|
|
|
|
ভবানীপুরকেই বাছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, ইস্তফা দিলেন সুব্রত বক্সী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জল্পনার অবসান। ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচন লড়তে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওই কেন্দ্রের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যের পূর্ত ও পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সী। রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শুক্রবার ইস্তফাপত্র দেন সুব্রতবাবু। বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই জল্পনা ছিল, মুখ্যমন্ত্রী হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর কেন্দ্র থেকেই উপনির্বাচন লড়বেন। সুব্রতবাবুর ইস্তফায় সেই সম্ভাবনায় আনুষ্ঠানিক সিলমোহর পড়ল বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর।
বিধায়ক পদে ইস্তফা দিলেও মন্ত্রিত্বে থাকছেন সুব্রতবাবু। একই সঙ্গে তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, তাঁকে মমতার ছেড়ে-যাওয়া লোকসভা কেন্দ্র দক্ষিণ কলকাতায় প্রার্থী করবেন নেত্রী।
ইস্তফা দেওয়ার পরে সুব্রতবাবু বলেন, “দলীয় নেতৃত্ব চাইছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে বিধানসভায় আসুন। দলনেত্রীকে আসন ছেড়ে দিতে চাইছিলেন আমাদের দলের বহু বিধায়কই। |
|
ইফতারে মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র |
দল আমাকে পদত্যাগের অনুমতি দেওয়ায় আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।” তাঁর সহকর্মী শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যাতে বিধানসভায় নির্বাচিত সদস্য হয়ে আসতে পারেন, সে জন্য তাঁকে জায়গা ছেড়ে দিতে আমাদের দলের সমস্ত বিধায়কই উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু দলে আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত সুব্রতবাবুর ইচ্ছাকেই অনুমোদন করা হয়।”
প্রথম থেকেই তৃণমূলের অন্দরে খবর ছিল, মমতা নিজের লোকসভা কেন্দ্র দক্ষিণ কলকাতার কোনও একটি বিধানসভা থেকে ভোট লড়বেন। সেই তালিকায় ভবানীপুরের নামই প্রথম দিকে ছিল। মমতার বাড়িও ওই কেন্দ্রে। কিন্তু সুব্রতবাবু মন্ত্রী হওয়ায় সেই জল্পনায় খানিকটা ভাটা পড়ে। মাঝখানে জল্পনা হচ্ছিল, মুখ্যমন্ত্রী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রেরই অর্ন্তভুক্ত বেহালা-পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। সেখানকার বর্তমান বিধায়ক তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় পদত্যাগ করবেন। শোভনবাবু লড়বেন কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। কিন্তু তৃণমূল সূত্রের খবর, দলনেত্রীকে তাঁর বাড়ির এলাকা ভবানীপুর থেকেই দাঁড়ানোর জন্য বোঝান সুব্রতবাবু নিজে, দলের একটা বড় অংশ ও এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন বিশিষ্ট জন।
চলতি মাসের মধ্যেই মমতার দিল্লি গিয়ে সাংসদ পদে ইস্তফা দেওয়ার কথা (যে কোনও সাংসদই ইস্তফা দিলে তাঁকে সেটি লোকসভার স্পিকারকে নিজে গিয়ে জানাতে হয়। এটা বোঝাতে যে, তিনি স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিচ্ছেন। চিঠি দিলে তাঁর উপর জোর খাটানো হয়েছে বা তাঁকে বাধ্য করা হয়েছে, এমন সম্ভাবনা থাকতে পারে)। দক্ষিণ কলকাতায় মমতা কাকে প্রার্থী করবেন, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের একাংশের অনুমান, সুব্রতবাবুকেই প্রার্থী করা হতে পারে। আবার একাংশের মতে, প্রার্থী হবেন ‘মমতা-ঘনিষ্ঠ’ বিশিষ্টদের মধ্যে এক জন। এই বিষয়ে প্রকাশ্যে দলের শীর্ষ নেতাদের কেউই কোনও মন্তব্য করেননি। সুব্রতবাবুও বলেন, “এটা আমি জানব কী করে!”
তিনি মন্ত্রিত্বেও ইস্তফা দেবেন কি? সুব্রতবাবু বলেন, “দল তো আমাকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বলেনি! মুখ্যমন্ত্রীও বলেননি। সংবিধান অনুসারে আমি এখনও ছ’মাস মন্ত্রী থাকতে পারি।” তবে বিধায়ক পদ ছাড়ার পরে মন্ত্রী থাকতে গেলে তাঁকে পুনরায় ‘শপথ’ নিতে হবে বলে সিপিএম নেতা রবীন দেবের দাবি। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা সর্বদল বৈঠকে যোগ দিতে বিধানসভায় এসেছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক রবীনবাবু। তিনি বলেন, “বিধায়ক হিসাবে ইস্তফা দেওয়ার পরেও মন্ত্রী থাকা যায়। কিন্তু তার জন্য সেই মন্ত্রীকে নতুন করে শপথ নিয়ে আসতে হয়।”
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তার আগেই স্পষ্ট বলে দেন, “সুব্রতবাবু যে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছেন, তা আমি বিধানসভায় জানিয়ে দিয়েছি। যত দিন না উপনির্বাচন হচ্ছে, তত দিন সুব্রতবাবুই মন্ত্রী হিসাবে কাজ চালাবেন।” রবীনবাবুর বক্তব্য প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, “বিধানসভার কার্যবিধি খতিয়ে দেখেই বলছি, সুব্রত আরও ছ’ মাস কাজ চালাতে পারেন।” বামেরা ‘আইনগত জটিলতা’র কথা তুলেছেন। পার্থবাবুর সাফ জবাব, “কোনও জটিলতা হলে যা করণীয় তা করা হবে।” অবশ্য তৃণমূলের আইনজীবী-সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সুব্রতবাবুর আপাতত ছ’মাস মন্ত্রী থাকা নিয়ে ‘সাংবিধানিক কোনও জটিলতা’ নেই। তিনি বলেন, “সংবিধানের ১৬৪ ধারার উপধারা ৪ অনুসারে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিলেও সুব্রতবাবু ছ’মাস কাজ চালাতে পারেন।” |
|
|
|
|
|