে একটি দোলনা চাইলে নিতে পারেন গুজরাতি কাজের তৈরি দোলনা। ত্রিকূট কাঠের তৈরি এই দোলনায় লাল-কালোর ল্যাকার পেইন্ট করা থাকে। ঘরের সৌন্দর্যে বেশ একটা জমকালো ছোঁয়া লাগে। দরকার শুধু সাধ আর সাধ্যের মেলবন্ধন। সামনের পুজোর বাজেট সামান্য কিছু কমিয়ে শুধু একটি দোলনা কিনেই দেখুন, না। ব্যাপারটা জমে যাবে, মিলিয়ে নেবেন। |