|
|
|
|
সংখ্যালঘু উন্নয়ন বাজেট, জবাব দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিধানসভার চলতি অধিবেশনে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে বিতর্কের শেষে জবাবি বক্তৃতা দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা নিজেই ওই দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। সংখ্যালঘু দফতরের ‘গুরুত্ব’ বিবেচনা করেই বন্যা-পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রী ওই আলোচনায় থাকতে চান। আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিধানসভার কার্যসূচিতে
সংখ্যালঘু দফতরের আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, ভূমি-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দফতরের ব্যয়বরাদ্দের আলোচনা না-হওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা ‘ক্ষীণ’। তৃণমূল শিবিরের ব্যাখ্যায়, ‘নীতিগত’ কারণে নিজে এখনও বিধায়ক নন বলেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বিধানসভায় ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে আলোচনায় থাকতে চাইছেন না। সাংবিধানিক দিক থেকে এমন কোনও ‘বাধ্যবাধকতা’ নেই। কিন্তু মমতা ‘নৈতিক কারণে’ই আলোচনা এড়িয়ে চলছেন। তাঁর জন্য নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (এ দিনও দিয়েছেন)। বস্তুত, কঙ্কাল-কাণ্ডে প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে গ্রেফতার বা পাহাড়-সমস্যা প্রাথমিক ভাবে সমাধানের ঘটনায় তাঁর সরকার যথেষ্টই ‘শক্ত জমি’তে দাঁড়িয়ে। সে ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র বা পার্বত্য বিষয়ক দফতরের আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার কোনও কারণ থাকার কথা নয়। কিন্তু বিধায়ক না-হয়ে মমতা এতে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ
করতে চাইছেন না বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের বক্তব্য।
এক দিকে, ‘নৈতিক কারণে’ বিধানসভার আলোচনায় অংশ নিতে ‘দ্বিধাগ্রস্ততা’। অন্য দিকে, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ‘উদ্বেগ’। তবু তার মধ্যেও সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে আলোচনায় সময় বার করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, রাজনৈতিক ভাবে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে অত্যন্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ’।
এমনিতে, বন্যা-পরিস্থিতি এবং দুর্যোগ মোকাবিলা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বিধানসভায় বাজেট বিতর্কে উপস্থিত থাকতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, দলনেত্রী ‘জনমুখী’ রাজনীতির উপর গুরুত্ব দেন বলেই সরকার পক্ষ বিধানসভার অধিবেশনের মেয়াদও কমিয়ে আনছে। মূলত সেই কারণেই অন্য কিছু দফতরের সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে-থাকা সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের ব্যয়বরাদ্দ নিয়েও আলোচনা হবে না বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল। যার মধ্যে ছিল স্বরাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য দফতরও। যা নিয়ে বিরোধীরা এ দিন সভায় সরব হন।
তবে সংখ্যালঘু দফতরের বিষয়টির ‘গুরুত্ব’ বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা হোক। সেইমতো স্পিকারও বিষয়টি কার্য উপদেষ্টা কমিটির কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে কমিটিই ঠিক করবে, কত ক্ষণ আলোচনা হবে। এর পরেও মুখ্যমন্ত্রী চাইলে ওই বিষয়ে জবাবি বক্তৃতার দায়িত্ব দিতে পারেন পরিষদীয় মন্ত্রীকে। অতীতে তেমন নজিরও আছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তৃণমূল পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, দফতরের
পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে মমতা নিজেই বিধানসভায় বলবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধী বামফ্রন্টও। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের এক প্রথম সারির বিধায়কের কথায়, “সংখ্যালঘুদের বিষয়টি বরাবরই মমতার খুব কাছের বিষয়। বিরোধী নেত্রী থাকার সময়েও তিনি এই ব্যাপারে সরব ছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হয়েও ওই দফতরটি নিজের কাছে রেখেছেন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমাদের বক্তব্য জানাতে পারলে ভালই হবে।”
অনেকগুলি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ দফতর নিয়ে আলোচনা ছাড়া ব্যয়বরাদ্দ পাশ করানো (পরিভাষায় যাকে ‘গিলোটিন’ বলে) নিয়ে প্রবল আপত্তি তুলেছে বিরোধীরা। সভাকক্ষের অন্দরে প্রতিবাদের পাশাপাশি এ দিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে তাঁর সঙ্গে দেখা করে বিরোধী দলনেতা
সূর্যকান্ত মিশ্র বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আর্জি জানান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিধানসভার কার্যসূচি তিনি ঠিক করেন না। তিনি কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্যও নন। এই বিষয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবুর সঙ্গে কথা বলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে অনুরোধ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর সূর্যবাবু বলেন, “স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, ভূমি, পঞ্চায়েতের মতো দফতরগুলির বাজেট গিলোটিনে পাঠানো অনুচিত। এই সব দফতর আগে কখনও গিলোটিনে যায়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, তিনি যাতে ওই দফতরগুলির দফাওয়াড়ি বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পরিষদীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে।”
সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়ে বিরোধী দলনেতাকে খুব ‘নিরাশ’ না-দেখালেও পরিষদীয় সূত্রের ইঙ্গিত, গিলোটিনের ব্যাপারে পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা এখনও বিশেষ নেই। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “বিরোধী দলনেতার প্রশ্নের উত্তরে পরিষদীয় মন্ত্রী আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে আলোচনা করেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেওয়া হয়েছিল। ওই দফতরগুলি নিয়ে আলোচনার সময় যে পাওয়া যাবে না, তা কমিটিতেই ঠিক হয়েছিল। তা পুনর্বিবেচনা করার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।” স্পিকার বিমানবাবুর বক্তব্য, “সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে ১ সেপ্টেম্বর আলোচনা হবে বলে এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে। কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক ডেকে সেইমতো কার্যসূচি পরিমার্জন করা হবে।”
গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি দফতরের ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা না-হওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এ দিন প্রত্যাশিত ভাবেই বিধানসভায় হইচই করে বিরোধীরা। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার কার্য উপদেষ্টা কমিটির কার্যসূচি ঘোষণা করার পরেই বিরোধীরা প্রতিবাদ করেন। সূর্যবাবু বলেন, “স্বাধীনতার পরে এমন ঘটনা ঘটেনি! মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ দফতর আছে। স্বাস্থ্য, ভূমি এবং স্বরাস্ট্রের মতো দফতরের কোনও আলোচনা হবে না? এগুলি কোনও দিন গিলোটিন হয়নি।”
তাঁর আরও বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী এগুলির একটিতেও বাজেটে অংশ নেবেন না? প্রশ্নের জবাব দেবেন না?” তিনি নতুন সরকারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “নতুন মন্ত্রীরা তো বাজেট নিয়ে আলোচনা করছেন। কেউ কেউ ভালও করছেন। মুখ্যমন্ত্রী করবেন না, এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না।” তিনি স্পিকারের কাছে আবেদন করেন, কার্য উপদেষ্টা কমিটি আবার আলোচনায় বসুক। এতে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। পরে বাম দলগুলির নেতারা স্পিকারের ঘরে এই নিয়ে কথা বলতে যান।
বিরোধীদের দাবির প্রেক্ষিতে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, “কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে পূর্ণাঙ্গ ভাবে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাতে সকলেই একমত হয়েছেন।” মন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “আমরা বিরোধী থাকার সময় অনেক বিষয়েই একমত হইনি। তবুও সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। রাজ্যে অর্থ সঙ্কট চলছে, অনুন্নয়ন নিয়ে সমস্যা আছে এবং অন্য দিকে বন্যা। এগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।” তবে তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরগুলির বাজেট পুস্তিকা বিধায়কদের দেওয়া হবে।
বিরোধীদের বিভিন্ন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে পরিষদীয় মন্ত্রী শেষ পর্যন্ত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই নিয়ে আরও আলোচনা করব। প্রয়োজন হলে কার্য উপদেষ্টা কমিটিতেও আলোচনা করা যেতে পারে।” |
|
|
|
|
|