|
|
|
|
মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে অব্যবস্থা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
চিকিৎসকের নিয়মিত হাজিরা ছাড়াই চলছে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কোনও ‘ফাঁক-ফোকর’ দিয়ে ভুল-ত্রুটি হয়ে না যায়, সেই আতঙ্ক কাজ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যেই। ব্লাড ব্যাঙ্কের টেকনিসিয়ানরা ইতিমধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাতে কোনও লাভ হয়নি। তাঁরা যে সব দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, তা অনেক দিক থেকে ‘ঝুঁকিবহুল’ এবং ‘অবৈধ’ বলে মত টেকনিসিয়ানদের।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, কোনও রোগীকে রক্ত দিতে হলে রোগীর রক্তের সঙ্গে মজুত রক্তের ‘ক্রস ম্যাচ’ করাতে হয়। একমাত্র মেডিক্যাল অফিসারের উপস্থিতিতেই এই কাজ করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে সেই কাজ টেকনিসিয়ানদেরই করতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে কোনও রোগীর আত্মীয় রক্ত দিতে চাইলে তিনি আদৌ তা দিতে পারেন কিনা, সেই ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ একমাত্র চিকিৎসকই দিতে পারেন। টেকনিসিয়ানদের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে সেই কাজও তাঁদের করতে হচ্ছে। পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে তাঁরা অবৈধ কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন ওই টেকনিসিয়ানরা।
চব্বিশ ঘণ্টা ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু রাখতে হলে ৮ জন টেকনিসিয়ান থাকার কথা। এখানে আছেন মাত্র ৪ জন। এঁদের মধ্যে তিন জন আবার অস্থায়ী কর্মী। দিন-রাতের ডিউটি সামলাতে হচ্ছে এই চার জনকেই। রক্তদান শিবিরে হাজির থাকা (মাসে গড়ে মহকুমায় ১৫-১৬টি শিবির হয়), সংগৃহীত রক্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, নথিপত্রের কাজ সবই করতে হচ্ছে চার জন মাত্র টেকনিসিয়ানকে। তবে তাঁরা ‘ত্রুটিহীন’ ভাবেই কাজ সারছেন বলে দাবি করেছেন। যদিও কাজের চাপ অত্যন্ত বেশি বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
ব্লাড ব্যাঙ্কের এই হাল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মহকুমা হাসপাতালের সুপার জনার্দন সেন। তিনি জানান, এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার রাস্তা মিলছে না। গোটা বিষয়টি তিনি জানিয়েছেন হুগলি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিষেবা যথাযথ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
ব্লাড ব্যাঙ্কের বর্তমান মেডিক্যাল অফিসার অশোক নিয়োগী গত জানুয়ারি মাসে কাজে যোগ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “এখানে কাজের যা চাপ, তাতে ২৪ ঘণ্টা ব্লাড ব্যাঙ্ক খোলা রাখতে অন্তত দু’জন মেডিক্যাল অফিসার দরকার। টেকনিসিয়ানের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই কাজের সময় ভাগ করে নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু রাখতে হয়েছে।” অশোকবাবুর দাবি, “আমরা সকলেই যথেষ্ট নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করি। কিছু ক্ষেত্রে নিয়মের বাইরে কাজ হলেও ভুলের সম্ভাবনা নেই।” অশোকবাবু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আসেন। নাইট ডিউটি করেন। শুক্রবার সকালে জরুরি বিভাগে বসেন। ফের ওই রাতে ব্লাড ব্যাঙ্কে ডিউটি করেন। শনিবার সকাল ৮টার পরে তিনি বাড়ি চলে যান। এর থেকে বেশি ডিউটি চিকিৎসককে দেওয়া সম্ভব নয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কিন্তু কর্মীর অভাবে যেখানে সমস্যা হচ্ছে, সেখানে ওই চিকিৎসককে তেন বাড়তি ডিউটি দেওয়া হবে না, সে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কাজ চালানো যে দীর্ঘ দিন সম্ভব নয়, তা মেনে নিচ্ছে সব পক্ষই। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “চিকিৎসক কম থাকায় অসুবিধা আছে। তা কাটানোর চেষ্টা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|