থাকছেন কারাট
সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে সুশান্ত-আলোচনার সম্ভাবনা
লের অন্দরে ‘দ্বন্দ্ব’। একাংশ কখনওই তাঁর কার্যকলাপ পছন্দ করেনি। ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে ‘পাশে দাঁড়াতে’ হলেও যথেষ্ট দ্বিধা রয়েছে। অন্য অংশের মতে, দলের স্বার্থে যখন ‘ব্যবহার’ করা হয়েছিল, তখন সঙ্কটের সময়ে তাঁকে ‘ত্যাগ’ করা অনুচিত। রয়েছে তৃতীয় অংশ, যাঁরা তাঁকে ‘প্রশ্রয়’ দিয়েছিলেন।
‘গণহত্যার’ অভিযোগে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা দলের বর্তমান বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের বিষয়ে দলের অভ্যন্তরে কী আলোচনা করবে সিপিএম? আজ, শনিবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে। বিশেষত, যে বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের।
বৃহস্পতিবার বামফ্রন্টের বৈঠকে সুশান্ত-প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিষয়টি রাখা হয়নি আলোচ্যসূচিতেই! সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকের ‘সাধারণ আলোচ্যসূচিতে’ও সুশান্ত-প্রসঙ্গ নেই। কিন্তু তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতির’ অভিযোগ তোলার যে লাইন সিপিএম নিচ্ছে, সে বিষয়ে আলোচনায় সুশান্ত-প্রসঙ্গ উঠবে বলেই দলের নেতাদের একাংশ মনে করছেন। তাঁরা এ-ও দেখতে চান, সুশান্ত-প্রসঙ্গে কী অবস্থান নেন কারাট।
রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র প্রথম থেকেই সুশান্তবাবুর ‘কার্যকলাপের’ বিরুদ্ধে। ঠিক যেমন মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও দীর্ঘ দিন সুশান্ত-বিরোধী ছিলেন। ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’তে প্রকাশ্যে সেই বুদ্ধবাবুকেই অবশ্য ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র অভিযোগ তুলতে হচ্ছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে! কিন্তু রাজ্য কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সুশান্তবাবুকে নিয়ে আলিমুদ্দিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে বলেই দলীয় সূত্রে খবর।
সূর্যবাবুর মতোই সিপিএমের কৃষক সভার রাজ্য সভাপতি মদন ঘোষ, ওই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্যতম নেতা তরুণ রায় প্রমুখরা দলের অন্দরে সুশান্ত-বিরোধী। এঁদের সকলেরই বৈঠকে থাকার কথা। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার সুশান্তবাবুর সব কার্যকলাপকে গত ১০-১২ বছর ধরে সমর্থন করে যাচ্ছেন। থাকবেন তিনিও। তবে দলের একাংশের মতে, যে নেতারা ওই প্রশ্ন তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁরা শেষ মুহূর্তে পিছিয়েও যেতে পারেন। কারণ, প্রকাশ্যে সুশান্তবাবুর ‘পাশে দাঁড়ানোর’ই লাইন নিয়েছে দল। এই ‘সঙ্কটসময়ে’ সেই দলীয় লাইনের বিরুদ্ধে ওই নেতারা যাবেন কি না, তা অনিশ্চিত। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, “সুশান্তবাবু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। নতুন সরকার ক্ষমতার আসার পরেই আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিচ্ছে। আগামী দিনে আরও নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একই ভাবে প্রতিহিংসা নিতে পারে। এর বিরুদ্ধে পার্টিকে কী করে আরও ঐক্যবদ্ধ করা যায়, রাজ্য কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে।”
সুশান্তবাবু গ্রেফতারের পর এই প্রথম সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে। প্রকাশ্যে বিভিন্ন ভাবে সুশান্তবাবুর ‘পাশে দাঁড়ালেও’ ওই ঘটনায় দল যে অভাবনীয় ‘বিড়ম্বনায়’, তা দলের একাংশ স্বীকার করে নিচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে আলিমুদ্দিনের বক্তব্য, সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ নেওয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু থেকে বিমান বসু তাই বলছেন। কিন্তু দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে যে, নেতাদের একাংশ কেন সুশান্তবাবুকে কার্যত ‘ফ্রি-হ্যান্ড’ দিয়েছিলেন। কারণ এখন যে ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠছে, তাতে দলেরই ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আজ, শনিবার রাজ্য কমিটির বৈঠকের পর কাল, রবিবার ও সোমবার রাজ্য কমিটির বর্ধিত বৈঠক। রবি ও সোমবারের বর্ধিত বৈঠকে তো থাকবেনই। প্রথমদিনের বৈঠকেও থাকার কথা দলের সাধারণ সম্পাদক কারাটের। অতীতে রাজ্য কমিটির বৈঠকে একাধিক বার পূর্ব মেদিনীপুরের অন্যতম নেতা প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের নানা কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্য কমিটির আর এক সদস্য প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লাকে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে কেবল প্রশ্নই ওঠেনি, তাঁকে প্রকাশ্যে ‘ভর্ৎসনা’ও করা হয়েছে। লক্ষ্মণবাবু বা রেজ্জাকের মত সুশান্তবাবু রাজ্য কমিটির সদস্য নন। দলের রাজ্য নেতৃত্ব প্রকাশ্যে সুশান্তবাবুর পাশে দাঁড়ানোয় তাঁকে ‘ভর্ৎসনা’ করার কথাও নয়। কিন্তু সুশান্তবাবুকে ‘ফ্রি-হ্যান্ড’ দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয় কি না, দেখার সেটাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.