দাদার উঠোন খুঁড়ে দেহ মিলল ‘নিখোঁজ’ ভাইয়ের
স্বামীর খোঁজে হন্যে হয়ে যখন তিনি পুলিশ থেকে নেতাদের দরজায় ঘুরছেন, মধ্যমগ্রামের রুবিনাকে তখন ভরসা জুগিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর ভাসুর। ভাগ করে নিয়েছিলেন ‘নিখোঁজ’ ভাইয়ের স্ত্রীর উদ্বেগ।
শুক্রবার মধ্যমগ্রামের দিগবেড়িয়ায় সেই দাদার বাড়ির উঠোনের মাটি খুঁড়েই পাওয়া গেল ভাইয়ের মৃতদেহ।
তাহের আলি (৩২) নামে ওই ব্যক্তিকে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। পুলিশের দাবি, তাহেরকে খুন করে তার দাদা আসগর আলি দেহটি পুঁতে রেখেছিল। আসগর পলাতক, তবে নিহতের বৌদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন তাহের। শুক্রবার তাঁর দাদার বাড়ি থেকে কটূ গন্ধ পান এলাকার মানুষ। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। তারা মাটি খুঁড়ে পচাগলা দেহটি উদ্ধার করে। এর পরে উত্তেজিত জনতা দফায় দফায় আসগরের বাড়ি এবং তার এক সঙ্গীর তিনটি দোকানে ভাঙচুর চালায়। নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে হামলা হয় পুলিশের উপরেও।

তাহের আলি
দক্ষিণ ভারতে নিরাপত্তা এজেন্সির ব্যবসা ছিল তাহের ও আসগরের। বেশ কিছু দিন ধরেই ব্যবসা ও সম্পত্তি নিয়ে দু’ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া চলছিল। দু’জনের নামে ব্যাঙ্কের জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে প্রচুর টাকাও ছিল। বছর খানেক আগে রুবিনাকে নিয়ে দিগবেড়িয়ার পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে মধ্যমগ্রামেরই মোল্লাপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে যান তাহের। সম্পত্তির ভাগ তিনি পাননি। তাই পেট চালাতে কলকাতায় গাড়িচালকের চাকরি নিয়েছিলেন।
রুবিনা বলেন, “২০ জুলাই রাতে দাদা (আসগর) ফোন করে ওঁকে দিগবেড়িয়ার বাড়িতে ডেকে পাঠান। পরের দিন সকালে উনি (তাহের) সেখানে যান।
এর পর থেকেই ওঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। মোবাইলগুলোও বন্ধ হয়ে যায়।” রুবিনার দাবি, স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পরে তিনি আসগরের বাড়িতে বেশ কয়েক বার যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে বলা হয়, তাহের সেখানে যাননি। ২২ জুলাই বারাসত থানায় একটি নিখোঁজ-ডায়েরি করেন রুবিনা। সাহায্য চেয়ে নেতাদেরও দ্বারস্থ হন। তিনি বলেন, “দাদা মুখে উদ্বেগ দেখালেও সন্দেহ হয়েছিল। আমি পুলিশকে এক বার দাদার বাড়ি তল্লাশি করতে বলি। কিন্তু এক পুলিশ অফিসার আমাকে নানা কটু কথা বলে তাড়িয়ে দেন।” উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অসত্য। অপহরণের একটি মামলা দায়ের হয়েছিল।” আসগরের ঘরের সামনের একটি জায়গায় বালি জড়ো করে রাখা ছিল। শুক্রবার পচা গন্ধ পেয়ে আসগরের প্রতিবেশীরা দেখেন, ওই বালির স্তূপ থেকেই গন্ধটা আসছে। রুবিনার কথায়, “পুলিশ আমাকে বলে, ওখানে যেতে গাড়ির তেল পুড়বে। টাকা চাই। এ বাবদ তাঁরা আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা নেন।” যদিও পুলিশ সুপার এই অভিযোগ মানতে চাননি।
আসগরের বাড়িতে যায় পুলিশ। বালি খুঁড়তেই বিকৃত দেহটি বেরিয়ে পড়ে। উত্তেজিত হয়ে ওঠে জনতা। শুরু হয় পুলিশের উপরে আক্রমণ। বাড়িটিতে চড়াও হয়ে জিনিসপত্র তছনছ করে জনতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বারাসতের এসডিপিও তরুণ হালদার ঘটনাস্থলে আসেন। বেলা ১টা নাগাদ ম্যাজিস্ট্রেট অমিত বসু ঘটনাস্থলে এসে মৃতদেহটির সুরতহাল করেন। সেটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়। অমিতবাবু বলেন, “মনে হচ্ছে, গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়েছে।” মৃতদেহটি নিয়ে যাওয়ার পরেও এলাকার মানুষের ক্ষোভ কমেনি। বিকেল ৫টা নাগাদ স্থানীয়দের একাংশ আসগরের এক সঙ্গীর তিনটি দোকানে চড়াও হন। তাঁদের অভিযোগ, বহু দিন ধরেই আসগরের বাড়িতে অপরিচিত বহিরাগতদের যাতায়াত ছিল। আসগরের মাদকের ব্যবসাও রয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.