|
|
|
|
দুর্যোগ কাটলেও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দূরঅস্ত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট ও ক্যানিং |
দুর্যোগ কেটে গেলেও দুর্ভোগ থেকে এখনও মুক্তি পেলেন না বসিরহাট এবং ক্যানিং মহকুমার বিস্তীর্ণ জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। নিকাশি নিয়ে দুই মহকুমাতেই ক্ষোভ তুঙ্গে। রয়েছে ত্রাণ নিয়ে অভিযোগও।
বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে সোনাই নদী এসে মিশেছে ইছামতীতে। সোনাই নদী এবং বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি খাল-বিল ও বাওড় উপচে জল নতুন করে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের স্বরূপনগরের বেশ কিছু গ্রামে ঢুকে পড়েছে। একই সঙ্গে বনগাঁ, গাইঘাটা থেকেও জল নীচের দিকে নামতে শুরু করায় সগুণা, চারঘাট, তেপুল-মির্জাপুর এবং শাঁড়াপুল-নির্মাণ পঞ্চায়েত এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল জলের তলায়। দিন দিন জলস্তর বাড়ায় চিন্তিত গ্রামবাসীরা। |
|
স্বরূপনগরের অশ্বীনিনগরে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
বিডিও অরুণাভ পাল জানিয়েছেন, কয়েকটি গ্রামে জল বাড়আয় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আপাতত ৫৭টি ত্রাণ শিবিরে ৬ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সগুণা পঞ্চায়েতের ঘোলা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, জল অনেক ঘরের মাথার কাছাকাছি। অনেকে ঘরে মধ্যে মাচা বেঁধে বাস করছেন। কেউ কেউ আবার ইট দিয়ে খাট উঁচু করে নিয়েছেন। দুর্গতদের দাবি, অবিলম্বে জল নামানোর ব্যবস্থা করা হোক। স্থানীয় বাসিন্দা অলোক মণ্ডল এবং সুভাষ গোলদার বলেন, “নদীর জল বাড়ায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বাড়ছে ত্রাণ শিবির। আরও ত্রাণ এবং শিশুখাদ্য ও গবাদি পশুর খাবারের ব্যবস্থা করা দরকার।”
উঠেছে যমুনা নদী এবং টিপি খাল সংস্কারের দাবিও। স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “অবিলম্বে যমুনা নদী এবং টিপি খালের পাশাপাশি তেঁতুলিয়ার দিকে ইছামতী সংস্কারের ব্যবস্থা করা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ জায়গায় পৌঁছবে।” একই কারণে বাদুড়িয়ার চাতরা, রামচন্দ্রপুর, চণ্ডীপুর, জসাইকাটি, কাঁকড়াসুতি-সহ কয়েকটি গ্রামেও জল বাড়ছে। চাতরা পঞ্চায়েতের পাপিলা গ্রামের বাসিন্দা শিল্পা মণ্ডল বলেন, “গ্রামের জমা জল পদ্মা-যমুনা দিয়ে বেরোতে পারছে না। উল্টে জল বাড়ছে। অসুখ হচ্ছে। বাড়ছে দুষ্কৃতী এবং সাপের ভয়।” বিডিও দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, “২১টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। পাঁচশোরও বেশি বাড়ি ভেঙেছে। ১২০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”
হিঙ্গলগঞ্জের পারঘুমটি এবং সন্দেশখালির আতাপুরে বিক্ষিপ্ত ভাবে ডায়রিয়া শুরু হয়েছে। বসিরহাট-১ ও ২ ব্লকের বহু মানুষকেও জলবন্দি হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য রাজেন্দ্রপুর, ভ্যাবলা, ট্যাঁটরা এবং নেওরার বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। মহকুমাশাসক অনামিকা মজুমদার বলেন, “দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিলি করা হচ্ছে। জল বাড়ার বিষয়ে নজর রাখা হয়েছে।”
অন্য দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং-১ ও ২, বাসন্তী এবং গোসাবা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলমগ্ন। বন্ধ চাষের কাজ। বাড়ছে মশার উপদ্রব। ক্যানিং-১ ব্লকের বাঁশড়া গ্রামের বাসিন্দা কুতুব শেখ বলেন, “জমা জলে ডুবে আছে সব। নিকাশি ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। মশার দাপট বাড়ছে।” ত্রাণ নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের যুব কংগ্রেস সভাপতি ইব্রাহিম মোল্লা। ক্যানিং-২ ব্লকের তাম্বুলদহ পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, “কোনও স্লিপ বিলি না করে দুর্গতদের মাস্টার-রোলে সই করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দুর্গতদের পরিবারপিছু ১২ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে না।” প্রশাসনের কাছেও এই অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। পঞ্চায়েত প্রধান মকবুল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “সর্বদলীয় বৈঠক করেই ত্রাণ বিলি করা হয়েছে। কোনও বৈষম্য করা হয়নি। স্লিপ শেষ হয়ে যাওয়ায় কাগজে স্ট্যাম্প মেরে ত্রাণ বিলি করা হয়েছে।” মহকুমাশাসক শেখর সেন জানান, ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। সবাইকে স্লিপ দিয়ে ত্রাণ দেওয়াই নিয়ম। |
|
|
|
|
|